জাপান এশিয়া মহাদেশের পূর্বে অবস্থিত একটি দেশ, যা চারটি বড় এবং অসংখ্য ছোট দ্বীপের সমষ্টি নিয়ে গঠিত। এই দ্বীপগুলো উত্তর-পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে, এশিয়ার পূর্ব উপকূলের দিকে অবস্থিত। এটি পশ্চিমে জাপান সাগর (Sea of Japan/East Sea), উত্তরে ওখোটস্ক সাগর (Sea of Okhotsk), এবং পূর্বে চীন সাগর (East China Sea) ও তাইওয়ান পর্যন্ত বিস্তৃত। এর নিকটতম প্রতিবেশী দেশগুলো হলো চীন, কোরিয়া (উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া) এবং রাশিয়া।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পারমাণবিক বোমা হামলার পরেও জাপান যেভাবে উন্নতি করে নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে, তা বিশ্বজুড়ে একটি উদাহরণ। সূর্যোদয়ের দেশ নামে পরিচিত জাপান বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে পরিচিত। পূর্ব এশিয়ায় অবস্থিত এই দেশটি তার বিশেষ সংস্কৃতির জন্যও বিখ্যাত। জাপানিদের কর্মসংস্কৃতির ফলস্বরূপ, অর্থনীতিতে সমস্যা থাকা সত্ত্বেও, বিশ্ব বিশ্বাস করে যে জাপানিরা তাদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠবে। আসুন, এই নিবন্ধে জাপানের নতুন কিছু প্রযুক্তিগত আবিষ্কার সম্পর্কে জানি।
বুলেট ট্রেন (১৯৬৪)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছিল। বলা হয় যে, সেই মহাযুদ্ধের পর টোকিওতে একটিও বাড়ি অক্ষত ছিল না, কিন্তু মাত্র ২০ বছরের মধ্যেই জাপান প্রথম বুলেট ট্রেন চালু করে। জাপানে প্রথম বুলেট ট্রেন টোকিও এবং ওসাকার মধ্যে ১৯৬৪ সালের ১ অক্টোবর শুরু হয়েছিল, যার সর্বোচ্চ গতি ছিল ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটারের বেশি।
টোকিও এবং ওসাকার মধ্যে ৫১৫ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে আগে ৬ ঘণ্টা ৩০ মিনিট সময় লাগত, কিন্তু বুলেট ট্রেন চালুর পর এই সময় সরাসরি আড়াই ঘণ্টা কমে যায়। বর্তমানে এই রুটে মানুষের যাতায়াতে মাত্র ২ ঘণ্টা ২৫ মিনিট সময় লাগে। তুলনা করলে দেখা যায়, ভারতে মুম্বাই ও আহমেদাবাদের মধ্যে ৫৩৪ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে দ্রুতগতির ট্রেনেও ৬ ঘণ্টা ২৫ মিনিট সময় লাগে।
আশ্চর্যজনক বিষয় হল, ১৯৬৪ সালে টোকিও ও ওসাকার মধ্যে প্রতিদিন ৬০টি ট্রেন চলত, যেখানে আজ একই রুটে প্রতিদিন ৩৩৩টি ট্রেন চলে। জাপান বুলেট ট্রেনের জন্য ২,২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ লাইন তৈরি করেছে, যেখানে প্রতিদিন ৮৪১টি ট্রেন চলাচল করে। ১৯৬৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এই ট্রেনটি বিশ্বের মোট জনসংখ্যার চেয়েও বেশি মানুষ ব্যবহার করেছে।
পকেট ক্যালকুলেটর (১৯৭০)
পকেট ক্যালকুলেটর, যা সংখ্যা গণনা করতে সাহায্য করে, সেটিও জাপানের একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। প্রথম দিকে এই যন্ত্রগুলো বেশ ভারী ছিল এবং এগুলো পকেটে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে প্রযুক্তির উন্নতি হয়েছে এবং আজ আমরা সেই স্মার্ট প্রযুক্তির সুবিধা নিতে পারছি, যা জাপান তৈরি করেছে।
অ্যান্ড্রয়েড রোবট (২০০৩)
রোবট এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে, এবং জাপানি উদ্ভাবকদের সহায়তায় এগুলো বাস্তব জীবনে ব্যবহারের উপযোগী হয়েছে। এই প্রযুক্তিগত জীবগুলো মানুষের মতো কাজ করতে ও আচরণ করতে পারে। ২০০৩ সালে প্রথম জাপানি মানব সদৃশ রোবট তৈরি করা হয়েছিল, যা চোখের পলক ফেলতে, শ্বাস নিতে এবং মানুষের মতো আচরণ করতে সক্ষম ছিল। ২০১৫ সালে, জাপান আরও একটি আবিষ্কারের দাবি করে, যখন তারা প্রায় সম্পূর্ণভাবে মানব সদৃশ রোবট দ্বারা সজ্জিত একটি হোটেল খোলে।
নীল এলইডি আলো (১৯৯০)
নীল এলইডি আলো জাপানের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। ২০১৪ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বিজ্ঞানী শুজি নাকামুরা এবং তার সহযোগীরা এটি আবিষ্কার করেছিলেন। এলইডি, একটি আলো-নির্গমনকারী ডায়োড, কম তাপ উৎপন্ন করে এবং বেশি আলো সরবরাহ করে প্রক্রিয়াগুলোকে আরও কার্যকর করতে পারে।
বৈদ্যুতিক রাইস কুকার
রান্নাঘরের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলোর মধ্যে বৈদ্যুতিক রাইস কুকার অন্যতম। এতে একটি পাত্র, তাপের উৎস এবং থার্মোস্ট্যাট থাকে। এটি নিখুঁতভাবে ভাত রান্না করতে সক্ষম। এটি ভাতকে গরম ও সতেজ রাখে, পুড়ে যাওয়া থেকে বাঁচায় এবং সহজেই পরিষ্কার করা যায়।