দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মৌসুমি বৃষ্টির আগমন ঘটেছে, যার ফলে আবহাওয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতে বৃষ্টির ফলে মানুষ তীব্র গরম ও আর্দ্রতার হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে।
আইএমডি আবহাওয়া আপডেট: দেশজুড়ে অবশেষে মৌসুমি বৃষ্টি গতি পেয়েছে। উত্তর ও পশ্চিম ভারতের অনেক স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে মানুষ প্রচণ্ড গরম ও আর্দ্রতার হাত থেকে ব্যাপক স্বস্তি পেয়েছে। দিল্লি, হরিয়ানা, রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ের মতো রাজ্যগুলিতে আচমকা আবহাওয়ার পরিবর্তনে গরমে ক্লান্ত জনতাকে একটু শ্বাস নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।
ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) আগামী কয়েকদিনের জন্য ইয়েলো ও অরেঞ্জ সতর্কতা জারি করেছে, যা থেকে স্পষ্ট যে বৃষ্টির এই ধারা এখনো থামছে না।
দিল্লিতে স্বস্তির বৃষ্টি
সোমবার রাত এবং মঙ্গলবার সকালে দিল্লিবাসী যে বৃষ্টি পেয়েছে তাতে তাদের স্বস্তির ঠান্ডা বাতাস পেয়েছে। সকাল ৮:৪৫ টায় চিরাগ দিল্লি ও আশপাশের এলাকায় কালো মেঘের ঘন উপস্থিতি ছিল। তাপমাত্রায় ৩-৪ ডিগ্রি কমেছে। এর আগে কয়েকদিন ধরে দিল্লিবাসী আর্দ্রতা ও লু-র মারে পড়েছিল।
আইএমডি দিল্লি-এনসিআর-এর জন্য ইয়েলো সতর্কতা জারি করেছে, যেখানে ঝড়, বজ্রপাত এবং হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা প্রকাশ করা হয়েছে। ৫০-৬০ কিমি/ঘণ্টা বেগে প্রবল বাতাস বইতে পারে, যার ফলে বিমান চলাচল ও যানবাহন ব্যবস্থা প্রভাবিত হতে পারে।
রাজস্থান: ঝর্ণার ধারা ও রাস্তায় পানির বন্যা
রাজস্থানের অনেক জেলায় মৌসুমি বৃষ্টির আগমন ঘটেছে। আজমেরে সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ভারী বৃষ্টি হয়েছে, যার ফলে জয়পুর রোডসহ অনেক প্রধান সড়কে পানি জমেছে। যানজট ও পিচ্ছিল রাস্তা মানুষকে বেশ ঝামেলায় ফেলেছে। রাজসমন্দ ও কুম্ভলগড়ে ঝর্ণাগুলো আবার জীবন্ত হয়ে উঠেছে। কুম্ভলগড়ের হনুমান পোল এলাকায় পানির বहाব এত তীব্র ছিল যে স্থানীয় মানুষ ও পর্যটকরা তা দেখতে ভিড় জমিয়েছিল।
আবহাওয়া বিভাগ এই দুটি জেলার জন্য ১৮ জুন পর্যন্ত ইয়েলো সতর্কতা জারি করেছে। ভারী বৃষ্টিপাত ও পানি জমার সতর্কতার সাথে প্রশাসন সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
ছত্তিশগড়ের জশপুরে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে
ছত্তিশগড়ের জশপুর জেলায় মঙ্গলবার সকাল থেকে মাঝেমাঝেই বৃষ্টি হচ্ছে, যা কৃষকদের জন্য বরদান স্বরূপ। বিশেষ করে ধান রোপণের জন্য এই বৃষ্টি অত্যন্ত উপকারী। আবহাওয়া বিভাগ এখানে অরেঞ্জ সতর্কতা জারি করেছে এবং সারাদিন বৃষ্টিপাত চলার সম্ভাবনা প্রকাশ করেছে। কৃষকদেরকে জল ব্যবস্থাপনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যাতে অতিরিক্ত পানির কারণে ফসলের ক্ষতি না হয়। এছাড়াও বজ্রপাতের ঘটনা থেকে সাবধান থাকার জন্য সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
হরিয়ানার হিসারে ঠান্ডা বাতাসে স্বস্তি
গত কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড গরমে ক্লান্ত হরিয়ানার হিসারেও মঙ্গলবার আবহাওয়া পরিবর্তন হয়েছে। সকাল থেকেই মেঘলা আকাশ ছিল এবং হালকা বৃষ্টির ফলে তাপমাত্রায় ৩-৪ ডিগ্রি কমেছে। আবহাওয়া বিভাগ ২১ জুন পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে, যার ফলে আগামী দিনগুলিতেও আবহাওয়া মনোরম থাকবে।
বঙ্গ ও উত্তর-পূর্বে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা
পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তর-পূর্ব ভারতের কিছু অংশেও বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বঙ্গের দক্ষিণাঞ্চলে ১৮ জুন ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। কলকাতায় ১৮ ও ১৯ জুন ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারত, বিশেষ করে মেঘালয়ে ১৮ ও ১৯ জুন অত্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত ("এক্সট্রিমলি হেভি ফলস") এর সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এই অঞ্চলে পানি জমে যাওয়া ও ভূমিধ্বসের আশঙ্কাও প্রকাশ করা হয়েছে।
বিহারের পাটনা সহ অনেক জেলায় এখনো গরম থেকে রেহাই মেলেনি, তবে আবহাওয়া বিভাগ আগামী ৩-৫ দিনের মধ্যে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আগমনের সম্ভাবনা প্রকাশ করেছে। তাপমাত্রা কমার পরও 'ফিল টেম্পারেচার' এখনও বেশি অনুভূত হচ্ছে।