মোদী সরকার ৩.০-এর প্রথম বছর: গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও উন্নয়ন

🎧 Listen in Audio
0:00

মোদী সরকার ৩.০-এর প্রথম বছরে অপারেশন সিন্দুর, আয়কর ছাড়, এক দেশ-এক নির্বাচন ইত্যাদি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার ছিল জাতীয় নিরাপত্তা, মধ্যবিত্তের সুবিধা এবং দ্রুত উন্নয়ন।

PM মোদী: মোদী সরকারের তৃতীয় कार्यकालের প্রথম বছরটি ছিল निर्णায়ক এবং পরিবর্তন আনয়নকারী সিদ্ধান্তে পরিপূর্ণ। কর ছাড় থেকে শুরু করে অপারেশন সিন্দুর পর্যন্ত, সরকার কঠোর এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। 'এক দেশ, এক নির্বাচন' এবং 'ওয়াক্ফ সংশোধনী বিল' এর মতো সিদ্ধান্তগুলি রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে।

১. এক দেশ, এক নির্বাচন: নির্বাচনী ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন

মোদী সরকার তাদের প্রথম বছরেই 'এক দেশ, এক নির্বাচন' (One Nation, One Election) প্রস্তাবটি সংসদে উত্থাপন করে রাজনৈতিক বিতর্ককে নতুন দিক দিয়েছে। ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪ সালে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে সরকার এই প্রস্তাবটি তীব্র প্রতিবাদের মধ্যে লোকসভায় উপস্থাপন করে। এই বিলটি পরবর্তী বিবেচনার জন্য যুক্ত সংসদীয় কমিটি (JPC)-তে প্রেরণ করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হল বারবার নির্বাচনের ফলে সৃষ্ট ব্যয় এবং প্রশাসনিক চাপ কমানো।

২. কর ছাড়: মধ্যবিত্তকে ব্যাপক সুবিধা

২০২৫-২৬ সালের বাজেটে মোদী সরকার কর্মজীবী ও মধ্যবিত্তদের জন্য ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। অর্থমন্ত্রী निर्मला सीतारमण ঘোষণা করেছেন যে, এখন ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয়ের উপর কোন আয়কর দিতে হবে না। পাশাপাশি, বেতনভোগী শ্রেণী ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত কর সুবিধা পাবে। এই সিদ্ধান্তের ফলে এক কোটিরও বেশি করদাতা সুবিধা পেয়েছে।

৩. ওয়াক্ফ সংশোধনী বিল: ধর্মীয় সম্পত্তির নিয়ন্ত্রণের নতুন নিয়ম

সরকার ওয়াক্ফ আইনে ব্যাপক পরিবর্তন আনয়ন করে ওয়াক্ফ সংশোধনী বিল পাশ করেছে। এর অধীনে এখন যেকোনো সম্পত্তিকে ওয়াক্ফ ঘোষণা করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে কমপক্ষে পাঁচ বছর ধরে মুসলিম অনুশীলনকারী হতে হবে। পাশাপাশি, 'ওয়াক্ফ বাই ইউজার' বিধান বাতিল করা হয়েছে। এই পরিবর্তনের মাধ্যমে ধর্মীয় সম্পত্তির অবৈধ দখল এবং অপব্যবহার রোধ করার চেষ্টা করা হয়েছে।

৪. সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত: পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান

জম্মু ও কাশ্মীরের পাহলগামে ২৬ জন পর্যটকের প্রাণহানির পর ভারত সরকার সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত করার ঘোষণা দেয়। এই চুক্তি ১৯৬০ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। হামলার পর PM মোদীর অধীনে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। পাকিস্তানকে এই সিদ্ধান্তের আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করা হয়েছে। এই পদক্ষেপটিকে পাকিস্তানের প্রতি ভারতের অবস্থানে ব্যাপক পরিবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

৫. অপারেশন সিন্দুর: সন্ত্রাসবাদ এর প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা

পাহলগাম হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ভারত ৬ ও ৭ মে রাতে 'অপারেশন সিন্দুর' শুরু করে। ভারতীয় সেনা পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর (PoK) এবং পাঞ্জাব প্রদেশে সন্ত্রাসবাদীদের নয়টি ঘাঁটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ধ্বংস করে দেয়। এই অপারেশন ২২ মিনিট স্থায়ী হয় এবং এর পর পাকিস্তান ভারতের উপর প্রতিশোধমূলক হামলার চেষ্টা করে, যা ভারতীয় সেনা ব্যর্থ করে দেয়। চার দিন যুদ্ধের মত পরিস্থিতি বিরাজ করে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভারত পাকিস্তানের কাছে তার সামরিক ও কূটনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করে দেয়। ভারত সরকার এও স্পষ্ট করে দেয় যে, এখন থেকে যেকোন সন্ত্রাসবাদী হামলাকে "যুদ্ধের ঘোষণা" হিসাবে বিবেচনা করা হবে।

৬. জাতিগত জনগণনা: সামাজিক তথ্যের নতুন উদ্যোগ

মোদী সরকারের কেবিনেট কমিটি ২০২৭ সালে অনুষ্ঠেয় জনগণনার সাথে সাথে জাতিগত জনগণনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটিই প্রথমবার যখন কেন্দ্রীয় সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন জাতির বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করবে। এটি সামাজিক কল্যাণের পরিকল্পনা উন্নত করতে সাহায্য করবে। সরকার সামাজিক ন্যায় ও সমावेशী উন্নয়নের দিকে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

৭. চিনাব সেতুর উদ্বোধন: সংযোগে বিপ্লবী পদক্ষেপ

৬ জুন ২০২৫ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিশ্বের সর্বোচ্চ রেল সেতু 'চিনাব সেতু'র উদ্বোধন করেন। এই সেতু আইফেল টাওয়ারের চেয়েও উঁচু এবং এর ব্যয় ১৫০০ কোটি টাকা বলে জানানো হয়েছে। কাটরা থেকে শ্রীনগর পর্যন্ত বন্দে ভারত ট্রেন চালু হওয়ার সাথে সাথে এই সেতু কাশ্মীরে সারা বছর যোগাযোগ স্থাপন করেছে। ১৯৮৩ সাল থেকে বন্ধ থাকা এই প্রকল্প এখন সম্পন্ন হয়েছে এবং এটি মোদী সরকার ৩.০-এর একটি বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

Leave a comment