ব্রাহ্মণ সমাজের ইতিহাস এবং উৎপত্তি জানুন
প্রাচীন বেদ অনুসারে, সমাজকে চারটি বর্ণে বিভক্ত করা হয়েছিল: ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র। তিনটি বেদ (ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ) এই বর্ণগুলির কর্তব্য নির্ধারণ করে। ব্রাহ্মণের কর্তব্য ছিল অধ্যয়ন, অধ্যাপনা, যজ্ঞ করা এবং করানো, দান করা এবং নেওয়া। শীর্ষে থাকার কারণে, ব্রাহ্মণদের জাতিগত বৈষম্যের সম্মুখীন হতে হয়নি, তবে তারা অন্যান্য বর্ণের ঈর্ষা ও বিদ্বেষের শিকার হয়েছিল।
কিছু লোক ব্রাহ্মণদের তাদের পশ্চাৎপদতার জন্য দায়ী করে। ভারতে কিছু নিম্নশ্রেণির মানুষ হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে অন্য ধর্ম গ্রহণ করেছে, এর কারণ হিসেবে ব্রাহ্মণদের অত্যাচারকে দায়ী করা হয়েছে। ব্রাহ্মণদের বিরুদ্ধে অনেক বই ও প্রবন্ধ লেখা হয়েছে। যদিও, সমস্ত ব্রাহ্মণ ভালো সামাজিক অবস্থানে নেই, তবে জাতিগত ভিত্তিতে তাদের সংরক্ষণ (reservation) -এর মতো সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। ব্রাহ্মণরা কর্মঠ, বুদ্ধিমান, ধার্মিক, বাস্তববাদী, সামাজিক, সংগ্রামী এবং শিক্ষার গুরুত্ব বোঝে। যদি আমরা তাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম এবং অভ্যাস গ্রহণ করি তবে আমরাও একটি ভাল সামাজিক অবস্থানে পৌঁছাতে পারি।
ব্রাহ্মণ কোন শ্রেণীতে আসে?
ব্রাহ্মণরা সাধারণত সাধারণ শ্রেণীতে (General Category) আসে, তবে এটি রাজ্যের উপর নির্ভর করে। হরিয়ানা এবং পাঞ্জাবে জাটরা সাধারণ, তবে অন্যান্য রাজ্যে তারা ওবিসি।
ব্রাহ্মণদের প্রকার
স্মৃতি-পুরাণে ব্রাহ্মণের ৮টি ভেদের বর্ণনা আছে: মাত্র, ব্রাহ্মণ, শ্রোত্রিয়, অনুচান, ভ্রুণ, ঋষিকল্প, ঋষি এবং মুনি। ব্রাহ্মণদের পদবি এবং আচার-অনুষ্ঠানে পার্থক্য রয়েছে। ব্রাহ্মণদের পদবি তাদের উপনামের উপর ভিত্তি করে।
ব্রাহ্মণদের উৎপত্তি
ঈশ্বর সৃষ্টি রক্ষার জন্য তাঁর মুখ, বাহু, ঊরু (জাং) এবং চরণ থেকে যথাক্রমে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্রকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের কর্তব্য নির্ধারণ করেছেন। ব্রাহ্মণদের জন্য পড়া, পড়ানো, যজ্ঞ করা, যজ্ঞ করানো, দান করা এবং দান নেওয়া নির্ধারিত ছিল। ব্রাহ্মণরা ব্রহ্মার মুখ থেকে উৎপন্ন হয়েছেন, তাই তারা শ্রেষ্ঠ।
ব্রাহ্মণদের বংশাবলী
ভবিষ্য পুরাণ অনুসারে, মহর্ষি কশ্যপের পুত্র কণ্বের স্ত্রী আর্যাবর্ত্তী নামে এক দেবকন্যা ছিলেন। ব্রহ্মার আদেশে তাঁরা দুজনে সরস্বতী নদীর তীরে তপস্যা করেন। বরদানের প্রভাবে কণ্বের দশ পুত্র হয়: উপাধ্যায়, দীক্ষিত, পাঠক, শুক্লা, মিশ্র, অগ্নিহোত্রী, দুবে, তিওয়ারি, পান্ডে, চতুর্বেদী।
ব্রাহ্মণদের গোত্র
এঁদের গোত্রগুলি হল: কশ্যপ, ভরদ্বাজ, বিশ্বামিত্র, গৌতম, জমদগ্নি, বশিষ্ঠ, বৎস, গৌতম, পরশুরাম, গর্গ, অত্রি, ভৃগদাত্র, অঙ্গিরা, শৃঙ্গী, কাত্যায়ন, যাজ্ঞবল্ক্য।
ব্রাহ্মণদের আজকের অবস্থা
ব্রাহ্মণ সমাজ শিক্ষক, পণ্ডিত, ডাক্তার, যোদ্ধা, লেখক, কবি, রাজনীতিবিদ হিসেবে কৃতিত্বের সঙ্গে কাজ করেছেন। আধুনিক ব্রাহ্মণ পিতামাতারা তাদের সন্তানদের কম্পিউটার প্রোগ্রামার এবং ইঞ্জিনিয়ার বানাতে চান। ব্রাহ্মণ সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অবদান জানতে ব্রাহ্মণ বিখ্যাত তালিকা দেখা যেতে পারে।
ব্রাহ্মণের বিদেশী হওয়ার ডিএনএ প্রমাণ
হরিয়ানার রাখিগড়িতে পাওয়া ২৫০০ বছর পুরনো কঙ্কালের ডিএনএ-তে R1a1 জিনের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি, যাকে আর্য জিন বলা হয়। এটি প্রমাণ করে যে ভারতের ব্রাহ্মণ সম্প্রদায় বিদেশী নয়। আর্য আক্রমণ তত্ত্ব ইংরেজদের "ভাগ করো এবং শাসন করো" নীতির একটি অংশ ছিল।
সরযূপারীন ব্রাহ্মণদের ইতিহাস
সরযূপারীন ব্রাহ্মণ সরযু নদীর পূর্ব দিকে বসবাসকারী ব্রাহ্মণদের বলা হয়। এই ব্রাহ্মণরা কান্যকুব্জ ব্রাহ্মণদের শাখা। ভগবান শ্রীরাম লঙ্কা বিজয়ের পর যজ্ঞ করিয়ে এদের সরযুর পারে বসতি স্থাপন করিয়েছিলেন।
ব্রাহ্মণদের কেন পূজনীয় মনে করা হয়?
শাস্ত্র অনুসারে, ব্রাহ্মণদের স্থান সবার প্রথমে। ব্রাহ্মণদের দ্বারা বলা বিধিগুলির মাধ্যমেই ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ লাভ করা যায় বলে মনে করা হয়। ব্রাহ্মণদের উৎপত্তি ভগবানের মুখ থেকে, তাই তারা পূজনীয়।
উপসংহার
ব্রাহ্মণ সমাজের ইতিহাস প্রাচীন বেদ ও পুরাণে বিস্তারিতভাবে পাওয়া যায়। সমাজে তাদের উচ্চ অবস্থান এবং তাদের কর্তব্যগুলির উল্লেখ তাদের গুরুত্ব নির্দেশ করে। যদিও, সময়ের সাথে সাথে তাদের অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু তাদের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় তাৎপর্য আজও অক্ষুণ্ণ আছে।
```