নয়রা বন্দ্যোপাধ্যায়: সাউথের ছবির অফার প্রত্যাখ্যান ও নিজের পথ তৈরি

নয়রা বন্দ্যোপাধ্যায়: সাউথের ছবির অফার প্রত্যাখ্যান ও নিজের পথ তৈরি
সর্বশেষ আপডেট: 29-04-2025

নয়রা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, পরিবারে কোনও আইনজীবী না থাকার কারণেই তিনি আইন পড়াশোনা করেছিলেন। এছাড়া, তার নাচের প্রতিও ছিল গভীর আগ্রহ। কাস্টিং ডিরেক্টররা তাকে প্রায়ই সাউথের ছবিতে উপযুক্ত বলে মনে করতেন, কিন্তু তিনি সে সব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

এন্টারটেইনমেন্ট: টিভি জগৎ থেকে শুরু করে সাউথের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি পর্যন্ত অভিনয়ের মাধ্যমে পরিচিত নয়রা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তাঁর জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক উন্মোচন করেছেন। তাঁর এই যাত্রাপথে অনেক উত্থান-পতন ছিল, যার থেকে তিনি অনেক কিছু শিখেছেন এবং আজ তিনি এমন এক স্থানে রয়েছেন যেখানে পৌঁছানোর স্বপ্ন দেখে প্রত্যেকেই। তাঁর গল্প শুধু একজন অভিনেত্রী হওয়ার নয়, বরং নিজের স্বপ্ন এবং পরিবারের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার। আসুন জেনে নেই নয়রার যাত্রা সম্পর্কে এবং কীভাবে তিনি সাউথের ছবির অফার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং বাবা-মার বিরোধিতা সত্ত্বেও নিজের পরিচয় তৈরি করেছিলেন।

আইন পড়াশোনা এবং পরিবারের জন্য ত্যাগ

নয়রার শৈশব কেটেছে একটি সাধারণ পরিবারে। তাঁর পরিবার সবসময় তাকে একজন সফল এবং সম্মানিত পেশাদার হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অনুপ্রাণিত করত। এই কারণেই, নয়রা প্রথমে আইন পড়াশোনা করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি আইনের ডিগ্রি লাভের জন্য ভর্তি হন কারণ তাঁর পরিবারে কোনও আইনজীবী ছিলেন না এবং তাঁর বাবা-মা স্বপ্ন দেখতেন তাঁদের মেয়ে আইন ব্যবসায় নিজের নাম করবে।

কিন্তু, নয়রার মন কখনও আইনে জমেনি। তাঁর মন সবসময় ছিল কলা এবং পারফর্মেন্সের দিকে। তার নাচের প্রতি ছিল আগ্রহ এবং সে একজন নর্তকী হতে চাইত। তার স্বপ্ন ছিল একদিন বৃহৎ মঞ্চে নৃত্য করবে এবং তার কলা দিয়ে বিশ্বকে মুগ্ধ করবে। কিন্তু যেহেতু পরিবারের চাপ ছিল, তাই তিনি আইন পড়াশোনা করে যান, এবং মাঝে মাঝে তিনি তার স্বপ্নকে দমিয়ে রাখতেন।

নাচ এবং ফ্যাশন শো: নয়রার নতুন আগ্রহ

কলেজে পড়ার সময় নয়রার অভিনয় এবং নাচের প্রতি আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। তিনি ফ্যাশন শো এবং নাচের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ শুরু করেন, যেখানে তিনি তার প্রতিভার প্রদর্শন করার সুযোগ পান। তবে, নয়রার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল নাচ এবং সে কোনওভাবেই অভিনেত্রী হওয়ার কথা ভাবত না।

একদিন, তাকে এক ফ্যাশন শোতে অংশগ্রহণের সুযোগ মেলে, যেখানে তিনি তার নাচের দক্ষতা প্রদর্শন করেন। সে জানত তার মন নাচ এবং পারফর্মেন্সেই আছে, কিন্তু কে জানত এই পদক্ষেপই তাকে অভিনয়ের জগতে টেনে নিয়ে যাবে। এই সময় নয়রার জীবনে একটি বড় মোড় আসে যখন তাকে সাউথের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি থেকে অফার আসতে শুরু করে।

সাউথের ছবির অফারে বাবা-মার প্রতিক্রিয়া

নয়রা নিজেই এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, কীভাবে কাস্টিং ডিরেক্টররা তাকে সাউথের ছবির জন্য উপযুক্ত বলে মনে করতেন। তাঁর মুখ এবং দেহ সাউথের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির জন্য আদর্শ বলে মনে করা হত। তিনি খুব পাতলা ছিলেন না, কিন্তু তাঁর মুখে ছিল একটা বিশেষ আলো। কাস্টিং ডিরেক্টররা বারবার তাকে বলেছিলেন যে, তাঁর লুক সাউথ ইন্ডিয়ান ছবির জন্য একেবারেই উপযুক্ত।

নয়রাও সাউথের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির কথা শুনেছিলেন, কিন্তু তাঁর তেমন কিছু জানা ছিল না। তিনি কখনও সাউথের ছবি দেখেননি, এবং এ सब তার কাছে একটা নতুন জগৎ ছিল। যখন একজন কাস্টিং ডিরেক্টর তাকে শ্রীদেবী এবং অন্যান্য दिग्गज অভিনেতাদের উদাহরণ দিয়ে বললেন যে, সাউথের ছবিও খুব ভালো হয়, তখন নয়রা স্পষ্ট করে বলে দিলেন যে তিনি এই দিকে যেতে চান না। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, তাঁর পথ অন্যত্র।

বাবা-মার বিরোধিতা সত্ত্বেও অভিনেত্রী হওয়ার সিদ্ধান্ত

নয়রা জানিয়েছেন যে, যখন তিনি তাঁর বাবা-মাকে সাউথের ছবির অফারের কথা বলেছিলেন, তখন তাঁর বাবা তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। অন্যদিকে, তাঁর মা তাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, সে পড়াশোনার দিকে মনোযোগ দিক এবং চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে আসার কথা ভুলে যাক। কিন্তু নয়রা তার ইচ্ছাকে অস্বীকার করে রচনাশিল্পী ক্ষেত্রে নিজের পরিচয় গড়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং তারপর সংস্কৃত টিভি শো ‘কাদম্বরী’ দিয়ে তার কর্মজীবন শুরু করেন।

টিভি শো ‘কাদম্বরী’ দিয়ে কর্মজীবনের সূচনা

নয়রা তার অভিনয় জীবনের সূচনা করেছিলেন টিভি শো ‘কাদম্বরী’ দিয়ে। এই শোতে তিনি সংস্কৃতের অসাধারণ ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন, এবং এই শো তার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হয়ে ওঠে। ‘কাদম্বরী’ নয়রাকে টিভি ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিত করে তোলে এবং তাকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করে। তাঁর ভূমিকা দর্শকদের মন জয় করে এবং এর পর তাকে আরও অনেক টিভি শোতে কাজ করার সুযোগ মেলে। এর সাথে সাথে, নয়রা সাউথের ছবিতেও অভিনয় করার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁর কর্মজীবন ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় এবং আজ তিনি একজন সফল অভিনেত্রী।

নয়রার জীবন থেকে আমরা কী শিখতে পারি?

নয়রার গল্প শেখায় যে, কখনও নিজের স্বপ্ন অনুসরণ করতে লজ্জা বা সংকোচ করা উচিত নয়। যদি আপনি কিছু করতে চান, তাহলে নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন যে, সেই বিষয়টি কি আপনাকে আনন্দ দেয় এবং কি তা আপনার অন্তরের কাছাকাছি। নয়রা প্রমাণ করেছেন যে, যতক্ষণ আপনি আপনার স্বপ্নের পিছনে ছুটে চলছেন, কোনও প্রতিবন্ধকতা বড় নয়।

তাঁর গল্প এটাও দেখায় যে, পরিবারের ভালোবাসা এবং সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ হলেও কখনও কখনও আমাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যদি নয়রা পরিবারের চাপের কারণে তার স্বপ্ন ত্যাগ করে দিতেন, তাহলে হয়তো আজ তিনি এই স্থানে থাকতেন না।

Leave a comment