ভারতকে মন্দিরের দেশ বলা হয়, এবং উত্তর ভারতের পাশাপাশি দক্ষিণ ভারতেও অনেক भव्य ও সুন্দর মন্দির রয়েছে। এই চমৎকার মন্দিরগুলি দেখলে আপনি নিশ্চিতভাবে বিস্মিত হবেন। দক্ষিণ ভারতের মন্দিরগুলি কেবল ভারতেই নয়, বিশ্বজুড়েও বিখ্যাত। এই মন্দির এবং তাদের চমৎকার স্থাপত্য ভারতকে একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যপূর্ণ দেশ হিসেবে পরিচিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তামিলনাড়ু থেকে শুরু করে অন্ধ্রপ্রদেশ এবং ওড়িশা পর্যন্ত, দক্ষিণ ভারতে প্রাচীন এবং চমৎকার মন্দিরগুলির একটি সমাহার রয়েছে, যা ধর্মীয় সংযোগের পাশাপাশি সমৃদ্ধির প্রতীক। তামিলনাড়ুতে সবচেয়ে বেশি মন্দির রয়েছে। আসুন এই নিবন্ধে দক্ষিণ ভারতের ১০টি প্রধান বিখ্যাত মন্দির সম্পর্কে জেনে নিই।
তিরুপতি বালাজি মন্দির
অন্ধ্রপ্রদেশের চিত্তুর জেলায় অবস্থিত এই মন্দিরটি কেবল দক্ষিণ ভারতেই নয়, সমগ্র ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত তীর্থস্থানগুলির মধ্যে একটি। তিরুপতি পাহাড়ের সপ্তম চূড়ায় অবস্থিত স্বামী ভেঙ্কটেশ্বর মন্দির, শ্রী স্বামী পুষ্করিণীর দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত। ভেঙ্কট পাহাড়ের স্বামী হওয়ার কারণে তাঁকে ভেঙ্কটেশ্বর বলা হয়। মন্দিরের গর্ভগৃহে ভগবান ভেঙ্কটেশ্বরের মূর্তি স্থাপিত আছে। মন্দির চত্বরে অনেক সুন্দরভাবে তৈরি করা প্রবেশদ্বার, মণ্ডপম এবং ছোট মন্দির রয়েছে, যা নিজের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ।
প্রধান আকর্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে পডি কাভালি মহাদ্বার, সম্পঙ্গ প্রদক্ষিণম, কৃষ্ণ দেবরায় মণ্ডপম, রঙ্গ মণ্ডপম, ধ্বজস্তম্ভ মণ্ডপম, নদিমি পডি কাভিলি, বিমান প্রদক্ষিণম, তিরুমালা রায় মণ্ডপম এবং আয়না মহল। তিরুপতির ভক্তিপূর্ণ পরিবেশ মনকে শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসে ভরিয়ে তোলে। প্রাচীন সাহিত্যিক উৎস অনুসারে, কলিযুগে ভগবান ভেঙ্কটেশ্বরের আশীর্বাদ পাওয়ার পরেই মুক্তি সম্ভব। এই কারণে প্রতিদিন পঞ্চাশ হাজারের বেশি ভক্ত এই মন্দিরে দর্শনের জন্য আসেন। তিরুপতি বালাজি মন্দিরের ইতিহাস ৯ম শতাব্দী থেকে শুরু হয়, যখন কাঞ্চিপুরমের শাসক বংশ পল্লবরা এই স্থানে তাদের আধিপত্য স্থাপন করেছিল। এই মন্দির ভারতের সবচেয়ে ধনী মন্দিরগুলির মধ্যে শীর্ষে আসে।
নামদ্রোলিং মঠ, বাইলাকুপ্পে, কর্ণাটক
নামদ্রোলিং ঙিংমা মঠ কর্ণাটকের বাইলাকুপ্পেতে অবস্থিত, যা মহীশূর জেলার পশ্চিমে। এখানে অবস্থিত প্রার্থনা হলটি খুব সুন্দর, যেখানে দুটি সোনার বিশাল মূর্তি রয়েছে। এটি তিব্বতি বৌদ্ধধর্মের ঙিংমা বংশের বৃহত্তম শিক্ষা কেন্দ্র। মঠে পাঁচ হাজারের বেশি ভিক্ষু ও নানদের একটি সম্প্রদায় রয়েছে। এখানে য়েসে ভোডসাল শেরব রালদ্রী লিং নামক একটি জুনিয়র হাই স্কুল, একটি ধর্মীয় কলেজ এবং একটি হাসপাতালও রয়েছে।
শ্রী রঙ্গনাথ স্বামী মন্দির
ভগবান রঙ্গনাথকে উৎসর্গীকৃত এই মন্দিরটি দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত মন্দিরগুলির মধ্যে একটি, যেখানে ভগবান বিষ্ণু শায়িত অবস্থায় বিরাজমান। এই মন্দিরটি তামিলনাড়ুর তিরুচিরাপল্লী শহরের শ্রীরাঙ্গম দ্বীপে অবস্থিত। ১৫৬ একর জমির উপর বিস্তৃত এই মন্দির চত্বর বিশ্বের বৃহত্তম কার্যকরী হিন্দু মন্দির। কাবেরী নদীর তীরে অবস্থিত এই মন্দিরটিকে ভূ-লোকের বৈকুণ্ঠও বলা হয় এবং এটি ভগবান বিষ্ণুকে উৎসর্গীকৃত ১০৮টি দিব্য দেশমের মধ্যে একটি। মন্দিরের বিমানমের উপরের অংশটি সোনা দিয়ে মোড়া, যেখানে আপনি শান্তির এক আলাদা অনুভূতি পাবেন।
মীনাক্ষী মন্দির
মা পার্বতীকে উৎসর্গীকৃত এই মন্দিরটি মীনাক্ষী রূপে পরিচিত, এবং তাঁর সঙ্গে তাঁর স্বামী ভগবান শিব সুন্দরেশ্বর রূপে বিরাজমান। তামিলনাড়ুর মাদুরাই শহরে অবস্থিত এই মন্দিরটি প্রাচীন ভারতের সবচেয়ে জমকালো এবং গুরুত্বপূর্ণ মন্দিরগুলির মধ্যে একটি। মন্দিরের প্রধান গর্ভগৃহটি ৩,৫০০ বছরের বেশি পুরনো বলে মনে করা হয়। হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, ভগবান শিব সুন্দরেশ্বর রূপে তাঁর অনুচরদের সাথে পাণ্ড্য রাজা মলয়ধ্বজের কন্যা রাজকুমারী মীনাক্ষীকে বিবাহ করেছিলেন। এই মন্দিরটি তার স্থাপত্য ও শিল্পের কারণে সাতটি আশ্চর্যের মধ্যে স্থান পেয়েছে।
তেলেঙ্গানার জ্ঞান সরস্বতী মন্দির
তেলেঙ্গানার নির্মল জেলার বাসর গ্রামে অবস্থিত জ্ঞান সরস্বতী মন্দির একটি বিখ্যাত তীর্থস্থান। সাদা পাথর দিয়ে নির্মিত এই মন্দিরে মা সরস্বতীর ৪ ফুট উঁচু একটি বিশাল মূর্তি স্থাপিত আছে। মূর্তিটি পদ্মাসন মুদ্রায় রয়েছে এবং এখানে লক্ষ্মী দেবীরও মূর্তি রয়েছে। মন্দিরের একটি স্তম্ভ থেকে সঙ্গীতের সাতটি সুর শোনা যায়। প্রাচীন কাহিনী অনুসারে, মা সরস্বতীর মন্দিরের থেকে কিছুটা দূরে দত্ত মন্দির রয়েছে, যেখান থেকে গোদাবরী নদী পর্যন্ত একটি সুড়ঙ্গ ছিল, যা এখন বন্ধ।
হাম্পি, কর্ণাটক
তুঙ্গভদ্রা নদীর তীরে অবস্থিত হাম্পি শহরটি প্রাচীন বিজয়নগর সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল। হাম্পিকে তুঙ্গভদ্রা নদীর পুরনো নাম পম্পা নামেও জানা যায়। এই শহরটি ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়েছে, কারণ এখানে বিজয়নগর শাসনকালের অনেক মন্দির ও প্রাসাদ বিদ্যমান। হাম্পিতে হোয়সালা স্থাপত্যকলার চমৎকার নিদর্শন দেখা যায়। এখানে ভগবান শিবের বিরূপাক্ষ মন্দির এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থান রয়েছে, যা ইতিহাসের গল্প বলে।