ট্রাম্পের নোবেল পুরষ্কার বিতর্ক: শান্তি প্রচেষ্টার দাবি, কিন্তু পুরস্কার নয়

ট্রাম্পের নোবেল পুরষ্কার বিতর্ক: শান্তি প্রচেষ্টার দাবি, কিন্তু পুরস্কার নয়
সর্বশেষ আপডেট: 2 দিন আগে

আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও নোবেল শান্তি পুরস্কার নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন, যেখানে তিনি বলেছেন যে তিনি বিশ্বে শান্তি স্থাপনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টা করেছেন, কিন্তু তারপরেও তিনি নোবেল পুরস্কার পাবেন না।

Donald Trump: ওয়াশিংটন ডি.সি. আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প নোবেল শান্তি পুরস্কার নিয়ে তার কষ্ট আবারও প্রকাশ্যে প্রকাশ করেছেন। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে তার পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, আমি বিশ্বের জন্য যাই করি না কেন, কিন্তু আমি কখনোই নোবেল শান্তি পুরস্কার পাব না। এই বক্তব্য এমন সময়ে এসেছে যখন বিশ্বব্যাপী নোবেল পুরস্কারের স্বচ্ছতা এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

ট্রাম্প তার সাফল্যগুলি তুলে ধরেছেন

ডোনাল্ড ট্রাম্প তার পোস্টে সেই সমস্ত কূটনৈতিক প্রচেষ্টার কথা বলেছেন যার মাধ্যমে তিনি বিশ্ব শান্তিতে অবদান রাখার দাবি করেছেন। তিনি লিখেছেন: আমি কঙ্গো এবং রুয়ান্ডার মধ্যে ঐতিহাসিক চুক্তি করেছি, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা কমিয়েছি, সার্বিয়া এবং কোসোভোর মধ্যে আলোচনা করেছি, মিশর এবং ইথিওপিয়ার মধ্যে জলের বিরোধ সমাধানে সাহায্য করেছি এবং আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে ইহুদি এবং মুসলিম দেশগুলির মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক স্থাপন করেছি। কিন্তু তারপরেও, আমি নোবেল শান্তি পুরস্কার পাব না। তিনি আরও যোগ করেছেন, “লোকেরা জানে আমি কী করেছি। আমার কাছে তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”

আব্রাহাম চুক্তির উল্লেখ

ট্রাম্প বিশেষ করে ২০২০ সালে করা আব্রাহাম চুক্তির কথা উল্লেখ করেছেন, যার অধীনে ইসরায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, মরক্কো এবং সুদানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপিত হয়েছিল। ট্রাম্প দাবি করেছেন যে ভবিষ্যতে আরও অনেক দেশ এই চুক্তিতে যোগ দিতে পারে এবং মধ্যপ্রাচ্যকে স্থায়ী শান্তির দিকে নিয়ে যাওয়া যায়।

তিনি বলেছেন, যদি সবকিছু ঠিক থাকে, তাহলে আব্রাহাম চুক্তির সম্প্রসারণ হবে এবং মধ্যপ্রাচ্য প্রথমবারের মতো আসল শান্তির অভিজ্ঞতা লাভ করবে।

পাকিস্তান সমর্থন করেছে

흥미로운 ব্যাপার হল, নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন করেছে। খবর আছে যে সম্প্রতি পাকিস্তানি সেনাপ্রধান জেনারেল আসিফ মুনির হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সাথে দেখা করেছেন, যার সময় তিনি ট্রাম্পের বিশ্ব শান্তির প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছেন এবং নোবেল মনোনয়নের সমর্থন করেছেন।

এই পদক্ষেপ ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে সংবেদনশীল সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে আরও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে যখন ট্রাম্প দাবি করেছেন যে ২০২০-২০ সালে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের পরিস্থিতি তার হস্তক্ষেপে এড়ানো হয়েছিল।

গুপ্তচর সংস্থাগুলির উপর মন্তব্য

ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচীতেও তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি আমেরিকার গুপ্তচর সংস্থাগুলির প্রতিবেদনকে খারিজ করে বলেছেন যে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এখনও বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। যখন সাংবাদিকরা সংসদে তুলসী গাবার্ড কর্তৃক প্রদত্ত তথ্যের উল্লেখ করেছেন যে ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি, তখন ট্রাম্প বলেছেন, তাহলে তারা ভুল। আমার গুপ্তচর সংস্থা ভুল। এই বক্তব্য তাঁর প্রশাসন এবং গুপ্তচর সংস্থাগুলির মধ্যে উত্তেজনা উন্মোচন করে।

নোবেল কমিটির নীরবতা এবং ট্রাম্পের অভিযোগ

ট্রাম্পের এই বক্তব্য নোবেল পুরষ্কার কমিটিতেও পরোক্ষভাবে প্রশ্ন তোলে। তিনি অভিযোগ করেছেন যে পুরষ্কার নির্বাচন “রাজনৈতিক পছন্দ-অপছন্দ” এর উপর ভিত্তি করে হয়, আসল অবদানের উপর নয়। ট্রাম্পের এই বক্তব্য যে আমি রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট সমাধান করি না কেন বা ইসরায়েল-ইরান সংঘাত শান্ত করি না কেন, তারপরেও নোবেল পাব না, সরাসরিভাবে দেখায় যে তিনি নোবেল কমিটি থেকে ন্যায়ের আশা করেন না।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই বক্তব্য শুধু ব্যক্তিগত কষ্ট নয়, বরং ২০২৬ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক কৌশলও হতে পারে। নোবেল পুরষ্কারের মতো বিশ্বব্যাপী মঞ্চে নিজেকে “অদৃশ্য নায়ক” হিসেবে উপস্থাপন করে তিনি আবারও জাতীয়তাবাদ এবং ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি শক্তিশালী করার চেষ্টা করছেন।

Leave a comment