ভারত আবারও তার কঠোর অবস্থানের জন্য বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। জম্মু ও কাশ্মীরের পাহলগামে সংঘটিত ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর কেন্দ্র সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একের পর এক কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এই ধারাবাহিকতায় এবার ডিজিটাল স্পোর্টস প্ল্যাটফর্ম Fancodeও বড় পদক্ষেপ নিয়েছে।
ডিজিটাল আঘাত: জম্মু ও কাশ্মীরের পাহলগামে সংঘটিত মর্মান্তিক জঙ্গি হামলার পর ভারত সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যার প্রভাব দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিকে পড়ছে। এই জঙ্গি হামলা ভারতকে আবারও চিন্তাভাবনা করতে বাধ্য করেছে যে পাকিস্তান থেকে উগ্রবাদী কর্মকাণ্ড রোধ করার জন্য আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
এই প্রেক্ষাপটে, ভারত সরকার সিন্ধু জল চুক্তি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার ফলে পাকিস্তানকে প্রাপ্ত জলের ব্যবহার এখন কঠোর নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এছাড়াও, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং পাকিস্তানি নাগরিকদের ভারত ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তগুলি ছাড়াও, পাকিস্তান সুপার লীগ (PSL) এর ভারতে সম্প্রচারেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, PSL-এর আনুষ্ঠানিক ডিজিটাল সম্প্রচারকারী FANCODE অ্যাপ PSL-এর ম্যাচগুলির ভারতে সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার অর্থ হল এখন ভারতে PSL-এর ম্যাচ দেখার জন্য কোনও আনুষ্ঠানিক চ্যানেল উপলব্ধ থাকবে না। Fancode পাকিস্তান সুপার লীগ (PSL) এর ভারতে সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত বুধবার, ২৪শে এপ্রিল ২০২৫ থেকে কার্যকর হয়েছে।
PSL-এর উপর ডিজিটাল আঘাত
ভারতে PSL-এর ডিজিটাল অংশীদার Fancode পাহলগাম জঙ্গি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ নিয়েছে, যেখানে ২৬ জন নির্দোষ পর্যটক প্রাণ হারিয়েছে। এই হামলার পিছনে পাকিস্তান সমর্থিত জঙ্গি সংগঠনের হাত থাকার কথা বলা হচ্ছে। এই ঘটনার পর ভারত সরকার কয়েকটি কৌশলগত ও কূটনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার মধ্যে সিন্ধু জল চুক্তি বাতিল করা, পাকিস্তানের সাথে বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক বন্ধ করা অন্তর্ভুক্ত। Fancode-এর এই পদক্ষেপকে এসবের ডিজিটাল বর্ধন বলা যেতে পারে।
ভারতে আর দেখা যাবে না PSL
Fancode স্পষ্ট করে দিয়েছে যে ২৪শে এপ্রিল থেকে PSL ২০২৫-এর কোনও ম্যাচের ভারতে লাইভ স্ট্রিমিং করা হবে না। উল্লেখযোগ্য যে, PSL-এর ২০২৫ সংস্করণ ১১ এপ্রিল থেকে পাকিস্তানে চলছে, যার সকল ম্যাচের স্ট্রিমিংয়ের অধিকার Fancode-এর কাছে ছিল। Fancode-এর এই সিদ্ধান্ত কেবলমাত্র একটি ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নয়, বরং দেশের আবেগ ও নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তের পর পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (PCB) কে তীব্র আর্থিক ধাক্কা লাগতে পারে, কারণ ভারতে PSL-এর প্রচুর সংখ্যক দর্শক ছিল।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের দেশের সাথে একাত্মতা
পাহলগাম হামলার পর ভারত সরকার এবং সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি বেড়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায়ও PSL বর্জনের আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে Fancode-এর এই পদক্ষেপ জনমতের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এবং এটি একটি ডিজিটাল আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
প্রায়শই খেলাকে দুটি দেশের মধ্যে একটি সেতু হিসেবে দেখা হয়, কিন্তু যখন খেলার মঞ্চ পরোক্ষভাবে সন্ত্রাসবাদের সাথে জড়িত হয়, তখন সেই সেতু আর বিশ্বাসের সেতু থাকে না। ভারত এর আগে ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর পাকিস্তানের সাথে ক্রিকেট সম্পর্ক শীতল করে দিয়েছিল। এখন ২০২৫ সালের পাহলগাম হামলা আবারও খেলা ও আবেগের মধ্যেকার ফাঁককে আরও গভীর করে দিয়েছে।
কী বলছেন খেলা বিশেষজ্ঞরা?
খেলা বিশেষজ্ঞদের মতে, Fancode-এর এই সিদ্ধান্ত ক্রিকেটের সাথে যুক্ত বাণিজ্যিক স্বার্থের বিরুদ্ধে অবশ্যই, কিন্তু এটি দেশের স্বার্থে নেওয়া পদক্ষেপ। এটি দেখায় যে, যখন জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন আসে, তখন কোনও প্রতিষ্ঠানই নিরপেক্ষ দর্শক থাকতে পারে না। Fancode-এর এই সিদ্ধান্তের ফলে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে কোটি কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হতে হতে পারে। PSL-এর ডিজিটাল দর্শকদের একটি বড় অংশ ভারত থেকে আসত। এই নিষেধাজ্ঞার ফলে কেবলমাত্র দর্শক সংখ্যা কমবে না, বরং বিজ্ঞাপন ও স্পন্সরশিপেও ব্যাপক হ্রাস দেখা যাবে।
