বঙ্কেবিহারী মন্দির: নতুন প্রশাসনিক ন্যাস গঠন

বঙ্কেবিহারী মন্দির: নতুন প্রশাসনিক ন্যাস গঠন
সর্বশেষ আপডেট: 27-05-2025

শ্রীঠাকুর বঙ্কেবিহারীজী মন্দির এখন একটি নতুন প্রশাসনিক রূপে প্রবেশ করেছে। উত্তরপ্রদেশ সরকার সোমবার উত্তরপ্রদেশ শ্রী বঙ্কেবিহারীজী মন্দির ন্যাস অধ্যাদেশ-২০২৫ কার্যকর করে মন্দিরের তত্ত্বাবধান ও পরিচালনার জন্য একটি নতুন ন্যাস (ট্রাস্ট) গঠন করেছে।

মথুরা: ঠাকুর বঙ্কেবিহারী মন্দিরের ব্যবস্থাপনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য সরকার সোমবার একটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছে, যার ফলে মন্দিরের সেবায়তদের ব্যাপক ধাক্কা লেগেছে। সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পর সরকার একটি অধ্যাদেশ জারি করে ‘শ্রী বঙ্কেবিহারীজী মন্দির ন্যাস’ গঠন করেছে। এই ট্রাস্ট ধর্মীয় কার্য বিভাগের অধীনে কাজ করবে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত এমন সময়ে এসেছে যখন মন্দির সেবায়তরা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে পুনরায় আপিল দায়ের করেছে। এরপরেও ট্রাস্ট গঠনের সাথে সাথে ভবিষ্যতের কর্মপন্থাও স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

উল্লেখযোগ্য যে, ১৫ মে সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারের সেই প্রস্তাবকে অনুমোদন দিয়েছিল, যাতে মন্দিরের উন্নত ব্যবস্থাপনার জন্য জাতীয় পর্যায়ের ট্রাস্ট গঠনের কথা বলা হয়েছিল। পাশাপাশি আদালত মন্দিরের তহবিল থেকে পাঁচ একর জমি কিনে মন্দিরের গলি তৈরির নির্দেশও দিয়েছিল।

সুপ্রিম কোর্টের মোহর এবং রাজ্য সরকারের দ্রুত কার্যক্রম

মন্দিরের ব্যবস্থাগুলিকে স্বচ্ছ ও পরিকল্পিত করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারের সেই প্রস্তাবকে অনুমোদন দিয়েছিল যাতে জাতীয় পর্যায়ের ট্রাস্ট গঠনের কথা বলা হয়েছিল। এর সাথে সাথে আদালত মন্দিরের কোষাগার থেকে পাঁচ একর জমি ক্রয় করে গলি নির্মাণের নির্দেশও দিয়েছিল। এদিকে রাজ্যপাল আনন্দীবেন প্যাটেল অধ্যাদেশটিকে অনুমোদন দিয়ে আইনগতভাবে কার্যকর করেছেন। এর কার্যকর হওয়ার সাথে সাথেই মন্দিরের প্রশাসন এখন সরাসরি ধর্মীয় কার্য বিভাগের অধীনে চলে আসবে।

  • দুটি শ্রেণীতে থাকবে ন্যাসী: অভিজ্ঞতা ও প্রশাসনের ভারসাম্য
  • নতুন ন্যাসে দুই ধরণের ন্যাসী থাকবে—নাম নির্দিষ্ট এবং পদেণ।
  • নাম নির্দিষ্ট ন্যাসী (১১ জন সদস্য) এর মধ্যে বৈষ্ণব পরম্পরা থেকে তিনজন প্রতিষ্ঠিত সাধু, মুনি, মহন্ত অথবা আচার্য অন্তর্ভুক্ত থাকবেন।
  • সনাতন ধর্মের অন্যান্য শাখা থেকে যুক্ত তিনজন বিদ্বান, শিক্ষাবিদ, উদ্যোক্তা অথবা সমাজসেবী অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
  • তিনজন সদস্য এমন হবেন যারা অন্য কোন হিন্দু পরম্পরার সাথে সম্পর্কিত হবেন।

এছাড়াও মন্দিরের সাথে যুক্ত গোস্বামী পরম্পরার দুই সেবায়ত—একজন রাজভোগ সেবা এবং একজন শয়নভোগ সেবা থেকে—এই ন্যাসের অংশ হবেন।

পদেণ ন্যাসী থাকবেন শাসনতন্ত্রের প্রতিনিধি

পদেণ ন্যাসী (সর্বোচ্চ ৭ জন সদস্য) এর মধ্যে জেলাশাসক (DM), পুলিশ সুপার (SSP), নগর কমিশনার, ব্রজ তীর্থ উন্নয়ন পরিষদের CEO, ধর্মীয় কার্য বিভাগের একজন কর্মকর্তা এবং শ্রী বঙ্কেবিহারীজী মন্দির ট্রাস্টের CEO অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী রাজ্য সরকার অন্যান্য কর্মকর্তাও এতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।

সকল ন্যাসী কেবলমাত্র দুটি মেয়াদ পর্যন্ত পদে থাকতে পারবেন। পাশাপাশি ন্যাসের CEO একজন পূর্ণকালীন কর্মকর্তা হবেন, যার নিয়োগ রাজ্য সরকার করবে এবং তার পদ ADM এর সমতুল্য হবে।

সেবায়তদের মধ্যে অসন্তোষ, পুনর্বিবেচনার আবেদন সুপ্রিম কোর্টে

মন্দির সেবায়ত দেবেন্দ্রনাথ গোস্বামী সরকারের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে পুনরায় আপিল দায়ের করেছেন, যার উপর ২৮ মে বিচারপতি বি.ভি. নাগরত্ন ও বিচারপতি সতীশচন্দ্র শর্মার বেঞ্চ শুনানি করবে। সেবায়তদের অভিযোগ, সরকার ঐতিহ্যবাহী ব্যবস্থাগুলিকে উপেক্ষা করে একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা মন্দিরের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের বিরুদ্ধে।

এখন মন্দিরের আর্থিক ব্যবস্থাপনা, তীর্থযাত্রীদের সুবিধা, শৃঙ্খলা, কর্মচারী নিয়োগ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার পরিচালনা ন্যাসের মাধ্যমে হবে। এই ব্যবস্থা মন্দিরের খ্যাতিকে বিশ্বব্যাপী শক্তিশালী করতে, ভিড় ব্যবস্থাপনা এবং ডিজিটাল সেবা উন্নয়নে সহায়ক বলে মনে করা হচ্ছে।

Leave a comment