গগনয়ান: ২০২৭ সালের প্রথম দিকে ভারতের প্রথম মানব মহাকাশ অভিযান

গগনয়ান: ২০২৭ সালের প্রথম দিকে ভারতের প্রথম মানব মহাকাশ অভিযান
সর্বশেষ আপডেট: 05-06-2025

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ জানিয়েছেন যে ভারতের প্রথম মানব মহাকাশ অভিযান ‘গগনয়ান’ সম্ভবত ২০২৭ সালের শুরুতে উৎক্ষেপণ করা হবে। এই অভিযান ভারতের জন্য একটি বিরাট সাফল্য হবে।

মিশন গগনয়ান: ভারতের স্বপ্ন এবার শীঘ্রই বাস্তবায়িত হতে চলেছে। দেশের প্রথম মানববাহী মহাকাশ অভিযান ‘গগনয়ান’ ২০২৭ সালের শুরুতে উৎক্ষেপণের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ডঃ জিতেন্দ্র সিংহ এই অভিযান সম্পর্কে সাম্প্রতিক তথ্য দিয়ে জানিয়েছেন যে, যদি সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী হয়, তাহলে ভারতও আমেরিকা, রাশিয়া এবং চীন-এর মতো বিশ্বের কিছু নির্বাচিত দেশের তালিকায় যোগ দিতে পারবে, যারা সফলভাবে মানব মহাকাশ অভিযান উৎক্ষেপণ করেছে।

গগনয়ান অভিযানের বর্তমান অবস্থা এবং উৎক্ষেপণের সম্ভাবনা

গগনয়ান অভিযান ভারতের জন্য একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ, যা দেশের মহাকাশ প্রযুক্তিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ডঃ জিতেন্দ্র সিংহ বলেছেন যে গগনয়ানের মানববিহীন পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এই বছরের শুরুতে TV-D1 মিশন এবং মানববিহীন টেস্ট ভেহিকল অ্যাবর্ট মিশন (TV-D1 এবং TV-Abort) এর সফল সমাপ্তি পরবর্তী পরীক্ষার জন্য একটি দৃঢ় ভিত্তি তৈরি করেছে।

এর পরে পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ TV-D2 পরীক্ষামূলক যান অভিযান ২০২৫ সালের শেষের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। এরপরে গগনয়ানের মানববিহীন কক্ষপথীয় উড়ান হবে, যা এই অভিযানের সাফল্যের দিকে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করবে। এই সমস্ত পরীক্ষার পর ২০২৭ সালের প্রথম কয়েক মাসে ভারতের প্রথম মানববাহী মহাকাশ উড়ান হবে, যেখানে ভারতীয় মহাকাশচারী (বিমানচালক) ভারতীয় ভূমি থেকে ভারতীয় রকেটের মাধ্যমে মহাকাশে পাঠানো হবে।

গগনয়ান অভিযানের গুরুত্ব

গগনয়ান অভিযান ভারতের জন্য কেবলমাত্র একটি প্রযুক্তিগত সাফল্য নয়, বরং এটি জাতীয় গর্বের বিষয়ও। এই অভিযানের সাফল্যের ফলে ভারত মহাকাশের ক্ষেত্রে আমেরিকা, রাশিয়া, চীন-এর মতো বিশ্বশক্তির সাথে সমানে সমানে দাঁড়াবে। ভারতের এই অভিযানের পর দেশের বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ এবং তরুণদের নতুন শক্তি এবং অনুপ্রেরণা পাবে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০১৮ সালের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে গগনয়ান অভিযানের ঘোষণা করেছিলেন। সেই সময় অভিযানের জন্য ২০২২ সালকে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল, কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে এই পরিকল্পনা বিলম্বিত হয়েছে। পরবর্তীতে এটিকে ২০২৫ সালের জন্য লক্ষ্য করা হয়েছিল, কিন্তু প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জের কারণে এই লক্ষ্যকেও আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে। এখন ২০২৭ সালের নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যা পূরণ করার জন্য দেশের মহাকাশ সংস্থা ইসরো (ISRO) সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত।

মানববিহীন উড়ান মিশনের সাফল্যের চাবিকাঠি

গগনয়ান অভিযানের সাফল্যে মানববিহীন উড়ানের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই উড়ানগুলি নিশ্চিত করবে যে সমস্ত প্রযুক্তিগত এবং নিরাপত্তা মান সম্পূর্ণরূপে পরীক্ষা করা এবং সফল হবে। এটি কেবল রকেটের নির্ভরযোগ্যতা প্রমাণ করবে না, বরং মহাকাশচারীদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করবে। এই বছরের TV-D1 এবং টেস্ট ভেহিকল অ্যাবর্ট মিশনের সাফল্য থেকে এটি স্পষ্ট হয়েছে যে ভারত প্রযুক্তিগতভাবে অভিযানের জন্য সম্পূর্ণরূপে সক্ষম হয়েছে। TV-D2 পরীক্ষার পরেই মানববাহী অভিযানের জন্য চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে।

গগনয়ান অভিযানের সাফল্যের ফলে ভারতের মহাকাশ কর্মসূচিতে একটি নতুন অধ্যায় যুক্ত হবে। এটি কেবল ভারতের মহাকাশ গবেষণাকেই শক্তিশালী করবে না, বরং প্রতিরক্ষা, যোগাযোগ এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায়ও অনেক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। এই অভিযানের সাথে সাথে ভারতীয় মহাকাশচারীদের প্রথমবারের জন্য ভারতীয় ভূমি থেকে ভারতীয় রকেটের মাধ্যমে কক্ষপথে পাঠানো হবে। এই পদক্ষেপ কেবলমাত্র বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং দেশের জন্য গর্বের বিষয়ও।

Leave a comment