প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে উড়িষ্যার পুরী নগরে এক অলৌকিক দৃশ্য দেখা যায়, যেখানে ভগবান জগন্নাথ নিজেই তাঁর ভক্তদের মাঝে আসেন। লক্ষ লক্ষ ভক্ত এই দৃশ্যের সাক্ষী হতে পুরীতে উপস্থিত হন। এটি হল জগন্নাথ রথযাত্রার মহোৎসব, যা কেবল ভারত নয়, বিশ্বের সকল ভক্তদের জন্যই একটি অসাধারণ আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা হয়ে উঠেছে।
কখন থেকে শুরু হবে জগন্নাথ রথযাত্রা ২০২৫?
পঞ্জিকা অনুসারে, আষাঢ় শুক্ল দ্বিতীয়া তিথি ২৬ জুন (আজ) দুপুর ১:২৪ টা থেকে শুরু হয়ে ২৭ জুন সকাল ১১:১৯ টা পর্যন্ত চলবে। এই তিথিতেই ভগবান জগন্নাথ, ভাই বলভদ্র এবং বোন সুভদ্রার সাথে রথে আরোহণ করে পুরীর মূল মন্দির থেকে গুণ্ডিচা মন্দির (মৌসীমাঠ) এর উদ্দেশ্যে রওনা হন।
রথযাত্রার পৌরাণিক গুরুত্ব: ভগবানের বিশ্রাম থেকে মৌসীমাঠ পর্যন্ত
রথযাত্রার পূর্বে ভগবান জগন্নাথকে স্নান পূর্ণিমা তিথিতে ১০৮ কলস জল দিয়ে স্নান করানো হয়। এরপর তাঁকে জ্বর হয় এবং তিনি ১৫ দিন 'অনাসর গৃহ'তে বিশ্রাম নেন। এই সময়কালে ভগবানের দর্শন হয় না। ভক্তরা এই সময়টিকে ভগবানের চিকিৎসা ও বিশ্রামের সময় বলে মনে করেন।
যখন ভগবান পুনরায় সুস্থ হয়ে বের হন, তখন এই উল্লাসে তাঁকে রথযাত্রার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। গুণ্ডিচা মন্দির, যাকে ভগবানের মৌসীমাঠ বলা হয়, সেখানে তিনি সাত দিন বিশ্রাম করেন। এরপর তিনি প্রত্যাবর্তন যাত্রা (বহুদা যাত্রা) এর মাধ্যমে শ্রীমন্দিরে ফিরে আসেন।
জগন্নাথ যাত্রার বৈশিষ্ট্য যা একে অনন্য করে তোলে
ভক্তদের দ্বারা টানা হয় রথ: রথযাত্রার সবচেয়ে আবেগঘন দৃশ্য হলো যখন লক্ষ লক্ষ ভক্ত ভগবানের বিশাল রথের দড়ি টানেন। বিশ্বাস করা হয় যে রথ টানা পুণ্যার্জনের কাজ, যা জন্মের পাপ ধুয়ে ফেলে।
সকল জাতি ও ধর্মের জন্য উন্মুক্ত দ্বার: সাধারণত জগন্নাথ মন্দিরে কেবলমাত্র হিন্দুই প্রবেশ করতে পারেন, কিন্তু রথযাত্রার সময় ভগবান নিজেই বাইরে আসেন এবং সকল জাতি, ধর্ম, বর্গের মানুষকে দর্শন দেন।
রথ নির্মাণের ঐশ্বর্য: ভগবান বলভদ্র, সুভদ্রা এবং জগন্নাথের রথ পবিত্র দারু নিম কাঠ দিয়ে তৈরি হয়। কোন রথেই লোহা, পেরেক বা কোন ধাতুর ব্যবহার হয় না। প্রতি বছর নতুন রথ তৈরি করা হয়।
তিনটি রথের নাম ও রূপ:
- বলরামজীর রথ: তলধ্বজ, লাল ও নীল রঙের
- সুভদ্রার রথ: পদ্মধ্বজ বা দর্পদলন, কালো ও লাল রঙের
- জগন্নাথজীর রথ: নন্দিঘোষ, লাল ও হলুদ রঙের
ধর্মীয় বার্তা এবং আধ্যাত্মিকতা
রথযাত্রা কেবলমাত্র একটি উৎসব নয়, বরং ভগবান এবং তাঁর ভক্তদের গভীর প্রেমের প্রতীক। এটি আমাদের শেখায় যে যখন আমাদের ভক্তি সত্যিকারের হয় এবং মন পরিষ্কার থাকে, তখন ভগবান নিজেই আমাদের কাছে আসেন। এই যাত্রায় ভগবান জগন্নাথ তাঁর রথে আরোহণ করে মানুষের মাঝে আসেন, যা আমাদের এই বার্তা দেয় যে ঈশ্বরকে পাওয়ার জন্য বড় যজ্ঞ বা পূজা করা প্রয়োজন নয়, বরং সত্যিকারের মন এবং ভক্তিই যথেষ্ট। এই যাত্রা আমাদের আধ্যাত্মিক শান্তি, নম্রতা এবং সেবা ভাবের গুরুত্বও বুঝিয়ে দেয়।
পুরীতে রথযাত্রার উল্লাস
পুরীতে রথযাত্রার উল্লাস একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা, যা শব্দে প্রকাশ করা কঠিন। এটি কেবলমাত্র একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং মানুষের আস্থা, উৎসাহ এবং ঐক্যের জীবন্ত চিত্র। যখনই রথযাত্রার শুরু হয়, তখন পুরো শহর একটি ভব্য উৎসবে পরিণত হয়। রাস্তাঘাট রঙিন সাজসজ্জা এবং ফুলে সজ্জিত হয়, প্রতিটি কোণ থেকে শঙ্খ, ঘণ্টা এবং ভজনের মধুর শব্দ বেজে ওঠে। হাজার হাজার মানুষ তাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে 'জয় জগন্নাথ' ধ্বনি দিয়ে যাত্রায় যোগদান করে। এই সময় পুরী একটি পবিত্র স্থানে পরিণত হয় যেখানে জাতি, ধর্ম, ভাষা এবং অঞ্চলের সীমানা মুছে যায় এবং প্রতিটি ভক্ত একই भावनाয় ভগবান জগন্নাথের চরণে সমর্পিত হন।
মৌসীমাঠের বিশেষ ভোগ
গুণ্ডিচা মন্দিরে যখন ভগবান জগন্নাথ তাঁর বোন সুভদ্রা এবং ভাই বলরামের সাথে পৌঁছান, তখন তাঁর মৌসী তাঁদের বিশেষ ভোগ পরিবেশন করেন, যাকে "পোড়া পিঠা" বলা হয়। এটি একটি ঐতিহ্যবাহী ওড়িয়া মিষ্টান্ন, যা চালের আটা, নারকেল এবং গুড় দিয়ে তৈরি হয়। এটি ধীরে ধীরে রান্না করা হয়, যার ফলে এর স্বাদ আরও বিশেষ হয়ে ওঠে। বলা হয় এই ভোগ ভগবান জগন্নাথকে অত্যন্ত প্রিয়, তাই প্রতি বছর রথযাত্রার সময় এই খাবার অবশ্যই তৈরি করা হয়। ভক্তরাও এই দিন পোড়া পিঠা তৈরি করে ভগবানকে অর্পণ করেন এবং নিজেরাও এর প্রসাদ গ্রহণ করে পুণ্য অর্জন করেন।
জগন্নাথ রথযাত্রার বিশ্বব্যাপী গুরুত্ব
জগন্নাথ রথযাত্রা এখন কেবলমাত্র ভারতে সীমাবদ্ধ নেই, বরং এটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। আজ লন্ডন, নিউইয়র্ক, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি অনেক দেশেও ভগবান জগন্নাথের রথযাত্রা বের করা হয়। इससे यह सिद्ध होता है कि भक्ति और भारतीय संस्कृति की शक्ति इतनी बड़ी है कि वह दुनिया की सीमाओं को पार कर चुकी है। इससे भारत की सांस्कृतिक पहचान को वैश्विक मंच पर मजबूती मिलती है और दुनिया को हमारी आध्यात्मिक विरासत से जुड़ने का मौका मिलता है।
জগন্নাথ রথযাত্রা কেবলমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং এটি প্রেম, ভক্তি এবং ঐক্যের প্রতীক। এই যাত্রা আমাদের আধ্যাত্মিক শিক্ষা দেয় এবং সকলের মনকে একত্রিত করে। এর বিশ্বব্যাপী প্রসার ভারতীয় সংস্কৃতির অসাধারণ ঐতিহ্যকে বিশ্বে স্বীকৃতি দেয়।