জৈন ধর্মের সর্বোচ্চ আদর্শ ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের প্রতিফলন ঘটায় এমন পর্ব, মহাবীর জয়ন্তী ২০২৫ সালে ১০ই এপ্রিল সমগ্র দেশে শ্রদ্ধা, ভক্তি ও উৎসাহের সাথে পালিত হবে। এই দিনটি কেবলমাত্র জৈন সম্প্রদায়ের জন্যই নয়, সমস্ত মানবতার জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ্য, কারণ এটি সত্য, অহিংসা ও আত্মসংযমের শিক্ষা প্রদানকারী ভগবান মহাবীর স্বামীর জন্মতিথির স্মৃতির প্রতীক।
কোন ছিলেন ভগবান মহাবীর?
ভগবান মহাবীরের জন্ম খ্রিস্টপূর্ব ৫৯৯ সালে বিহারের কুণ্ডলপুর (বৈশালী)তে রাজা সিদ্ধার্থ ও রাণী ত্রিশলার ঘরে হয়েছিল। শৈশব থেকেই গম্ভীর, শান্ত ও করুণাময়ী প্রকৃতির মহাবীর মাত্র ৩০ বছর বয়সে সংসারের সুখ-বিলাস ত্যাগ করে দীক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ১২ বছর কঠোর তপস্যা ও সাধনা করে অবশেষে কৈবল্য জ্ঞান (পূর্ণ জ্ঞান) লাভ করেন। এরপর তিনি তীর্থঙ্কর হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন এবং জৈন ধর্মের পুনরুজ্জীবনের অগ্রদূত হয়ে ওঠেন।
মহাবীর জয়ন্তীর গুরুত্ব
মহাবীর জয়ন্তী কেবলমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং আত্মসংযম, সহ-অস্তিত্ব ও করুণার भावনাকে জাগ্রত করার দিন। জৈন সমাজ এই দিনে প্রভাত ফেরি, শোভাযাত্রা, সমূহীয় পূজা ও ধর্মসভায়ের আয়োজন করে। ভগবান মহাবীরের প্রতিমার দুধ, জল, কেসর ও চন্দন দিয়ে অভিষেক করা হয়। অনেক জায়গায় পঞ্চকল্যাণক পূজা ও অহিংসা সমাবেশের আয়োজনও করা হয়।
মহাবীর স্বামীর ৫টি মহান নীতি কী কী?
ভগবান মহাবীর সমাজের আধ্যাত্মিক উন্নয়নের জন্য পাঁচটি প্রধান নীতির শিক্ষা দিয়েছিলেন:
১. অহিংসা (Non-violence): সকল প্রাণীর প্রতি করুণা ও হিংসা থেকে দূরে থাকা।
২. সত্য (Truth): সব পরিস্থিতিতে সত্যের পালন করা।
৩. অস্তেয় (Non-stealing): যা দেওয়া হয়নি, তা নেওয়া যাবে না।
৪. ব্রহ্মচর্য (Celibacy): ইন্দ্রিয় সংযম ও পবিত্র জীবনযাপন।
৫. অপরিগ্রহ (Non-possessiveness): ভৌতিক বস্তু ও লোভ থেকে দূরে থাকা।
এই নীতিগুলি কেবলমাত্র জৈন সাধু-সাধ্বীদের জন্যই নয়, সাধারণ জীবনযাপনকারীদের জন্যও অনুপ্রেরণাদায়ক।
এই বছরের বিশেষ কী?
এই বছর মহাবীর জয়ন্তীর আয়োজন চৈত্র শুক্ল ত্রয়োদশী, বৃহস্পতিবার ১০ এপ্রিল ২০২৫ সালে হবে। বিশেষত্ব হলো, এবার বহু জৈন সংঘের যৌথ শোভাযাত্রা ও মাসিক সমূহীয় ক্ষমা প্রার্থনার উৎসবও একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে, যাতে সমাজে ভ্রাতৃত্ব ও অহিংসার भावনা আরও জোরালো হয়।
মহাবীর জয়ন্তী কেবলমাত্র একটি পবিত্র দিন নয়, বরং একটি জীবনধারা যা বলে যে আত্মশুদ্ধি ও মোক্ষের পথে অগ্রসর হতে অহিংসা, সত্য ও ত্যাগই সর্বশ্রেষ্ঠ অস্ত্র।