কাঁচি ধামের ৬১তম প্রতিষ্ঠা উৎসব: নীম করোলি বাবার আশীর্বাদে এক আধ্যাত্মিক উৎসব

🎧 Listen in Audio
0:00

প্রতি বছর ১৫ই জুন একটি বিশেষ আধ্যাত্মিক শক্তি নিয়ে আসে, যখন উত্তরাখণ্ডের নৈনিতাল জেলার কাঁচি ধামে হাজার হাজার ভক্ত সমবেত হন। এই দিনটি সেই পবিত্র স্থানের প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবে পালিত হয়, যা নিজেই নীম করোলি বাবা তাঁর তপস্যা, ত্যাগ ও করুণা দিয়ে সিদ্ধ করেছিলেন। ২০২৫ সালে এই প্রতিষ্ঠা দিবস আরও বিশেষ, কারণ এটি কাঁচি ধামের ৬১তম প্রতিষ্ঠা উৎসব। এই উপলক্ষে বাবার ভক্তরা শুধুমাত্র ভব্য দর্শনের সৌভাগ্যই পান না, বরং তাঁদের জীবনের দুঃখকষ্ট থেকে মুক্তির জন্য বাবার চরণে আবেদন করার সুযোগও পান।

নীম করোলি বাবা: প্রেম, বিশ্বাস ও করুণার প্রতীক

নীম করোলি বাবা, যাঁকে মানুষ স্নেহে বাবা নীব করৌরিও বলে, একজন এমন সাধু ছিলেন যিনি কোনো প্রচার ছাড়াই, সত্য ভক্তিমার্গ অনুসরণ করে হাজার হাজার মানুষের জীবনে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। তাঁর জীবন ছিল সেবা, ধ্যান ও মৌন সাধনায় পরিপূর্ণ। বাবা শিখিয়েছিলেন যে সত্য ভক্তি কোনো দেখানোতে নয়, বরং সরলতা, সত্যতা ও শ্রদ্ধায় থাকে।

বাবার ভক্তদের মধ্যে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিদেশী ব্যক্তিত্বও ছিলেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন বিখ্যাত অ্যাপল কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস, ফেসবুকের মার্ক জুকারবার্গ এবং হলিউড সেলিব্রিটিরা। এরা সকলেই বাবার আধ্যাত্মিক শক্তিতে এতটাই প্রভাবিত হয়েছিলেন যে তারা তাদের জীবনকে নতুন করে দেখে এবং বুঝেছিলেন।

কাঁচি ধামের প্রতিষ্ঠা: একটি দিব্য সংযোগ

কাঁচি ধামের প্রতিষ্ঠা ১৯৬৪ সালে বাবা নীম করোলি কর্তৃক করা হয়েছিল। এই আশ্রম নৈনিতাল জেলায় বিনসর ও অলমোড়ার মাঝখানে, পাহাড়ের কোলে অত্যন্ত সুন্দর এক স্থানে অবস্থিত। "কাঁচি" শব্দের অর্থ হল—দুটি পাহাড়ের মাঝখানের উপত্যকা, যা কাঁচির আকারের মতো দেখায়।

বাবা এখানে হনুমানজির মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, কারণ তিনি নিজেই হনুমানজির পরম ভক্ত ছিলেন। মনে করা হয় বাবা এই স্থানকে সিদ্ধ করে আধ্যাত্মিক জাগ্রতের কেন্দ্র করে তুলেছিলেন, আর তখন থেকেই এই স্থান লক্ষ লক্ষ মানুষের শ্রদ্ধা ও আস্থার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

কাঁচি ধাম প্রতিষ্ঠা দিবস ২০২৫: কখন ও কিভাবে পালিত হবে?

২০২৫ সালে কাঁচি ধামের প্রতিষ্ঠা দিবস ১৫ই জুন, রবিবার পালিত হবে। এই দিনে বাবার ভক্তরা দূর-দূরান্ত থেকে আশ্রমে জড়ো হন। আশ্রমকে রঙিন ফুল, দীপ ও পতাকা দিয়ে সজ্জিত করা হয়। বিশেষ পূজা, ভান্ডার ও হনুমান চালিসার পাঠ হয়।

শ্রদ্ধাভাজনরা সম্পূর্ণ শ্রদ্ধার সাথে বাবাকে ধন্যবাদ জানান এবং তাঁদের জীবনের ইচ্ছা পূরণের জন্য বাবার চরণে আবেদন করেন। এই দিনটি শুধুমাত্র উৎসব নয়, বরং এক আধ্যাত্মিক জাগ্রতের অভিজ্ঞতাও দেয়।

নীম করোলি বাবার কাছে কিভাবে আবেদন করবেন?

বাবার ভক্তরা বিশ্বাস করেন যে যদি সত্য মনে বাবার চরণে প্রার্থনা করা হয় তাহলে বাবা অবশ্যই শুনেন। আবেদন করার কোনো বিশেষ কर्मकांड নেই, বরং ভক্তি ও সত্যিকারের অনুভূতিই প্রয়োজন। আপনি নিম্নলিখিত উপায়গুলি করতে পারেন:

  1. সকালে স্নান করে পরিষ্কার পোশাক পরুন।
  2. বাবার ছবির সামনে দীপ জ্বালিয়ে ফুল অর্পণ করুন।
  3. 'ॐ শ্রী নীম করোলি বাবায় নমঃ' মন্ত্রটি ১০৮ বার জপ করুন।
  4. মনে মনে আপনার প্রার্থনাকে বাবার চরণে অর্পণ করুন। বলবেন না, অন্তর থেকে বলুন।
  5. বাবার কাছে জীবনের দুঃখকষ্ট থেকে মুক্তি ও मार्गदर्शनের প্রার্থনা করুন।

কাঁচি ধাম ভ্রমণের গুরুত্ব

বলা হয় বাবার কাঁচি ধামে একবার আসলে জীবনে একটা ইতিবাচক পরিবর্তন অবশ্যই আসে। এখানকার বাতাস, পরিবেশ ও বাবার শক্তি মানুষকে নতুন আশা, দিকনির্দেশনা ও আত্মবিশ্বাস প্রদান করে।

এখানে আসা শ্রদ্ধাভাজনরা শুধুমাত্র দর্শনের জন্য নয়, বরং আধ্যাত্মিক শক্তি গ্রহণের জন্য আসেন। বিশেষ করে প্রতিষ্ঠা দিবসে এমন মনে হয় যেন সম্পূর্ণ ধাম একটি দিব্য আলোক দ্বারা আলোকিত হয়ে উঠেছে।

কাঁচি ধাম প্রতিষ্ঠা দিবস শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং একটি আধ্যাত্মিক উৎসব—যেখানে ভক্ত ও ভগবানের সম্পর্ক আরও গভীর হয়। নীম করোলি বাবার চরণে যারা শ্রদ্ধার সাথে আবেদন করে, তাদের আহ্বান অবান্তর থাকে না।

Leave a comment