ভারতীয় বিমান বাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভানশু शुक्ला ২৬ জুন, ২০২৫ তারিখে কেনেডি স্পেস সেন্টার-এর লঞ্চ প্যাড ৩৯এ থেকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (ISS) যাত্রা করবেন।
শুভানশু शुक्ला: কেনেডি স্পেস সেন্টার-এর লঞ্চ প্যাড ৩৯এ মহাকাশের জগতে এমন একটি স্থান, যেখান থেকে ১৯৬৯ সালে নীল আর্মস্ট্রং চাঁদের দিকে যাত্রা করেছিলেন। এখন এই ঐতিহাসিক স্থান থেকেই ২৬ জুন, ২০২৫ তারিখে ভারতীয় বিমান বাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভানশু शुक्ला আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (ISS) যাত্রা করবেন। এই মিশন ভারতের জন্য ঐতিহাসিক এবং মহাকাশ অনুসন্ধানে ভারতের শক্তিশালী উপস্থিতি জানান দেবে।
লঞ্চ প্যাড ৩৯এ-এর ঐতিহাসিক তাৎপর্য
কেনেডি স্পেস সেন্টার আমেরিকার ফ্লোরিডা রাজ্যের মেরিট দ্বীপে অবস্থিত। ১৯৬২ সালে নাসা এটিকে তাদের মহাকাশ অভিযানের জন্য স্থাপন করে। লঞ্চ প্যাড ৩৯-এ দুটি অংশ রয়েছে— ৩৯এ এবং ৩৯বি। এটি সেই স্থান, যেখান থেকে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মহাকাশ অভিযানগুলো সম্পন্ন হয়েছে।
অ্যাপোলো ১১ এবং চাঁদে প্রথম পদক্ষেপ
১৬ জুলাই, ১৯৬৯ তারিখে লঞ্চ প্যাড ৩৯এ থেকে অ্যাপোলো ১১ মিশন উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। এই মিশনে নীল আর্মস্ট্রং, বাজ অ্যালড্রিন এবং মাইকেল কলিন্স চাঁদের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন। আর্মস্ট্রং চাঁদের উপর প্রথম পা রাখেন এবং বলেছিলেন—“এটি আমার জন্য একটি ছোট পদক্ষেপ, কিন্তু মানবজাতির জন্য এক বিশাল লাফ।” এই মুহূর্তটি মানব ইতিহাসের একটি নতুন অধ্যায় শুরু করেছিল।
মহাকাশ শटल যুগের সূচনা ও সমাপ্তি
১৯৭৩ সাল থেকে, এই লঞ্চ প্যাড থেকেই স্কাইলেব এবং অ্যাপোলো-সোয়ুজ মিশনগুলোর সূচনা হয়। এরপর ১৯৮১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত নাসা তাদের ১৩৫টি মহাকাশ শटल মিশন এখানে থেকে উৎক্ষেপণ করে। ডিসকভারি, অ্যাটলান্টিস এবং চ্যালেঞ্জার-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ শटलগুলো এখান থেকে মহাকাশে গিয়েছিল।
স্পেসএক্স লঞ্চ প্যাড ৩৯এ-কে পুনরুজ্জীবিত করেছে
২০০৮ সালে স্পেসএক্স লঞ্চ প্যাড ৩৯এ-এর লিজ নেয় এবং এটিকে ফ্যালকন ৯ এবং ফ্যালকন হেভি রকেট-এর উপযোগী করে তোলে। এখন এটি আধুনিক প্রাইভেট স্পেস মিশনের প্রধান কেন্দ্র।
শুভানশু शुक्ला: ভারতের মহাকাশের নতুন মুখ
ভারতীয় বিমান বাহিনীর গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভানশু शुक्ला ২৬ জুন, ২০২৫ তারিখে এই লঞ্চ প্যাড ৩৯এ থেকে অ্যাক্সিওম মিশন-৪ (Ax-4)-এর অধীনে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যাত্রা করবেন। এই মিশনটি দুপুর ১২:০১ মিনিটে ভারতীয় সময় শুরু হবে।
Ax-4 মিশনের প্রধান বিষয়সমূহ
এটি একটি ব্যক্তিগত মহাকাশ মিশন, যা অ্যাক্সিওম স্পেস, নাসা এবং স্পেসএক্স যৌথভাবে পরিচালনা করছে। শুভানশু এই মিশনের পাইলট হবেন। তাঁর সাথে মিশন কমান্ডার পეგი হুইটসন (আগের নাসা নভচারী), পোল্যান্ডের স্लावোসজ উজনি এবং হাঙ্গেরির টিবোর কাপু থাকবেন।
২৮ ঘণ্টার মহাকাশ যাত্রা
এই যাত্রা স্পেসএক্স-এর ড্রাগন মহাকাশযানের মাধ্যমে হবে, যা ফ্যালকন ৯ রকেট দ্বারা উৎক্ষেপণ করা হবে। ড্রাগনকে ISS-এ পৌঁছাতে প্রায় ২৮ ঘণ্টা লাগবে। এই সময় মহাকাশযানটিকে কক্ষপথে সমন্বয়, ডকিং এবং নিরাপত্তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করতে হবে।
ISS-এ ১৪ দিনের বিশেষ অভিযান
শুভানশু মহাকাশ স্টেশনে ১৪ দিন থাকবেন। এই সময় তিনি সাতজন ভারতীয় এবং পাঁচজন নাসা বিজ্ঞানীর সাথে যৌথভাবে বিভিন্ন পরীক্ষা চালাবেন। এর মধ্যে মানব শরীরের উপর মহাকাশের প্রভাব, ভারতীয় খাদ্য উপাদান যেমন মুগ ও মেথির চাষ এবং মহাকাশে যোগা নিয়ে গবেষণা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এছাড়াও, তিনি ভারতীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরার জন্য বিশেষ মিষ্টি এবং একটি খেলনা হাঁস (জாய்) সাথে নিয়ে যাবেন।
লঞ্চ প্যাড ৩৯এ-এর আধুনিক বৈশিষ্ট্য
এই লঞ্চ প্যাড শুধু ঐতিহাসিক নয়, এটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতেও সজ্জিত। এখানে ক্রলার-ট্রান্সপোর্টার নামক একটি যন্ত্র রকেটকে অ্যাসেম্বলি থেকে লঞ্চ পয়েন্ট পর্যন্ত নিয়ে যায়। এই যন্ত্র ৩,০০০ টন পর্যন্ত ওজন তুলতে সক্ষম। লঞ্চ টাওয়ার ফ্যালকন ৯ রকেটকে জ্বালানো, পেলোড অ্যাসেম্বলি এবং উৎক্ষেপণে সাহায্য করে। এখানে একটি জরুরি নির্গমন ব্যবস্থা (emergency egress system) রয়েছে, যা কোনো বিপদের সময় মহাকাশচারীদের নিরাপদে উদ্ধার করতে পারে।