২০২৫ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদী এবং রাহুল গান্ধীর মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রত্যাশা। উভয় নেতাই রাজ্যে নিয়মিত ভ্রমণ করছেন। মোদী উন্নয়নের কথা বলছেন, রাহুল সরকারের ব্যর্থতার উপর আক্রমণ করছেন।
Bihar Election 2025: বিহারের রাজনীতিতে ২০২৫ সালের বিধানসভা নির্বাচনের উত্তাপ চরমে। রাজনৈতিক পরিবেশে একটি প্রশ্ন দ্রুত আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে – কি বিহার নির্বাচনে প্রকৃত লড়াই হবে নরেন্দ্র মোদী বনাম রাহুল গান্ধীর মধ্যে? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, উভয় নেতাই বিহারে তাদের সক্রিয়তা বৃদ্ধি করেছেন। এই বছরের প্রথম পাঁচ মাসে মোদী বিহার চারবার ভ্রমণ করেছেন, যখন রাহুল গান্ধী চারবার রাজ্য ভ্রমণ করেছেন এবং শীঘ্রই পঞ্চমবার বিহার আসছেন।
২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এনডিএ যদিও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল, তবে সেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল খুবই দুর্বল। এখন ২০২৫ সালের নির্বাচনের জন্য উভয় শিবিরই তাদের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করছে। আসুন জেনে নেই বিহারে রাজনীতি কোন দিকে যাচ্ছে এবং মোদী-রাহুলের মধ্যে প্রকৃত প্রতিদ্বন্দ্বিতা কীভাবে দেখা দিচ্ছে।
মোদীর বিহারে সক্রিয়তা
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ফোকাস বিহারে ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকারের ধারণাকে দৃঢ় করা। তিনি সম্প্রতি বিক্রমগঞ্জের জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের ২০ বছরের শাসনকে দুটি ভাগে ভাগ করে বলেছেন যে ২০০৪ সালের আগে বিহারের উন্নয়ন ধীর ছিল, কিন্তু যখন কেন্দ্রে তাঁর সরকার এসেছিল, তখন রাজ্যের উন্নয়নের গতি বেড়েছে।
মোদী তাঁর প্রতিটি বক্তৃতায় বিহারের জন্য কেন্দ্রের পরিকল্পনাগুলি উল্লেখ করেন, যেমন অবকাঠামোগত প্রকল্প, নতুন মেডিকেল কলেজ, সড়ক ও রেল নেটওয়ার্কের সম্প্রসারণ। তাঁর স্পষ্ট ইঙ্গিত যে বিহারকে উন্নয়নের পথে শুধুমাত্র ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকারই নিয়ে যেতে পারে। যদিও তিনি এখনও পর্যন্ত সরাসরি ভোটের আবেদন করেননি, তবে প্রতিটি জনসভায় তাঁর বক্তব্য থেকে নির্বাচনী বার্তা স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়।
রাহুল গান্ধীর বিহার ভ্রমণ
রাহুল গান্ধীর বিহার ভ্রমণের উদ্দেশ্য আলাদা। তিনি এনডিএ-র ঐতিহ্যগত ভোটারদের তাঁর দিকে আকর্ষণ করার কৌশলে কাজ করছেন। তাঁর লক্ষ্য বিশেষ করে অনুসূচিত জাতি, পিছড়া, অতি পিছড়া এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। রাহুলের আগামী ভ্রমণ ৬ জুন নালন্দার রাজগিরে হবে, যেখানে তিনি অতি পিছড়া বর্গ সম্মেলনকে সম্বোধন করবেন।
রাহুলের জনসভার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল তাঁর মঞ্চে মহাজোটের সকল নেতা থাকেন না। যখন মোদীর জনসভায় এনডিএ-র সকল সহযোগী নেতা এক মঞ্চে দেখা যায়। এটা স্পষ্ট করে যে বিরোধীদের মধ্যে ঐক্যের অভাব রয়েছে। ২০২০ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনেও রাহুল গান্ধী এবং তেজস্বী যাদবের মঞ্চ ভাগ করা কঠিন ছিল।
২০২০ সালের নির্বাচন এবং এনডিএ-র দুর্বল জয়
২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এনডিএ ২৪৩ টি আসনের মধ্যে ১২৫ টি আসন পেয়েছিল, যা সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যা ছিল। মহাজোট ১১০ টি আসন পেয়েছিল। মোদী সেই নির্বাচনেও বিহারে ১২ টি জনসভা করেছিলেন, যার ব্যাপক প্রভাব দেখা গিয়েছিল।
রাহুল গান্ধীর জনসভার সংখ্যা তখন কম ছিল – তিনি তিনবার বিহার ভ্রমণ করেছিলেন এবং ৮ টি জনসভা করেছিলেন। এইবার রাহুল গান্ধী তাঁর সক্রিয়তা বৃদ্ধি করে এই ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা করছেন।
কি লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বিধানসভায় পুনরাবৃত্তি হবে?
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ-র প্রদর্শন ২০২৯ সালের তুলনায় দুর্বল ছিল। ২০২৯ সালে এনডিএ বিহারের ৪০ টি আসনের মধ্যে ৩৯ টি আসন পেয়েছিল, কিন্তু ২০২৪ সালে এ সংখ্যা কমে ৩১ টি হয়েছে। বিরোধীরা ১০ টি আসনে জয় লাভ করেছে।
যদিও, বিধানসভা আসনের ভিত্তিতে দেখলে, যেসব আসনে এনডিএ লোকসভায় আধিপত্য বিস্তার করেছিল, যদি একই প্রবণতা বিধানসভা নির্বাচনেও পুনরাবৃত্তি হয়, তাহলে তাদের আবার ক্ষমতায় আসতে কোনও সমস্যা হবে না।
এনডিএ-র আত্মবিশ্বাস সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চারটি বিধানসভা উপনির্বাচনের ফলাফলে আরও বেড়েছে। বেলাগঞ্জ, তারারি, রামগড় এবং ইমামগঞ্জে এনডিএ প্রার্থীদের জয় তাদের উৎসাহ দিয়েছে।
রাহুলের জন্য চ্যালেঞ্জ এবং মহাজোটের দুর্বল দিক
রাহুল গান্ধীর সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল মহাজোটকে ঐক্যবদ্ধ রাখা। মহাজোটের কোর কমিটি গঠিত হয়েছে এবং সংবাদ সম্মেলন সাধারণভাবে অনুষ্ঠিত হয়, কিন্তু মঞ্চ ভাগ করার প্রবণতা এখনও দেখা যায়নি। কি বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাহুল এবং তেজস্বী যাদব এক মঞ্চে দেখা যাবে? এটি একটি বড় প্রশ্ন।
এছাড়াও, কংগ্রেসের নিজস্ব ভোটার ভিত্তিও দুর্বল, তাই রাহুলকে বিহারে তাঁর পদক্ষেপ দৃঢ় করার জন্য মাঠে নেমে আরও পরিশ্রম করতে হবে।