রাম দরবার শতাব্দী ধরে তার ঔজ্জ্বল্য ও মহিমা ধরে রাখবে। ৪০ বছর পুরানো একটি বিশেষ মার্বেল পাথরের উপর তৈরি রাম দরবারের মূর্তি তার অনন্য বৈশিষ্ট্যের জন্য সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে।
রাম মন্দির: অযোধ্যার শ্রীরাম জন্মভূমিতে বিশাল রাম মন্দিরের নির্মাণ যতই চূড়ান্ত পর্যায়ে প্রবেশ করছে, ততই মন্দিরের কারুকার্য ও স্থাপত্যের প্রশংসা হচ্ছে। এই ধারাবাহিকতায় মন্দিরের প্রথম তলায় স্থাপিত হতে যাওয়া রাম দরবারের মূর্তির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এই রাম দরবার ৪০ বছর পুরানো একটি এমন মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, যা তার অসাধারণ ঔজ্জ্বল্য ও দৃঢ়তার জন্য শতাব্দী ধরে কেবলমাত্র ধর্মীয় আস্থার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবেই নয়, স্থাপত্যকলারও উৎকৃষ্ট নমুনা হিসেবে বিবেচিত হবে।
মার্বেলের বৈশিষ্ট্য ও বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা
রাম দরবারের মূর্তি নির্মাতা প্রধান মূর্তিশিল্পী সত্য নারায়ণ পান্ডে জানিয়েছেন, এই মূর্তির নির্মাণের জন্য যে মার্বেলটি ছানা হয়েছে তা প্রায় ৪০ বছর পুরানো। এই পাথর শুধুমাত্র শক্তিতে নয়, এর ঔজ্জ্বল্য ও দীপ্তিতেও অত্যন্ত বিশেষ। তিনি বলেছেন, এই পাথরের বিশেষত্ব হল, এটিকে যত বেশি ধৌত করা হবে বা স্নান করানো হবে, ততই এর ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি পাবে এবং এটি শতাব্দী ধরে ম্লান হবে না।
এই পাথরটি ছানা করার পর আইআইটি হায়দ্রাবাদের বৈজ্ঞানিক দল এর গहन পরীক্ষা করেছে। এই পরীক্ষায় আবহাওয়া, সময় ও পরিবেশের প্রভাব সহন করার ক্ষমতার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। শক্তি, আর্দ্রতা শোষণের হার, ঘর্ষণ ক্ষমতা এবং তাপমাত্রা সহন করার ক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়েছে। বৈজ্ঞানিকরা সকল পরীক্ষার পর এই মার্বেলকে রাম দরবারের মূর্তির জন্য উপযুক্ত ঘোষণা করেছেন।
মূর্তির গঠন ও পরিমাপ
সত্য নারায়ণ পান্ডে জানিয়েছেন, এই রাম দরবারের মূর্তি মোট সাত ফুট উঁচু হবে, যেখানে রাম সিংহাসনে বিরাজমান থাকবেন। হনুমান ও ভরতের মূর্তি বসে থাকার ভঙ্গীতে, যাদের উচ্চতা প্রায় আড়াই ফুট। অন্যদিকে লক্ষ্মণ ও শত্রুঘ্ন দাঁড়িয়ে থাকার ভঙ্গীতে, যাদের উচ্চতা তিন তিন ফুট পরিমাপ করা হয়েছে। এই বিশাল ও ভব্য মূর্তির প্রতিটি বিস্তার অত্যন্ত সতর্কতা ও শিল্পকৌশলের প্রতীক।
মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বিশেষ অবদান
রাম মন্দির নির্মাণ কাজের এই গুরুত্বপূর্ণ উৎসবে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নাম অযোধ্যার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ৪ মে, ২০২৫ তারিখে মুখ্যমন্ত্রী রাম মন্দিরের প্রথম তলায় রাম দরবার সহ অন্যান্য মূর্তির প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানের প্রধান যজ্ঞা হবেন। তিনি নিজেই রাম দরবারের মূর্তির আবরণ সরাবেন এবং নেত্রমিলনের বিধি সম্পন্ন করবেন। বিশেষ কথা হল, এই অনুষ্ঠান মুখ্যমন্ত্রী যোগীর ৫৩ তম জন্মদিনের দিন হচ্ছে, যা তিনি অযোধ্যাতেই উদযাপন করবেন।
সিএম যোগী এই উপলক্ষে রাম মন্দিরে প্রাণ প্রতিষ্ঠা ছাড়াও হনুমানগড়ীতে দর্শন-পূজন করবেন এবং মণিরাম দাসের ছাউনিতে মহন্ত নৃত্যগোপাল দাসের জন্মোৎসব অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করবেন। এছাড়াও, সরযু উৎসবের উদ্বোধনও মুখ্যমন্ত্রী করবেন।
সুরক্ষা ব্যবস্থা ও প্রশাসনিক প্রস্তুতি
মন্দির परिसरের सुरक्षा নিয়ে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। এসপি সুরক্ষা बलरामाचारी দুবে এবং মন্দির নির্মাণ প্রভারী গোপাল রাও মন্দিরের ব্যবস্থার निरीक्षण করেছেন। এসপি সুরক্ষা জানিয়েছেন, মন্দিরের সুরক্ষা সম্পূর্ণ অভেদ্য এবং এতে এটিএস, সিপিএফ, পিএসি এবং সিভিল পুলিশের জওয়ান নিয়োজিত আছেন। প্রশাসন ম্যাজিস্ট্রেটদেরও ডিউটি দিয়ে সমগ্র এলাকার নজরদারি নিশ্চিত করেছে।
রাম দরবারের মহিমা ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব
মহন্ত মিথিলেশ নন্দিনী শরণ মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের প্রশংসা করে বলেছেন, তার এই পদক্ষেপ অযোধ্যার আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। তিনি আরও জানিয়েছেন, আজ অযোধ্যার পরিচয় শুধুমাত্র ধর্মীয় স্থান হিসেবে নয়, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবেও হচ্ছে। গুগলে অযোধ্যার সন্ধান প্রথমে দীপোৎসবের ভব্য দৃশ্য হিসেবে মিলবে, যা এলাকার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে প্রতিফলিত করে।
আঞ্জন্য সেবা সংস্থার সভাপতি শশীকান্ত দাস বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ অযোধ্যার গৌরব ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনিই রামকে ভব্য মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি রামের তিলক লাগিয়ে ত্রেতাযুগের পরম্পরাকে জীবন্ত করে তুলেছেন।
জেলাশাসক নীখিল টিকারাম ফুন্ডে জানিয়েছেন, প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানের পরও রাম দরবার ও পরকোটের ছয়টি অন্যান্য মন্দিরে এখনও সাধারণ ভক্তদের প্রবেশের অনুমতি নেই। ৭ মে হতে যাওয়া রাম মন্দির ট্রাস্টের বৈঠকে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে যে কখন থেকে সাধারণ ভক্তরাও রাম দরবারের দর্শন করতে পারবেন।