‘সিতারে জমিন পার’ আমির খানের আবেগঘন প্রত্যাবর্তন, যা সমাজকে একটা স্পর্শকাতর বার্তা দেয়। ছবিটি দর্শকদের অনুপ্রাণিত করে এবং পুরনো আমিরের স্মৃতি ফিরিয়ে আনে।
সিতারে জমিন পার রিভিউ: বলিউডে যখন আবেগ, বার্তা এবং চলচ্চিত্রের আন্তরিকতার কথা আসে, তখন সবার আগে একটা নাম মনে পড়ে – আমির খান। আর এখন যখন তাঁর নতুন ছবি ‘সিতারে জমিন পার’ থিয়েটারে এসেছে, দর্শকদের আবেগ আবারও আমিরের অভিনয় এবং স্পর্শকাতর গল্পের সাথে জড়িত হয়েছে। ৮ বছর পর কোনও ছবিতে আমিরের এমন একটা করিশ্মা দেখা গেছে, যা দেখে দর্শকরা বলছেন – ‘ফিরে এসেছে পুরনো আমির খান।’
পুরনো আমিরের প্রত্যাবর্তন নাকি নতুন আমিরের পরিপক্কতা?
‘সিতারে জমিন পার’ একটি ক্রীড়াভিত্তিক নাটক, যা আবেগ, অনুপ্রেরণা এবং সামাজিক বার্তায় পরিপূর্ণ। যদিও এটি বিদেশি ছবি ‘চ্যাম্পিয়ন’-এর অফিসিয়াল রিমেক, তবে এটি দেখার পর কেউই এ কথা বলা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারবে না যে এই ছবিটি আত্মার সাথে তৈরি হয়েছে। ছবিটি পরিচালনা করেছেন আর এস প্রসন্ন, যিনি তাঁর স্পর্শকাতরতা এবং পরিচালনার সরলতার মাধ্যমে এই গল্পটিকে ভারতীয় আবেগে রঙিন করেছেন।
আমির খান এই ছবিতে শুধু একজন অভিনেতা নন, বরং একজন বার্তাবাহক হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন। তাঁর স্ক্রিন প্রেজেন্স, আবেগময় অভিব্যক্তি এবং সংলাপ প্রদান আবার সেই জাদু নিয়ে এসেছে, যা দেখে দর্শকদের ‘তারে জমিন পার’, ‘লগান’ এবং ‘দঙ্গল’-এর কথা মনে পড়ে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রশংসার বৃষ্টি
ছবির প্রথম শো শেষ হওয়ার সাথে সাথেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘#SitaareZameenPar’ ট্রেন্ড করতে শুরু করে। একজন ইউজার লিখেছেন, ‘ছবিটি হৃদয় ছুঁয়ে যায়, আমির খান এই ভূমিকাকে আত্মার সাথে বাস করেছেন।’ অন্যদিকে একজন নারী দর্শকের ভিডিও ভাইরাল হচ্ছে যেখানে তিনি বলছেন, ‘একজন নারীর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে এই ছবিটি খুবই আবেগঘন।’ অনেক দর্শকই এই বিষয়ে জোর দিয়েছেন যে আমিরের আন্তরিকতা ছবির আত্মা।
১০ জন নতুন মুখও এই ছবিতে অভিনয় করেছেন, যারা স্ক্রিনে একেবারে বাস্তবসম্মত লাগছে। মনে হচ্ছে যেন কোনও ডকুমেন্টারি দেখা হচ্ছে। এই অভিনেতাদের সহজত্ব এবং আমিরের সাথে তাদের মিল দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়ে যাচ্ছে।
আমিরের ব্যর্থতা থেকে সাফল্যের যাত্রা
গত কয়েক বছরে আমির খানের কর্মজীবন উথাল-পাতালে ভরা ছিল। ২০১৭ সালের পর থেকে কোনও ছবিই তাঁকে সেই মর্যাদা দিতে পারেনি যা আমিরের কাছ থেকে আশা করা হয়। ‘ঠগস অফ হিন্দোস্তান’ (২০১৮) এবং ‘লাল সিং চড্ডা’ (২০২২) জাতীয় ছবি বক্স অফিসে তীব্র ব্যর্থতা এবং সমালোচনার শিকার হয়েছে। আমির এই সময় নিজেকে দীর্ঘ বিরতি দিয়েছিলেন এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন।
এই বিরতির পর ‘সিতারে জমিন পার’-এর মাধ্যমে তাঁর প্রত্যাবর্তন শুধু পেশাদারী নয়, ব্যক্তিগতভাবেও একটা পুনর্জাগরণের মতো। ছবির প্রতিটি ফ্রেমে আমিরের বোধ, অভিজ্ঞতা এবং স্পর্শকাতরতা প্রতিফলিত হয়েছে।
কী আয়ের রেকর্ড ভাঙতে পারবে ছবিটি?
এখন প্রশ্ন উঠছে – এই ছবিটি কি বক্স অফিসে আগের মতো সাফল্য পেতে পারবে? প্রাথমিক পর্যালোচনা এবং দর্শকদের প্রতিক্রিয়া দেখে, এর সম্ভাবনা সম্পূর্ণ রয়েছে। আমির খানের ছবিতে দীর্ঘস্থায়ী সাফল্যের একটা শক্তি থাকে, এবং ‘সিতারে জমিন পার’ও সেই শ্রেণিতে পড়ে যা মুখে মুখে প্রচারের মাধ্যমে দীর্ঘদিন চলবে।
যদিও ছবির কিছু সমালোচক এও বলছেন যে এর গতি কিছুটা ধীর এবং গল্প আগে থেকেই পরিচিত মনে হয়। কিন্তু আমির খানের অভিনয় এবং ছবির আবেগময় স্পর্শ এই দুর্বলতাকে ছাপিয়ে যাচ্ছে।
পরিচালকের সরলতা এবং গল্পের প্রভাব
আর এস প্রসন্ন এর আগেও ‘শুভ মঙ্গল সাধন’ জাতীয় স্পর্শকাতর ছবিতে তাঁর দক্ষতা প্রদর্শন করেছেন। ‘সিতারে জমিন পার’-এ তিনি আবারও দর্শকদের হৃদয়ে স্থান পেয়েছে এমন গল্প বলেছেন। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর, ক্যামেরা ওয়ার্ক এবং লোকেশন এটিকে আরও বাস্তবসম্মত করে তুলেছে।
ছবিটি শুধুমাত্র মনোরঞ্জনই দেয় না, বরং একটা গভীর বার্তাও দেয় – যে প্রত্যেক মানুষের মধ্যে একজন ‘চ্যাম্পিয়ন’ থাকে, শুধুমাত্র তাকে চিনতে এবং উৎসাহিত করার প্রয়োজন।