হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, জ্যৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণ পক্ষের একাদশী তিথিকে অপরা একাদশী নামে পরিচিত। ২০২৫ সালে এই পবিত্র ব্রত ২৩ মে, শুক্রবার পালিত হবে। অপরা একাদশী ভগবান বিষ্ণুকে উৎসর্গীকৃত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্রত। এটি ভগবান বিষ্ণু ও মা লক্ষ্মীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভক্তি সহকারে পালন করা হয়। বিশ্বাস করা হয় যে, এই দিনে পালিত ব্রত, পূজা, দান ও উপায় জীবনে ধন, সমৃদ্ধি, সুখ-শান্তি ও মোক্ষের প্রাপ্তি ঘটায়।
শুক্রবারে এই দিনটির আগমন আরও শুভ বলে মনে করা হয় কারণ শুক্রবার মা লক্ষ্মীর পূজার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। যদি এই দিনে ভগবান বিষ্ণু ও মা লক্ষ্মীর আরাধনা বিধিপূর্ণভাবে করা হয়, তাহলে সকল মনোকামনা পূর্ণ হয় এবং ধন-ধান্যের কখনও অভাব থাকে না। আসুন জেনে নিই অপরা একাদশী ২০২৫-এর বিশেষ উপায়, দান ও পূজা বিধি সম্পর্কে, যার মাধ্যমে আপনি আপনার জীবনকে সমৃদ্ধি ও সুখে পূর্ণ করতে পারেন।
অপরা একাদশীর গুরুত্ব ও দিনচর্যা
অপরা একাদশী জ্যৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণ পক্ষের একাদশী তিথিতে আগমন করে। এই দিনে উপবাস করলে দেহ ও আত্মার উভয়েরই শুদ্ধি হয়। ভগবান বিষ্ণুর আরাধনার মাধ্যমে আশীর্বাদ লাভ হয় এবং জীবনে আসা সমস্যাগুলি দূর হয়। এই ব্রতের ফল লাভ করা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয় কারণ এটি বিশেষভাবে ধন, সমৃদ্ধি, মানসিক শান্তি ও মনোকামনা পূরণের জন্য বিখ্যাত।
অপরা একাদশী ২০২৫-এর দিন করা বিশেষ উপায়
- তুলসী গাছের পূজা ও প্রদীপ জ্বালানো: অপরা একাদশীর দিন সকাল ও সন্ধ্যায় তুলসী গাছের পূজা অবশ্যই করুন। তুলসীকে দেবী লক্ষ্মীর রূপ বলে মনে করা হয়। এই দিনে তুলসীতে প্রদীপ জ্বালানো ও আরতি করা অত্যন্ত শুভ ফলপ্রদ। এই শুভ কাজ ঘরে সুখ-শান্তি ও ধন-সম্পদ আনয়ন করে।
- কলার গাছের পূজা: কলার গাছ ভগবান বিষ্ণুর প্রিয় বলে মনে করা হয়। অপরা একাদশীর দিন কলার গাছের পূজা করলে বিষ্ণুজীর কৃপা বজায় থাকে এবং দাম্পত্য জীবনের বাধাগুলি দূর হয়। এই উপায় দাম্পত্য জীবনে সুখ ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধি করে।
- হলুদ বস্তুর দান: এই দিনে হলুদ রঙের বস্তুর দান করা অত্যন্ত ফলপ্রদ বলে মনে করা হয়। হলুদ রঙের সম্পর্ক ভগবান বিষ্ণুর সাথে যুক্ত, তাই হলুদ কাপড়, হলুদ ফল বা হলুদ ধান দান করুন। এর ফলে আপনার জীবনে ধন লাভ ও সমৃদ্ধি আসে।
- ঋতু ফলের দান: অপরা একাদশীর দিন ঋতু ফলের দানও শুভ হয়। তাজা ফল দরিদ্র ও প্রয়োজনীয় ব্যক্তিদের দান করুন। এই ধরণের দান আপনার আটকে থাকা কাজগুলি সম্পন্ন করতে সহায়ক হবে এবং জীবনে সুখ-শান্তি আনবে।
- তুলসীর মূলের উপায়: যদি আপনি আর্থিক সংকট বা অর্থের অভাবে ভোগেন, তাহলে এই দিনে সকালে তুলসীর পূজা করার পর তুলসীর শুষ্ক মূল একটি হলুদ কাপড়ে বেঁধে আপনার বাড়ির প্রধান দরজায় বেঁধে দিন। এই উপায় আপনাকে অর্থের সংকট থেকে দ্রুত মুক্তি দেবে এবং ঘরে ধন-সম্পদের বৃদ্ধি ঘটাবে।
- অপরা একাদশী ব্রত বিধি: অপরা একাদশীর ব্রত সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা ও নিয়মিতভাবে পালন করা হয়। এই দিনে সূর্যোদয়ের আগে উঠে পবিত্র স্নান করে পরিষ্কার বস্ত্র পরিধান করুন। ভগবান বিষ্ণুর পূজা করতে করতে তাঁকে তুলসীপাতা, ফল, প্রদীপ ও নৈবেদ্য অর্পণ করুন। সারাদিন একাদশী ব্রত পালন করুন যাতে ফলাহার অথবা নির্জল ব্রত করা শুভ বলে মনে করা হয়।
সন্ধ্যায় আবার ভগবান বিষ্ণুর আরতি করুন এবং তুলসী গাছে প্রদীপ জ্বালান। এই দিনে মা লক্ষ্মীর বিশেষ পূজাও করা হয়। ব্রতের সমাপ্তি পরের দিন প্রাতঃকালে একাদশী তিথি সমাপ্তির পর করুন।
অপরা একাদশীতে দানের লাভ
হিন্দু ধর্মশাস্ত্রে দানকে অত্যন্ত পুণ্যের কাজ বলে মনে করা হয়। অপরা একাদশীর দিন করা দান বিশেষভাবে ফলপ্রদ হয়। দরিদ্র, বিধবা, শিশু ও প্রয়োজনীয় ব্যক্তিদের দান করলে মনোকামনা পূর্ণ হয় এবং ভগবান বিষ্ণু ও মা লক্ষ্মীর কৃপা বজায় থাকে।
- আর্থিক সংকট থেকে মুক্তি
- ঘরে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধির আগমন
- পরিবারে দাম্পত্য সুখ বৃদ্ধি
- রোগ ও কষ্টের ধ্বংস
- জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন ও সমৃদ্ধি
অপরা একাদশীর আধ্যাত্মিক গুরুত্ব
অপরা একাদশী কেবলমাত্র একটি ব্রত নয়, বরং আত্মার শুদ্ধি ও আধ্যাত্মিক উন্নতির পথও। এই দিনে ভক্ত ভগবান বিষ্ণুর প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা ও ভক্তিকে আরও সুদৃঢ় করেন। বিষ্ণুজীর আরাধনার মাধ্যমে জীবনের সকল দুঃখ দূর হয় এবং আত্মাকে শান্তি মেলে। বলা হয় অপরা একাদশীর ব্রতের ফলে ভগবান বিষ্ণুর শত্রুরাও নিজেই ধ্বংস হয়ে যায়।
২৩ মে ২০২৫-এ আগমনকারী অপরা একাদশী এবার শুক্রবারের শুভ দিনে পড়ছে, যা এই ব্রতের গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তোলে। যদি আপনি আপনার জীবনে ধন, সমৃদ্ধি ও সুখ-শান্তি চান, তাহলে এই দিনে ব্রত, পূজা ও দান অবশ্যই করুন। তুলসী পূজা, কলার গাছের আরাধনা, হলুদ বস্তুর দান এবং তুলসীর মূলের মাধ্যমে করা উপায় আপনার সকল আর্থিক ও পারিবারিক সমস্যা দূর করবে।
এই পবিত্র দিনটি আপনার পরিবারের সাথে মিলে শ্রদ্ধা ও ভক্তি সহকারে পালন করুন এবং ভগবান বিষ্ণু ও মা লক্ষ্মীর কৃপা লাভ করে জীবনকে সুখে পূর্ণ করুন। অপরা একাদশীর ব্রত কেবলমাত্র আপনার জীবনকে ধন-ধান্যে পূর্ণ করে না, বরং আধ্যাত্মিক শান্তি ও আনন্দও প্রদান করে।