২০২৫ সালে আষাঢ় মাস: তিথি, উৎসব ও ধর্মীয় গুরুত্ব

🎧 Listen in Audio
0:00

হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, আষাঢ় মাসের বিশেষ ধর্মীয় গুরুত্ব রয়েছে। এটি বর্ষের চতুর্থ মাস এবং জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমার পরে শুরু হয়। এই মাসটি ভগবান বিষ্ণুর ভক্তি, সাধনা এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। আষাঢ় মাসের আরম্ভ থেকেই দেবশয়ন কালও শুরু হয়, যার ফলে বিবাহ এবং গৃহপ্রবেশের মতো মঙ্গলকাজ নিষিদ্ধ হয়ে যায়।

২০২৫ সালে আষাঢ় মাস কবে থেকে শুরু হবে?

হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, ২০২৫ সালে আষাঢ় মাসের শুরু হবে ২১ জুন ২০২৫, শনিবার এবং এর সমাপ্তি হবে ২১ জুলাই ২০২৫, সোমবার। এই মাসটি জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমার পরের দিন থেকে শুরু হয়ে শ্রাবণ মাসের অমাবস্যা পর্যন্ত চলে।

আষাঢ় মাসের ধর্মীয় গুরুত্ব

আষাঢ় মাসের ধর্মীয় গুরুত্ব এত বেশি কারণ এই সময় থেকেই দেবশয়ন কাল শুরু হয়। বিশ্বাস করা হয় যে এই মাসে ভগবান বিষ্ণু ক্ষীরসাগরে যোগনিদ্রায় চলে যান। এ কারণেই এই মাসের পর থেকে চার মাস ধরে বিবাহ, গৃহপ্রবেশ, মুণ্ডন প্রভৃতি মঙ্গলকাজ করা হয় না। এই সময়টিকে চাতুর্মাস বলা হয়।

এই মাসের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ও পরব:

  • দেবশয়নী একাদশী – ভগবান বিষ্ণুর যোগনিদ্রায় যাওয়ার দিন
  • জগন্নাথ রথযাত্রা – পুরীতে জগন্নাথ ভগবানের ভব্য যাত্রা
  • গুরু পূর্ণিমা – গুরুজনদের পূজা ও সম্মানের পরব

আষাঢ় মাসের প্রধান তিথি ও ব্রত

এই মাসে অনেক ধর্মীয় উৎসব এবং ব্রত আসে, যা হিন্দু ধর্মে অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করা হয়:

  • দেবশয়নী একাদশী (২১ জুন ২০২৫): এই দিন থেকে ভগবান বিষ্ণু যোগনিদ্রায় চলে যান এবং চাতুর্মাসের সূচনা হয়।
  • জগন্নাথ রথযাত্রা (২৯ জুন ২০২৫): পুরী (ওড়িশা)তে ভগবান জগন্নাথ, বলভদ্র এবং সুভদ্রার ভব্য যাত্রা বের করা হয়।
  • গুরু পূর্ণিমা (১০ জুলাই ২০২৫): গুরুর জ্ঞান ও मार्गदर्शनের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দিন। এই দিনে আধ্যাত্মিক গুরু এবং শিক্ষকের পূজন করা হয়।

আষাঢ় মাসে কী করবেন?

এই মাসটি সাধনা, তপস্যা এবং ধর্মের জন্য অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। কিছু প্রধান কাজ যা এই মাসে করা উচিত:

১. ভগবান বিষ্ণুর আরাধনা করুন

এই মাসে ভগবান বিষ্ণুর বিশেষ পূজা করার বিধান রয়েছে। প্রতিদিন “ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়” মন্ত্রের জপ করুন।

২. গুরুর সেবা এবং সম্মান করুন

গুরু পূর্ণিমা এই মাসের সবচেয়ে প্রধান উৎসব। এই দিনে আপনার আধ্যাত্মিক বা শিক্ষাগত গুরুর আশীর্বাদ নিন এবং তাকে যথাসাধ্য দান-দক্ষিণা দিন।

৩. ব্রত এবং উপবাস পালন করুন

বিশেষ করে একাদশী ব্রত অবশ্যই পালন করুন। এই ব্রত শরীর ও মনের শুদ্ধি করে এবং পুণ্য ফল প্রদান করে।

৪. দান-পুণ্য করুন

এই মাসে অন্ন, বস্ত্র, জলপাত্র, ছাতা, জুতা, পাখা ইত্যাদির দান করা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়।

৫. সাৎপুষ্টিক আহার এবং যোগ গ্রহণ করুন

আষাঢ় মাসে মানসিক এবং আধ্যাত্মিক শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য সাৎপুষ্টিক জীবনযাপন গ্রহণ করুন। প্রতিদিন ধ্যান, যোগ এবং মন্ত্রজপের অনুশীলন করুন।

আষাঢ় মাসে কী করবেন না?

এই পবিত্র মাসে কিছু কাজ করার নিষেধ রয়েছে, কারণ এটি সাধনা এবং সংযমের সময় বলে মনে করা হয়। কিছু কাজ যা এই মাসে করা উচিত নয়:

১. বিবাহ এবং গৃহপ্রবেশের মতো মঙ্গলকাজ করবেন না

দেবশয়নের কারণে চার মাস ধরে কোনও শুভ কাজ যেমন বিবাহ, বাগদান, গৃহপ্রবেশ ইত্যাদি করা নিষিদ্ধ। একে চাতুর্মাস কাল বলা হয়।

২. অশুচি আহার এবং তামসিক খাবার থেকে বিরত থাকুন

মাংসাহার, মদ্যপান এবং অতিরিক্ত ভাজা-ভুনা খাবার থেকে বিরত থাকুন। সাৎপুষ্টিক এবং হালকা খাবার খান।

৩. গুরুর অবমাননা করবেন না

গুরু পূর্ণিমার দিন বিশেষভাবে খেয়াল রাখুন যাতে গুরুর অপমান বা অবাধ্যতা না হয়, কারণ এই মাসে গুরুর স্থান অত্যন্ত পূজনীয়।

৪. খারাপ চিন্তা এবং নেতিবাচকতা থেকে দূরে থাকুন

এই মাসে বিশেষ করে মন, বাক্য এবং কর্মকে শুদ্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। ক্রোধ, ঈর্ষা, দ্বেষ এবং মিথ্যা কথা বলা থেকে বিরত থাকুন।

৫. অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ করবেন না

যতদূর সম্ভব, এই মাসে দীর্ঘ বা অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ থেকে বিরত থাকা উচিত এবং আধ্যাত্মিক উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।

চাতুর্মাস কী?

আষাঢ় শুক্ল একাদশী থেকে শুরু করে কার্তিক শুক্ল একাদশী পর্যন্ত চার মাসের সময়কালকে চাতুর্মাস বলা হয়। এই সময় ভগবান বিষ্ণু যোগনিদ্রায় থাকেন এবং ধর্ম-সংস্কৃতি সম্পর্কিত সকল কাজ স্থগিত করা হয়। এ কারণেই এই কালে বিবাহ প্রভৃতি কাজ শুভ বলে মনে করা হয় না। এটি সাধু-সন্তদের জন্যও এক জায়গায় থেকে তপস্যা, ধ্যান এবং প্রবচন করার সময়।

আষাঢ় মাস আধ্যাত্মিক সাধনা, ভক্তি এবং সংযমের মাস। এই মাসে ভগবান বিষ্ণুর উপাসনা করলে বিশেষ পুণ্য লাভ হয়। এটি বহিঃপ্রকাশের পরিবর্তে অন্তর্নিহিত উন্নতি এবং আধ্যাত্মিক উন্নয়নের জন্য উপযুক্ত বলে মনে করা হয়। অতএব, এই পবিত্র মাসে নিয়ম-সংযমের সাথে জীবনযাপন করে ভগবানের কৃপা লাভ করুন এবং আগামী দিনগুলিকে শুভ ও মঙ্গলময় করে তুলুন।

Leave a comment