হরিয়ানার মডেল শীতল উর্ফে সিম্মি চৌধুরীর হত্যাকাণ্ডে গোটা অঞ্চলে সন্ত্রাস ছড়িয়ে পড়েছে। তাকে গলা কেটে বর্বরভাবে হত্যা করা হয় এবং পরে তার মৃতদেহ দিল্লি প্যারালাল নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।
সিম্মি চৌধুরী হত্যা মামলা: হরিয়ানার সংগীত জগতের সাথে যুক্ত একজন দুর্ভাগ্যবান ও সন্ত্রাসজনক খবরে গোটা রাজ্য কেঁপে উঠেছে। ২৪ বছর বয়সী মডেল এবং হরিয়ানভি অ্যালবামে অভিনয়কারী শীতল উর্ফে সিম্মি চৌধুরীকে বর্বরভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে ছিলেন অন্য কেউ নয়, তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু সুনীল।
সে শুধুমাত্র সিম্মির গলা কেটেই থেমে থাকে নি, বরং তার মৃতদেহ দিল্লি প্যারালাল নদীতে ফেলে দেয় যাতে তা একটা দুর্ঘটনা মনে হয়। এখন এই ঘটনার পেছনে প্রেম, প্রতারণা এবং ক্রোধের সেই তিক্ত সত্য উঠে আসছে, যা সিম্মির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ।
স্বপ্নের সাজানো দুনিয়া, যেখানে শেষ পর্যন্ত মৃত্যু এসে পৌঁছায়
সিম্মি চৌধুরী একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী মডেল ছিলেন, যিনি হরিয়ানভি গানে অভিনয় করে নিজের পরিচয় তৈরি করছিলেন। তিনি পানিপথের সতকরতার কলোনিতে তার বোন নেহার সাথে থাকতেন এবং প্রায়ই শুটিং-এর জন্য বাইরে যেতেন। ১৪ জুন তিনিও একটি গানের শুটিং-এর জন্য মাতলৌডা থানা এলাকার আহার গ্রামে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেদিন সিম্মি আর বাড়ি ফিরতে পারেননি।
যখন সিম্মি রাত পর্যন্ত বাড়ি ফেরেননি, তখন তার বোন মাতলৌডা থানায় একটি নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং পরের দিন সোনিপতের খরখৌদা থানা এলাকার খান্ডা গ্রামের কাছে এনসিআর ওয়াটার চ্যানেলে একজন নারীর মৃতদেহ পাওয়া যায়, যার গলা এবং হাতে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। অল্প সময়ের মধ্যেই মৃতদেহটি শীতল উর্ফে সিম্মির হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
হত্যার পিছনে রহস্য: প্রেম, প্রতারণা এবং উত্তেজনা
পুলিশ তদন্তে জানা যায় যে সিম্মির হত্যা করেছে তার পরিচিত সুনীল। সুনীল পানিপথের ইসরাণার বাসিন্দা এবং দুই সন্তানের বাবা। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায় যে সুনীল সিম্মির উপর বিয়ে করার চাপ প্রয়োগ করছিল, যখন সিম্মি সম্প্রতি জেনেছিল যে সুনীল ইতিমধ্যেই বিবাহিত। এই তথ্য প্রকাশের পর সিম্মি তার থেকে দূরত্ব বজায় রাখা শুরু করে, যা সুনীলকে মেনে নেওয়া কঠিন হয়।
১৪ জুন রাত প্রায় ১১ টায় সিম্মি তার বোন নেহাকে ভিডিও কল করে এবং বলে যে সুনীল তার সাথে মারধর করছে। কয়েক মিনিট পর কল কেটে যায় এবং ফোন বন্ধ হয়ে যায়। নেহা শেষবার তার বোনের কণ্ঠস্বর শুনেছিল এই ঘটনার পর।
হত্যাকে দুর্ঘটনা বলে দেখানোর চেষ্টা
হত্যার পর সুনীল চালাকি করে তা দুর্ঘটনা বলে দেখানোর পরিকল্পনা করে। সে তার আই-২০ গাড়িটিও নদীতে ফেলে দেয়, যাতে তা গাড়ির দুর্ঘটনা মনে হয়। সে নিজে ভেসে বেরিয়ে আসে এবং নিজেকে জিটি রোড সিওয়াহ-স্থিত একটি হাসপাতালে ভর্তি করে। কিন্তু যখন পুলিশ কঠোরভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে, তখন তার মিথ্যা কথাগুলি ধরা পড়তে শুরু করে।
পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এবং ঘটনাস্থলের তথ্য অনুযায়ী, সিম্মির গলা কেটে হত্যা করা হয়েছিল। তার শরীরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। হত্যার পরে প্রমাণ লুকানোর জন্য ওয়াটার চ্যানেল নির্বাচন করা হয়।
সিম্মি ছিলেন একজন মাও, কিন্তু জীবনযাপন করছিলেন আলাদাভাবে
পরিবারের সূত্রে জানা গেছে, সিম্মি বিবাহিত ছিলেন এবং তার একজন ছোট ছেলেও আছে, যে তার স্বামীর সাথে থাকে। কিছুদিন ধরে সে তার স্বামীর থেকে আলাদা থাকছিল এবং মডেলিং-এ কর্মজীবন গড়ে তুলছিল। এসময় তার সাথে সুনীলের বন্ধুত্ব হয়। পরিজনরা অভিযোগ করেছেন যে সুনীল তার উপর বিয়ের চাপ প্রয়োগ করছিল, যা সিম্মি প্রত্যাখ্যান করেছিল। এই কারণেই ক্ষিপ্ত হয়ে সুনীল এই নৃশংস কাজ করেছে।
সোমবার পানিপথের কিশোনপুর শ্মশানে সিম্মির শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। এসময় গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে এবং পরিজনরা চিৎকার করে অভিযুক্তের জন্য ফাঁসির দাবী জানায়। ডিএসপি সতীশ কুমার জানিয়েছেন, অভিযুক্ত সুনীলকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ রিমান্ডে নেওয়া হবে যাতে জিজ্ঞাসাবাদ করে হত্যার পিছনের সম্পূর্ণ সত্য উদঘাটন করা যায়।