বিহারের সরকারি স্কুলগুলিতে এখন শিক্ষকদের পাঠদানের ধরণের মূল্যায়ন সরাসরি ক্লাসরুমে করা হবে। SCERT-এর দলগুলি ২৩টি বিষয়ের উপর শিক্ষাদানের মান পরীক্ষা করে গ্রেডিং করবে। উদ্দেশ্য হল শিক্ষার উন্নতি সাধন।
বিহার শিক্ষক সংবাদ: বিহারের সরকারি স্কুলগুলিতে এখন শিক্ষকদের পাঠদানের ধরণের সরাসরি এবং সঠিক মূল্যায়ন শুরু হয়েছে। গ্রীষ্মকালীন ছুটির পর শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে শিক্ষকদের দক্ষতা এবং পাঠদানের পদ্ধতিগুলি সূক্ষ্মভাবে পরীক্ষা করা হবে। এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য হল শিক্ষার মান উন্নত করা এবং নিশ্চিত করা যে প্রশিক্ষণের পর শিক্ষকরা কতটা কার্যকর ক্লাস নিচ্ছেন।
SCERT পরিচালক নির্দেশ জারি করেছেন
রাজ্য শিক্ষা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ পরিষদ (SCERT)-এর পরিচালক সকল জেলায় চিঠি পাঠিয়ে স্পষ্ট করেছেন যে এটি একটি শিক্ষাগত পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া, কোনও পরিদর্শন বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নয়। এর উদ্দেশ্য শিক্ষকদের কর্মদক্ষতা বুঝতে পারা, তাদের ত্রুটিগুলি চিহ্নিত করা এবং শিক্ষাকে আরও উন্নত করা।
ক্লাসরুমে হবে লাইভ মূল্যায়ন প্রক্রিয়া
সমস্তীপুর জেলাসহ সমগ্র বিহারে এখন শিক্ষকদের ক্লাসে পাঠদানের ধরণ সরাসরি ক্লাসরুমেই পর্যবেক্ষণ করা হবে। ডায়েট (DIET) এবং শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়ের দলগুলিকে এই কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে। এই দলগুলি স্কুলে গিয়ে ক্লাসে বসবে এবং শিক্ষকদের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করবে।
প্রতিটি দল পাঁচটি স্কুলের দায়িত্ব পাবে
প্রতিটি মূল্যায়ন দল পাঁচটি স্কুল—একটি উচ্চ বিদ্যালয়, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়—এ মূল্যায়নের দায়িত্ব পাবে। এই দলগুলি সপ্তাহে একদিন স্কুলে উপস্থিত থেকে ক্লাসগুলি পরিদর্শন করবে এবং শিক্ষকদের পাঠদানের ধরণ, বিষয়বস্তুর উপস্থাপনা, ছাত্রদের অংশগ্রহণ ইত্যাদি ২৩টি বিশেষ বিষয়ের উপর ভিত্তি করে গ্রেডিং করবে।
মূল্যায়নের প্রধান ২৩টি বিষয়
এই মূল্যায়ন সম্পূর্ণরূপে একটি শিক্ষাগত গ্রেডিং প্রক্রিয়া, যেখানে নিম্নলিখিত প্রধান বিষয়গুলিতে মনোযোগ দেওয়া হবে:
- শিক্ষক কতটা স্পষ্টতার সাথে বিষয়বস্তু বুঝিয়ে দিচ্ছেন
- বিষয়বস্তু যুক্তিযুক্তভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে কি না
- শিক্ষাদানে উপযুক্ত উদাহরণের ব্যবহার
- ছাত্রদের সাথে যোগাযোগের অবস্থা এবং আন্তঃক্রিয়া
- ছাত্রদের প্রশ্ন করার স্বাধীনতা
- শিক্ষকদের উত্তর কতটা সন্তোষজনক এবং সঠিক
- ছাত্ররা কি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নোট করতে পারছে
- ক্লাসে শৃঙ্খলা এবং ইতিবাচক পরিবেশ
এই প্রক্রিয়ায় এটিও দেখা হবে যে শিক্ষকরা কতটা সক্রিয়তার সাথে ছাত্রদের শিক্ষাগত কার্যকলাপে জড়িত করছেন।
মূল্যায়নের পিছনে উদ্দেশ্য
SCERT-এর মতে, এই উদ্যোগের প্রধান উদ্দেশ্য হল জানা যে এখন পর্যন্ত যে শিক্ষক প্রশিক্ষণ হয়েছে তার প্রভাব ক্লাস শিক্ষণে কতটা দেখা যাচ্ছে। শিক্ষকরা নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করে কি ছাত্রদের উন্নত শিক্ষা দিতে পারছেন? স্কুলগুলিতে শিক্ষাদান কি শুধু আনুষ্ঠানিক হয়েই থেকে গেছে নাকি তাতে গুণগত পরিবর্তন আসছে?
শিক্ষকদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ
SCERT পরিচালক এই বিষয়টি পুনরায় জোর দিয়ে বলেছেন যে এই প্রক্রিয়া কোনও শাস্তিমূলক চিন্তাভাবনার আওতায় করা হচ্ছে না। সকল মূল্যায়ন দলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে তারা শিক্ষকদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করবে এবং সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটিকে সহজ এবং ইতিবাচক করে তুলবে। কোনও শিক্ষককে লজ্জিত করা বা চাপ দেওয়ার কোনও পরিস্থিতি তৈরি করা উচিত নয়।
পারদর্শিতা এবং শেখার প্রক্রিয়ার উপর জোর
এই প্রক্রিয়া থেকে পারদর্শিতা বৃদ্ধি পাবে। ছাত্ররা কতটা পরিমাণে শিক্ষকের কথা বুঝতে পারছে তাও জানা যাবে। এর ফলে ছাত্রদের শেখার প্রক্রিয়াতেও উন্নতির আশা করা হচ্ছে। কোথাও কোনও দুর্বলতা পাওয়া গেলে, তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে উন্নতির পরিকল্পনা করা হবে।
শিক্ষার মান উন্নয়নের দিকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ
বিহারে প্রায়শই সরকারি স্কুলের শিক্ষার উপর প্রশ্ন উঠে আসে। এমন পরিস্থিতিতে এই প্রক্রিয়া একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এর ফলে শিক্ষকদের মধ্যে কাজের প্রতি দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি পাবে, পাশাপাশি ছাত্ররাও আরও সচেতন এবং অংশগ্রহণকারী হবে। ক্লাসে গুণগত মান এবং শৃঙ্খলার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা এই উদ্যোগের প্রধান উদ্দেশ্য।
SCERT এবং ডায়েটের ভূমিকা হবে গুরুত্বপূর্ণ
SCERT এবং জেলা পর্যায়ে ডায়েট প্রতিষ্ঠান এই সমগ্র অভিযানের প্রধান পরিচালক। তাদের দলগুলিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে যে তারা শুধুমাত্র পর্যবেক্ষক নয়, বরং সহযোগীর ভূমিকায় কাজ করবে। মূল্যায়নের সময় যেসব পরামর্শ পাওয়া যাবে তা ভবিষ্যৎ নীতি-নির্ধারণে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।