দেশের সবচেয়ে ধনী শিল্পপতি এবং রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ অম্বানী আবারও শেয়ার বাজারের বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের অমূল্য শিক্ষা দিয়েছেন।
মুম্বই: শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ নিয়ে সবসময় বলা হয় যে, ধৈর্য্য এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে নেওয়া সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে বড় লাভ দিতে পারে। এই কথাটি আবারও প্রমাণ করেছেন ভারতের সবচেয়ে ধনী শিল্পপতি মুকেশ অম্বানী। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ ১৬ বছর পুরোনো একটি বিনিয়োগ এমনভাবে কাজে লাগিয়েছে যে তারা ২৩ গুণ পর্যন্ত রিটার্ন পেয়েছে। এই চুক্তিটি এখন ভারতীয় কর্পোরেট জগতের ইতিহাসে একটি উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ ২০০৮ সালে এশিয়ান পেইন্টসে বিনিয়োগ করেছিল। এখন সেই বিনিয়োগের একটা অংশ যখন কোম্পানি বিক্রি করেছে, তখন তারা প্রায় ৭৭০০ কোটি টাকা আয় করেছে। এই পদক্ষেপে শুধুমাত্র রিলায়েন্স লাভ করেনি, বরং এটিও প্রমাণ করেছে যে শেয়ার বাজারে ধৈর্য্য এবং কৌশলের সাথে করা বিনিয়োগ সবসময় ফলপ্রসূ হয়।
আর্থিক মন্দার সময় নেওয়া বড় সিদ্ধান্ত
জানুয়ারী ২০০৮ সালে যখন বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকট তার চরমে ছিল, তখন বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী বাজার থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছিল। কিন্তু ঠিক সেই সময় রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ ঝুঁকি নিয়ে এশিয়ান পেইন্টসে ৪.৯ শতাংশ শেয়ার ৫০০ কোটি টাকায় কিনে নিয়েছিল। সেই সময় শেয়ার বাজার অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমে গিয়েছিল।
রিলায়েন্স এই শেয়ারগুলি তার সহায়ক কোম্পানি সিদ্ধান্ত কমার্শিয়ালস লিমিটেডের মাধ্যমে কিনেছিল। এত বছর পর যখন রিলায়েন্স এই শেয়ারের মধ্যে থেকে ৩.৫ কোটি শেয়ার বিক্রি করেছে, তখন এই চুক্তিটি তাদের প্রায় ৭৭০৪ কোটি টাকায় পড়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ২২০১ টাকা। এই চুক্তিটি শুধুমাত্র আর্থিক দিক থেকে লাভজনক ছিল না, বরং বিনিয়োগকারীদের জন্যও অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছে।
এশিয়ান পেইন্টসের শেয়ারের উপর চাপের পরিস্থিতিতেও মিলেছে লাভ
এশিয়ান পেইন্টসের শেয়ার গত কয়েক বছরে উত্থান-পতন অবশ্যই দেখেছে। গত দুই বছরে এর শেয়ারের দাম প্রায় ৩২ শতাংশ কমেছে। এর পরেও রিলায়েন্স এই বিনিয়োগ থেকে চমৎকার লাভ করেছে।
এর প্রধান কারণ হল অম্বানী দীর্ঘ সময় ধরে তার শেয়ার ধরে রেখেছিলেন এবং যখন বাজার লাভ দেওয়ার পরিস্থিতি দেখিয়েছে, তখন সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে। আজ যখন ভারতের রঙের শিল্প তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি, এশিয়ান পেইন্টসের উপরও নতুন প্রবেশকারীদের যেমন আদিত্য বিড়লা ওপাসের পক্ষ থেকে চাপ রয়েছে। এমন সময়ে শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া শুধুমাত্র লাভজনক ছিল না, বরং সময়ের দিক থেকেও অত্যন্ত চতুর কৌশল প্রমাণিত হয়েছে।
বিনিয়োগের কৌশলে দীর্ঘমেয়াদী চিন্তাভাবনার কার্যকারিতা
মুকেশ অম্বানীর এই কৌশলটি বলে যে শেয়ার বাজারে শুধুমাত্র উত্থান বা পতন দেখে নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদী চিন্তা এবং মানসম্পন্ন কোম্পানিগুলিতে বিনিয়োগের মাধ্যমেই আসল লাভ অর্জন করা যায়।
রিলায়েন্স এর আগে ২০২০ সালে তার শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করেছিল, যখন কোম্পানি সবচেয়ে বড় রাইটস ইস্যু আনার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু সেই সময় চুক্তিটি সম্পন্ন হয়নি এবং কোম্পানি ডিজিটাল, টেলিকম এবং খুচরা খাতে বিনিয়োগ সংগ্রহ করে তার ঋণ কমিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত রিলায়েন্সকে আরও শক্তিশালী করেছে এবং প্রমাণ করেছে যে কৌশলগত ধৈর্য্যের ফল মিষ্টি হয়।
বিনিয়োগকারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা
এই ঘটনা থেকে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পেয়েছে। প্রথমত, বাজারে আবেগ নয়, বুদ্ধিমত্তার সাথে বিনিয়োগ করুন। দ্বিতীয়ত, সবসময় দীর্ঘমেয়াদী চিন্তাভাবনার সাথে বিনিয়োগ করা ভালো। তৃতীয়ত, শক্তিশালী কোম্পানিগুলিতে আস্থা রাখুন এবং তাদের সাথে সময় কাটান।
মুকেশ অম্বানী যেমনভাবে তার বিনিয়োগ থেকে ২৩ গুণ রিটার্ন পেয়েছেন, তা এই কথার প্রমাণ যে সংযম, কৌশল এবং সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল শেয়ার বাজারের আসল চাবি।
বিনিয়োগকারীদের বুঝতে হবে যে বাজারে অস্থিরতা আসে-যায়, কিন্তু যদি বিনিয়োগ চিন্তাভাবনা করে এবং যথাযথ সময়ের জন্য করা হয়, তাহলে এটি ভবিষ্যতে বড় লাভ দিতে পারে।