হোলি কেবল রঙ আর উল্লাসের উৎসব নয়, এর পিছনে লুকিয়ে থাকা বিশ্বাস ও ঐতিহ্য একে আরও বিশেষ করে তোলে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হোলিকা দাহনের ভিন্ন ভিন্ন ঐতিহ্য রয়েছে, কিন্তু মধ্যপ্রদেশের নিমাড় ও মালওয়া অঞ্চলে একটি অত্যন্ত অনন্য ঐতিহ্য পালিত হয়। এখানে একটি নির্দিষ্ট গাছের কাঠ দিয়েই হোলিকা দাহন করা হয়, যা কোনও শুভ কাজে ব্যবহার করা হয় না, এমনকি শ্মশানেও নয়।
আসলে সেই রহস্যময় গাছটি কী?
এই গাছটি হল সেঁমল (Bombax), যাকে ‘হোরির গাছ’ও বলা হয়। হোলির সময় এতে লাল ও মেরুন রঙের সুন্দর ফুল ফোটে, কিন্তু এর কাঠ এতটাই অশুভ মনে করা হয় যে, এটি ঘরে রাখাও নিষিদ্ধ। তবুও প্রতি বছর হোলিকা দাহনে এই কাঠই ব্যবহার করা হয়। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, সেঁমলের কাঠ নেতিবাচক শক্তি ও দুষ্টাত্মাগুলির প্রতীক। এটি পোড়ানোর ফলে পরিবেশ পরিষ্কার হয় এবং অশুভ শক্তি ধ্বংস হয়।
মাঘ পূর্ণিমায় হোলির ডণ্ডা গাড়ার ঐতিহ্য রয়েছে, যা ভক্ত প্রহ্লাদের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। ফাল্গুন পূর্ণিমার রাত্রে হোলিকা দাহনের আগে এটি তুলে পোড়ানো হয়।
কেন এই কাঠ শুভ কাজে নিষিদ্ধ?
• ঘরে নয়, আসবাবপত্রে নয়: এটি ঘরে রাখা অশুভ বলে মনে করা হয়।
• শ্মশানে পোড়ানো হয় না: বিশ্বাস করা হয় যে, মৃতের আত্মাকে শান্তি পাওয়া যাবে না।
• খুব ভিজে এবং কাঁটাযুক্ত: এটি পোড়ানো সহজ নয়, তাই অন্য কোনও কাজে ব্যবহার করা হয় না।
‘হোলি ঠান্ডা করা’র ঐতিহ্য
হোলিকা দাহনের পর এর অর্ধদগ্ধ কাঠ নদী বা বावड़ीতে ফেলে ঠান্ডা করা হয়। মহিলারা শীতলা সপ্তমী পর্যন্ত এই ছাইতে জল চড়িয়ে একে সম্পূর্ণরূপে শান্ত করেন।
যদি সেঁমলের কাঠ না পাওয়া যায় তাহলে কী করা হয়?
যদি সেঁমলের কাঠ পাওয়া না যায়, তাহলে অর্জুন গাছের কাঠ ব্যবহার করা হয়। এটিও কাঁটাযুক্ত এবং ভিজে। সেঁমলের কাঠ পোড়ানোর সময় অধিক ধোঁয়া উৎপন্ন হয়, যার ফলে পরিবেশে থাকা ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গ ও জীবাণু ধ্বংস হয়। এটি পরিবর্তিত আবহাওয়ায় স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।