ট্রাম্প প্রশাসনের চূড়ান্ত বাণিজ্য প্রস্তাবের আহ্বান: ট্যারিফের আগে দ্রুত সিদ্ধান্তের চেষ্টা

ট্রাম্প প্রশাসনের চূড়ান্ত বাণিজ্য প্রস্তাবের আহ্বান: ট্যারিফের আগে দ্রুত সিদ্ধান্তের চেষ্টা
সর্বশেষ আপডেট: 03-06-2025

ট্রাম্প প্রশাসন অন্যান্য দেশগুলিকে বলেছে যে তারা বুধবারের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনায় তাদের সর্বোত্তম প্রস্তাব উপস্থাপন করুক। কর্তৃপক্ষের লক্ষ্য হলো, ট্যারিফ পুনরায় প্রয়োগের পাঁচ সপ্তাহের সময়সীমার আগে অনেক বাণিজ্য অংশীদারের সাথে আলোচনায় ত্বরাণ্বিত করা।

ওয়াশিংটন: আমেরিকায় রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার বাণিজ্য নীতি নিয়ে একটি নতুন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রশাসন অনেক দেশকে অনুরোধ করেছে যে তারা বুধবারের মধ্যে তাদের সর্বোত্তম বাণিজ্য প্রস্তাব আমেরিকাকে জমা দিন যাতে সময়মতো ট্যারিফ (আমদানি শুল্ক) নিয়ে আলোচনার চূড়ান্ত রূপ দেওয়া যায়। এই পদক্ষেপটি আমেরিকার বাণিজ্য কৌশলের পরিবর্তন এবং বিশ্ববাজারে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টার অংশ হিসেবে নেওয়া হয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের লক্ষ্য ৮ জুলাইয়ের মধ্যে নির্ধারিত সময়সীমার আগে জটিল বাণিজ্য আলোচনা সম্পন্ন করা, যাতে আমেরিকান অর্থনীতি এবং বিশ্ব বাণিজ্য উভয়কেই স্থায়িত্ব প্রদান করা যায়।

ট্রাম্প প্রশাসনের পরিকল্পনা এবং বাণিজ্য আলোচনার পটভূমি

গত কয়েক মাসে আমেরিকান প্রশাসন চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, মেক্সিকো সহ অনেক প্রধান দেশের সাথে বাণিজ্য বিরোধ নিয়ে ট্যারিফ আরোপ শুরু করেছিল। এর ফলে বিশ্ব বাণিজ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং শেয়ার বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। এটিকে বিবেচনা করে ট্রাম্প ৯ এপ্রিল ট্যারিফে ৯০ দিনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন যাতে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান বের করা যায়। এখন তিনি চান যাতে বাণিজ্য অংশীদাররা তাদের তাদের সর্বোত্তম প্রস্তাব দ্রুততম সময়ের মধ্যে উপস্থাপন করে যাতে এই জটিল বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা যায়।

আমেরিকার বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয় কর্তৃক প্রস্তুত খসড়া দলিলে এটি স্পষ্ট করা হয়েছে যে প্রশাসন সময়সীমার মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা সমাপ্ত করতে ইচ্ছুক। এই দলিলে বাণিজ্য অংশীদারদের আমেরিকান শিল্প ও কৃষি পণ্য কেনার বৃদ্ধি করার জন্য ট্যারিফে কমানো এবং অ-ট্যারিফ বাধা দূর করার জন্য একটি কার্যকর পরিকল্পনা উপস্থাপন করার জন্য বলা হয়েছে।

ট্যারিফ প্রয়োগের আগে আলোচনায় গতি দেওয়ার কৌশল

ট্রাম্প প্রশাসনের কৌশল অনুসারে, বুধবারের মধ্যে বাণিজ্য অংশীদারদের কাছে তাদের ‘সর্বোত্তম ও চূড়ান্ত’ প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে। এর পিছনে উদ্দেশ্য হলো ট্যারিফ প্রয়োগের পাঁচ সপ্তাহের সময়সীমার আগে আলোচনায় ত্বরাণ্বিত করা। কর্মকর্তারা মনে করেন যে এই ধরণের আলোচনার ফলে কেবল আমেরিকান শিল্পগুলিকে স্বস্তি পাওয়া যাবে না, বরং বিশ্ব বাণিজ্যের পথও সহজ হবে।

ওয়াইট হাউসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা কেভিন হ্যাসেট সহ অনেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা এই আশ্বাস দিয়েছেন যে কিছু চুক্তি খুব শীঘ্রই সম্পন্ন হবে। তবে, এখন পর্যন্ত কেবলমাত্র ব্রিটেনের সাথেই একটি বড় চুক্তি হতে পেরেছে। অন্যান্য দেশগুলির সাথে আলোচনা জটিল হয়ে রয়েছে এবং ট্রাম্প প্রশাসন খসড়া পত্র পাঠিয়ে চাপ বাড়িয়ে তুলছে।

খসড়া দলিলের প্রধান বিষয়

খসড়া দলিলে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে আমেরিকা বাণিজ্য অংশীদারদের কাছে নিম্নলিখিত বিষয়গুলিতে উত্তর চায়:

  • আমেরিকান কৃষি ও শিল্প পণ্য কেনার বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাব
  • ট্যারিফ হারে কমানো এবং সরিয়ে ফেলার জন্য স্পষ্ট রোডম্যাপ
  • অ-ট্যারিফ বাধা, যেমন কাস্টম ক্লিয়ারেন্স, প্রযুক্তিগত মান, লাইসেন্সিং ইত্যাদিতে উন্নতিকল্প
  • বাণিজ্যে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং বাজারে সমতা নিশ্চিত করার জন্য পরিকল্পনা
  • এই বিষয়গুলিতে সম্মতি হলে আমেরিকান ভোক্তা, কৃষক এবং শিল্প উভয়ই উপকৃত হবে। পাশাপাশি, আমেরিকার রপ্তানি ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

আদালতে ট্যারিফ নিয়ে বিরোধ অব্যাহত

ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি আমেরিকান আপিল আদালতের কাছেও অনুরোধ করেছে যে তারা সেই সিদ্ধান্তগুলি বন্ধ করুক যা রাষ্ট্রপতির ট্যারিফ আরোপ করার অধিকারকে চ্যালেঞ্জ করে। কিছু আদালত সিদ্ধান্ত দিয়েছে যে রাষ্ট্রপতি তার অধিকারের অপব্যবহার করে অত্যধিক ট্যারিফ আরোপ করেছেন। প্রশাসনের বক্তব্য, এই ধরণের সিদ্ধান্ত আমেরিকার বিশ্ব বাণিজ্য আলোচনাকে গুরুতরভাবে হুমকির মুখে ফেলে এবং অর্থনৈতিক স্থায়িত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

ট্রাম্প প্রশাসনের এই উদ্যোগের প্রভাব কেবল আমেরিকাতেই নয়, বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থার উপরও পড়বে। ট্যারিফ নিয়ে আলোচনা যদি সফল হয় তবে অনেক দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমবে এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খল শক্তিশালী হবে এবং বাজারে স্থায়িত্ব আসবে।

Leave a comment