অবসর পরিকল্পনায় বৈচিত্র্যের অভাব: ভারতীয়দের আর্থিক অনিশ্চয়তা

🎧 Listen in Audio
0:00

ভারতে অধিকাংশ মানুষ এখনও অবসরের পরিকল্পনায় বৈচিত্র্য আনছে না। গ্রান্ট থর্নটন ভারতের একটি সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে যে ৮৩% লোক ঐতিহ্যগত পরিকল্পনা যেমন ইপিএফ, গ্র্যাচুইটি এবং এনপিএসের উপর নির্ভরশীল।

ব্যবসায়িক সংবাদ: ভারতে অবসরের পরিকল্পনা করা এখনও অনেকের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে রয়েছে। আর্থিক সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়ার ফলে শুধুমাত্র ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে না, বরং অর্থনৈতিক চাপও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি গ্রান্ট থর্নটন ভারত কর্তৃক পরিচালিত একটি জরিপে এই তথ্য উন্মোচিত হয়েছে যে দেশে অবসর পরিকল্পনায় প্রচুর ঘাটতি রয়েছে।

জরিপে দেখা গেছে যে ৮৩% ভারতীয় এখনও শুধুমাত্র ঐতিহ্যগত বিনিয়োগ পরিকল্পনা যেমন ইপিএফ, গ্র্যাচুইটি এবং এনপিএসের উপর নির্ভরশীল। অন্যদিকে, প্রায় অর্ধেকের বেশি মানুষ এমন একটি পেনশনের আশা করে যা তাদের প্রকৃত অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ করতে পারবে না।

ঐতিহ্যগত পরিকল্পনার উপর নির্ভরতার কারণে অবসরের প্রস্তুতি অসম্পূর্ণ

গ্রান্ট থর্নটনের এই জরিপে দেখা গেছে যে ভারতের অধিকাংশ কর্মচারী এবং সাধারণ মানুষ তাদের অবসরের জন্য কেবলমাত্র কিছু সীমিত বিকল্পের উপরই নির্ভর করছে। ইপিএফ, গ্র্যাচুইটি এবং এনপিএস এর মতো পরিকল্পনাগুলি আর্থিক সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তবে এগুলির উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করা ঝুঁকিপূর্ণও হতে পারে। জরিপে ৮৩% অংশগ্রহণকারী এই পরিকল্পনাগুলিকে তাদের প্রধান বিনিয়োগ বিকল্প হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিনিয়োগের বৈচিত্র্য না থাকার ফলে দীর্ঘমেয়াদী আর্থিক স্থিরতা বিপন্ন হতে পারে। যদি শুধুমাত্র এক বা দুটি উৎসের উপর নির্ভরতা বজায় থাকে, তাহলে বাজারের উত্থান-পতন বা নীতিগত পরিবর্তনের ফলে আর্থিক সুরক্ষার উপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। এই ক্ষেত্রে অবসরের জন্য নতুন এবং বৈচিত্র্যময় বিনিয়োগ পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

পেনশনের অসম্ভব আশা এবং আর্থিক সচেতনতার অভাব

জরিপে এটাও দেখা গেছে যে ৫৫% মানুষ মনে করে যে অবসরের পর তাদের প্রতি মাসে ১ লক্ষ টাকার বেশি পেনশন পাওয়া যাবে। তবে, এই লক্ষ্য অনুযায়ী বিনিয়োগ করতে পারছে মাত্র ১১% লোক। এই সংখ্যা স্পষ্ট করে দেখায় যে অধিকাংশ লোকের স্বপ্ন এবং তাদের আর্থিক বাস্তবতার মধ্যে একটি বড় ব্যবধান রয়েছে।

আর্থিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ভারসাম্যহীনতার প্রধান কারণ হল সঠিক আর্থিক পরিকল্পনা এবং সচেতনতার অভাব। সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া পেনশনের আশা করা কোনো প্রতারণার চেয়ে কম নয়। এই কারণেই লোকদের পরামর্শ দেওয়া হয় যে তারা তাদের অবসর তহবিল বিভিন্ন মাধ্যমে বাড়াতে এবং নিয়মিতভাবে পর্যালোচনা করতে থাকবে।

বিনিয়োগে কম অবদান এবং বাজেটের চ্যালেঞ্জ

জরিপে এই তথ্যও উঠে এসেছে যে প্রায় ৭৪% লোক তাদের মাসিক আয়ের মাত্র ১% থেকে ১৫% অবসর তহবিলে বিনিয়োগ করছে। এর অর্থ হল অধিকাংশ লোক তাদের সঞ্চয়কে অগ্রাধিকার দিতে পারছে না। অর্থনৈতিক বাধা, দৈনন্দিন ব্যয় এবং আর্থিক অগ্রাধিকার এই ঘাটতির প্রধান কারণ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অবসর তহবিলে কম অবদানের ফলে ভবিষ্যতে গুরুতর অর্থনৈতিক সংকট হতে পারে, বিশেষ করে যখন আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং চিকিৎসা ব্যয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিনিয়োগ শুরু করা উচিত এবং প্রতি বছর তাদের সঞ্চয় বাড়ানোর চেষ্টা করা উচিত।

যুবসমাজের মধ্যে বিনিয়োগের প্রতি পরিবর্তিত দৃষ্টিভঙ্গি

জরিপে এটাও দেখা গেছে যে যুবসমাজের মধ্যে বিনিয়োগের প্রতি চিন্তাভাবনা পরিবর্তন হচ্ছে। ২৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ৩১% যুবক উচ্চ লাভের জন্য অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ বিকল্প গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত। এটি একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত কারণ যুব সমাজ এখন দীর্ঘমেয়াদী নিরাপদ এবং লাভজনক বিনিয়োগ করতে চায়।

এছাড়াও, যুবসমাজের নতুন চিন্তাভাবনা এটাও দেখায় যে তারা কর্ম-জীবন ভারসাম্য এবং দ্রুত অবসরকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। জরিপ অনুসারে, ৪৩% যুবক ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সে অবসর নিতে চায়, যেখানে সামগ্রিকভাবে ৫৬% লোক ৫৫ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে অবসরের পরিকল্পনা করছে।

পেনশন গণনার ব্যাপারে সচেতনতার অভাব

জরিপে এটাও উঠে এসেছে যে পেনশন গণনা এবং তার সূত্র নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা কম। ৫২% অংশগ্রহণকারীর পেনশন গণনার আংশিক জ্ঞান আছে, যেখানে ৩০% লোকের এই বিষয়ে কোনো জ্ঞান নেই। এটি স্পষ্ট করে যে শুধুমাত্র বিনিয়োগের দিকে নয় বরং পেনশন পরিকল্পনার বোঝাপড়াও উন্নত করার প্রয়োজন।

বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?

আর্থিক পরামর্শদাতাদের মতে, অবসর পরিকল্পনায় বৈচিত্র্য আনা প্রয়োজন। শুধুমাত্র ইপিএফ, গ্র্যাচুইটি এবং এনপিএসের উপর নির্ভর করা সঠিক কৌশল নয়। মিউচুয়াল ফান্ড, শেয়ার বাজার, পাবলিক প্রোভিডেন্ট ফান্ড (পিপিএফ), রিয়েল এস্টেট এবং অন্যান্য বিকল্প বিনিয়োগ মাধ্যমের দিকেও নজর দেওয়া উচিত।

এছাড়াও, নিয়মিত আর্থিক শিক্ষা এবং সচেতনতা কর্মসূচির মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে সঠিক বিনিয়োগ সম্পর্কে নির্দেশনা পাওয়া উচিত, যাতে তারা তাদের আর্থিক লক্ষ্য সঠিকভাবে বুঝে তার পুরো সুবিধা নিতে পারে।

Leave a comment