জ্যোতিষ ও ধর্মীয় আস্থায় মঙ্গলবারের দিন ভগবান হনুমানকে উৎসর্গ করা হয়। বিশেষ করে জ্যৈষ্ঠ মাসের মঙ্গলকে “বড় মঙ্গল” বা “বুড়ো মঙ্গল” বলা হয়, যাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এবার বছরের শেষ ও পঞ্চম বড় মঙ্গল ১০ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে পড়ছে। এই দিনটি ভক্তদের জন্য সৌভাগ্য নিয়ে আসে কারণ বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনের পূজার মাধ্যমে হনুমানজীর কৃপা অতি শীঘ্রই লাভ করা যায় এবং জীবনের সকল বাধা দূর হয়ে যায়।
বড় মঙ্গল: পৌরাণিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব
জ্যোতিষীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বড় মঙ্গলকে অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। পৌরাণিক কাহিনীতেও জ্যৈষ্ঠ মাসের মঙ্গলবারের নিজস্ব একটি গুরুত্ব রয়েছে। বলা হয় ত্রেতাযুগে এই মাসেই হনুমানজী প্রভু শ্রীরামের সাথে সাক্ষাত করেছিলেন, যা তাঁর ভক্তির প্রাথমিক পর্যায় বলে মনে করা হয়।
একটি প্রাচীন কথার মতে, যখন ভীম তার বল ও শক্তিতে অহঙ্কার করছিলেন, তখন হনুমানজী এক বৃদ্ধ বানরের রূপে তাঁর সামনে এসে ভীমের অহঙ্কার চূর্ণ করে দিয়েছিলেন। এই কারণেই জ্যৈষ্ঠ মাসের মঙ্গলবারকে বড় মঙ্গল বা বুড়ো মঙ্গল বলা হয়। এই দিনটি সেবা, সমর্পণ ও আস্থার প্রতীক। বলা হয় জ্যৈষ্ঠ মাসের বড় মঙ্গলের দিন হনুমানজী অমরত্বের বরदान পেয়েছিলেন, তাই এই দিনের পূজার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
১০ জুনের দিন করুন এই বিশেষ উপায়, পাবেন হনুমানজীর অনুগ্রহ
এই দিন হনুমান মন্দিরে ভক্তদের ভিড় জমে এবং বিশেষ পূজা-অর্চনা করা হয়। যদি আপনিও আপনার জীবনের দুঃখকষ্ট থেকে মুক্তি পেতে চান এবং হনুমানজীর কৃপা লাভ করতে চান, তাহলে এই বিশেষ উপায়গুলি অবশ্যই অবলম্বন করুন।
১. হনুমানজীকে কালাওয়া অর্পণ করুন এবং সিঁদুরের তিলক দিন
বড় মঙ্গলের দিন হনুমানজীর মন্দিরে গিয়ে কালাওয়া বা রক্ষা সূত্র নিয়ে তাঁর চরণে অর্পণ করুন। তারপর তাঁর চরণ থেকে সিঁদুর নিয়ে নিজের কপালে তিলক দিন। এছাড়াও, অর্পিত কালাওয়ার সুতা আপনার কব্জিতে বাঁধুন। এই উপায় আপনার কাজে আসা বাধাগুলি দূর করে এবং আপনার মনোকামনাগুলি পূর্ণ করে। মনে করা হয় এতে আপনার ভাগ্য শক্তিশালী হয় এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করা যায়।
২. চাঁপার ফুলের মালা বানিয়ে অর্পণ করুন
এই দিন হনুমানজীকে চাঁপার তাজা ফুলের মালা অর্পণ করুন। ফুলের মালা বানানোর সময় আপনার মনে শুধুমাত্র ইতিবাচক চিন্তা রাখুন এবং পূর্ণ শ্রদ্ধার সাথে এই পূজা করুন। সাথে সাথে মন্দিরে ধূপবাতি জ্বালান এবং হনুমানজীর ধ্যানে মগ্ন থাকুন। এতে আপনার মন শান্তি পায়, পাশাপাশি জীবনে সুখ-সমৃদ্ধি বজায় থাকে।
৩. পানের বীড়া এবং বেসন বা বুন্দির লাড্ডু অর্পণ করুন
হনুমানজীকে পূজার পর পানের বীড়া এবং বেসন বা বুন্দির লাড্ডু ভোগ দেওয়া অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। এগুলি তাঁর পছন্দের জিনিস এবং এগুলি অর্পণ করলে আপনার কর্মজীবনে আসা বাধাগুলি দূর হবে। ভোজনে আতিথেয়তা এবং প্রসাদ হিসাবে লাড্ডু দেওয়া ভগবানের প্রতি ভক্তির প্রতীক। এই উপায় আপনার চাকরি বা ব্যবসায় উন্নতির দ্বার উন্মোচন করতে পারে।
৪. হনুমান চালীসা এবং বজরঙ্গ বাণ পাঠ করুন
বড় মঙ্গলের দিন অন্তত সাতবার হনুমান চালীসা এবং বজরঙ্গ বাণ পাঠ করা অত্যন্ত শুভ হয়। হনুমান চালীসায় ভগবান হনুমানের শক্তিশালী এবং অলৌকিক গুণাবলীর বর্ণনা রয়েছে, অন্যদিকে বজরঙ্গ বাণে তাঁর বীরত্ব ও সংকট নিবারণের মহিমা গাওয়া হয়েছে। নিয়মিত পাঠ করলে আপনার জীবনে আসা সংকট ও দুঃখকষ্ট দূর হয়।
৫. নারকেল অর্পণ করুন এবং লাল পতাকা চড়ান
মন্দিরে গিয়ে হনুমানজীকে নারকেল অর্পণ করা এবং তাঁর মন্দিরে লাল রঙের পতাকা চড়ানো অত্যন্ত পুণ্যকর। লাল রঙ ভগবান হনুমানের প্রতিনিধিত্ব করে এবং এটি চড়ালে সকল মনোকামনা পূর্ণ হয়। এই উপায় বিশেষ করে তখন করা হয় যখন আপনি কোন বড় সমস্যার সমাধান চান বা আপনার জীবনে স্থায়িত্ব এবং সাফল্য আনতে চান।
বড় মঙ্গল ব্রত কেন গুরুত্বপূর্ণ?
বড় মঙ্গলের ব্রত ভগবান হনুমানের প্রতি ভক্তির সর্বোচ্চ রূপ। এই দিন করা ব্রত ও পূজার ফলে শুধুমাত্র সাংসারিক দুঃখকষ্ট দূর হয় না, আধ্যাত্মিক উন্নতিও হয়। হনুমানজী সংকটমোচন ও রোগ নিবারক বলে মনে করা হয়। তাঁর ভক্তরা বিশ্বাস করেন যে এই ব্রত রাখলে জীবনে নেতিবাচকতার অবসান হয় এবং ইতিবাচক শক্তির সংযোগ ঘটে।
সাবধানতা ও নিয়ম
- এই দিন ব্রতের সময় তামসিক খাবার থেকে বিরত থাকুন।
- ফলাহারী খাবার খান যার মধ্যে সাবুদানা, কুট্টুর আটা, দুধ, দই এবং সেন্ধা লবণ অন্তর্ভুক্ত।
- পূর্ণ শ্রদ্ধা ও নিষ্ঠার সাথে পূজা করুন।
- দিনভর শান্ত ও সংযত থাকুন।
১০ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে পড়বে এমন পঞ্চম ও শেষ বড় মঙ্গল হনুমান ভক্তদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিন করা উপায়গুলি জীবনে সুখ-শান্তি, সমৃদ্ধি ও সাফল্যের দ্বার উন্মোচন করে। যদি আপনিও হনুমানজীর কৃপা চান এবং জীবনের সকল বাধা দূর করতে চান, তাহলে এই উপায়গুলি অবলম্বন করুন এবং আপনার জীবনে সুখের অভিজ্ঞতা লাভ করুন। এই দিনের মহিমাকে বুঝুন এবং হনুমানজীর পূজাকে আপনার জীবনের অংশ করে নিন।