এয়ার ইন্ডিয়ার দুর্ঘটনার পর টাটা সন্সের চেয়ারম্যান এন. চন্দ্রশেখরন এটিকে তার কর্মজীবনের সবচেয়ে বেদনাদায়ক সংকট বলে অভিহিত করেছেন এবং কর্মীদের কঠিন এই সময়ে দৃঢ় থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
নয়াদিল্লি: ১২ জুন ২০২৫-এ সংঘটিত এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনা শুধুমাত্র দেশ নয়, পুরো বিশ্বকেই তীব্রভাবে কাঁপিয়ে তুলেছে। লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার ড্রিমলাইনার বিমানের এই দুর্ঘটনায় ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এই গভীর শোকের মুহূর্তে টাটা সন্স ও এয়ার ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরন কর্মীদের উদ্দেশে এক আবেগঘন আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এটিকে তার পুরো কর্মজীবনের সবচেয়ে বেদনাদায়ক মুহূর্ত বলে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, আমাদের এই বেদনাকে কাটিয়ে উঠে ঐক্যবদ্ধভাবে ভবিষ্যতের একটি নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য এয়ারলাইন গড়ে তুলতে হবে।
সবচেয়ে কঠিন সময়ে ঐক্যবদ্ধতার প্রয়োজন
গুড়গাঁও-স্থিত এয়ার ইন্ডিয়ার প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত একটি বিশেষ বৈঠকে এন চন্দ্রশেখরন প্রায় ৭০০ কর্মী ও নেতৃত্ব দলের সাথে মতবিনিময় করেছেন। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, এই মুহূর্তটি যতটা বেদনাদায়ক, ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের এখন পিছনে ফিরে যাওয়ার পরিবর্তে দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে হবে এবং এই সংকটকে এক নতুন সংকল্পে রূপান্তরিত করতে হবে। তিনি বলেছেন, এই দুর্ঘটনা শুধুমাত্র একটি সংস্থা হিসেবে আমাদের পরীক্ষা নয়, বরং একটি মানবিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের আত্মারও পরীক্ষা।
তদন্তের অপেক্ষা, কিন্তু প্রতিশ্রুতি অটুট
চন্দ্রশেখরন এই উপলক্ষে স্পষ্ট করে বলেছেন, আমাদের যেকোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর আগে তদন্ত সম্পন্ন হওয়ার অপেক্ষা করতে হবে। তিনি বলেছেন, দুর্ঘটনার কারণ নির্ণয় করা অত্যন্ত জরুরি, কিন্তু তার আগে আমাদের কাজে পূর্ণ নিষ্ঠা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে। তিনি কর্মীদের আশ্বস্ত করেছেন যে, এই দুঃখজনক ঘটনার তল্লাশির জন্য সর্বোচ্চ তদন্ত প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে।
মানবিক মূল্যবোধকে অগ্রাধিকার
চেয়ারম্যান এও বলেছেন, এখন এই ভাবার সময় নয় যে, কোম্পানির পরবর্তী বাণিজ্যিক পদক্ষেপ কী হবে। বরং এটি এমন একটি সময় যখন আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কতটা সংবেদনশীলতা ও মানবতার সাথে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারি তা দেখানোর। তিনি বলেছেন, যারা তাদের প্রিয়জন হারিয়েছেন, তাদের আমরা কখনো একা ছাড়ব না। তাদের সর্বদা এয়ার ইন্ডিয়া পরিবারের সদস্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে এবং সর্বাত্মক সহায়তা প্রদান করা হবে।
আপৎকালীন কেন্দ্রগুলির পরিদর্শন
এই বিশেষ বৈঠকের পর এন চন্দ্রশেখরন এয়ার ইন্ডিয়ার আপৎকালীন কমান্ড সেন্টার, সমন্বিত পরিচালনা কমান্ড সেন্টার এবং গ্রাহক সহায়তা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। তিনি কর্মীদের সাথে কথা বলে তাদের অনুভূতি শুনেছেন এবং বলেছেন, সংকটের এই মুহূর্তে দলটি যে সংযম ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করেছে তা প্রশংসনীয়। তিনি বলেছেন, এটি হতাশায় ডুবে থাকার সময় নয়, বরং সংকল্প গ্রহণ করার সময় যে আমরা একটি নতুন ও নিরাপদ এয়ারলাইন গঠন করব।
দুর্ঘটনার শিকারদের পরিবারের মতো দেখতে হবে
এন চন্দ্রশেখরন তার বক্তৃতায় বারবার এই কথাটি উল্লেখ করেছেন যে, দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের এখন চিরকালের জন্য এয়ার ইন্ডিয়া পরিবারের সদস্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে। তিনি বলেছেন, তাদের ক্ষতির কোনও ক্ষতিপূরণ সম্ভব নয়, কিন্তু আমাদের চেষ্টা থাকা উচিত যে, আমরা তাদের পরিজনদের সর্বাত্মক সাহায্য করব এবং তাদের একা বোধ করতে দেব না। তিনি এও বলেছেন যে, এই মানসিক সহায়তা শুধুমাত্র কথায় সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়, বরং কাজেও প্রতিফলিত হতে হবে।
কর্মীদের প্রতি আহ্বান
চন্দ্রশেখরন কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এয়ার ইন্ডিয়াকে পুনরায় দাঁড় করানোর দায়িত্ব আমাদের সবার। তিনি বলেছেন, এটি এমন একটি সুযোগ যেখানে আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি, সততা ও সংবেদনশীলতার মাধ্যমে পার্থক্য তৈরি করতে পারি। তিনি কর্মীদের অনুরোধ করেছেন যেন তারা ভয় বা অনিশ্চয়তায় জীবন যাপন না করে, বরং সাহস ও সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যান।
আবেগপ্রবণ নেতৃত্বের ঝলক
এন চন্দ্রশেখরনের এই বার্তা শুধুমাত্র একটি কর্পোরেট নেতৃত্বের দৃষ্টান্ত নয়, বরং এটিও দেখায় যে, একজন সংবেদনশীল নেতা কীভাবে সংকটের সময় তার দলকে মানসিক সাহস দিতে পারেন। তিনি এও বলেছেন, এখন এয়ার ইন্ডিয়াকে শুধুমাত্র একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুনর্গঠন করতে হবে না, বরং এটিকে এমন একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে যা প্রতিটি যাত্রীকে নিরাপত্তা, আস্থা ও সহানুভূতির অনুভূতি দিতে পারে।