আমেরিকা পাকিস্তানকে কিছু এমন অত্যাধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করেছিল, যা সম্পর্কে দাবি করা হয়েছিল যে, সেগুলো কখনোই ধ্বংস করা যাবে না। এই অস্ত্রগুলোর মধ্যে ছিল অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এবং সঠিক লক্ষ্যভেদী যন্ত্রপাতি।
ভারত পরাজিত করেছে আমেরিকান অস্ত্র: ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বহু বছর ধরে চলে আসা উত্তেজনা কারো কাছেই অজানা নয়। পাকিস্তান বারবার ভারতের বিরুদ্ধে কাপুরুষোচিত কাজ করে আসছে, তা আতঙ্কবাদী হামলার মাধ্যমে হোক বা সীমান্ত পেরিয়ে অনুপ্রবেশের মাধ্যমে। সম্প্রতি পুলওয়ামায় হওয়া আতঙ্কবাদী হামলার পর দেশে আবারও রোষের ঢেউ উঠেছে। মানুষ স্পষ্টভাবে বলছে যে, পাকিস্তানকে এখন কঠোর শিক্ষা দেওয়ার সময় এসেছে।
ইতিহাস সাক্ষী যে, যখনই পাকিস্তান ভারতের উপর আক্রমণ করার চেষ্টা করেছে, তখনই তাকে তীব্র প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হয়েছে। আগ্রহের বিষয় হল, যখনই পাকিস্তান আমেরিকার তথাকথিত ‘অজেয়’ অস্ত্রের উপর নির্ভর করেছে, তখনই ভারত সেই অস্ত্রগুলোকে কেবল ধ্বংসই করেনি, বরং আমেরিকার দাবিগুলোকেও মিথ্যা প্রমাণ করেছে। আসুন জেনে নেই কিভাবে ভারত আমেরিকা কর্তৃক পাকিস্তানকে প্রদত্ত মারাত্মক অস্ত্রগুলোকে এক ঝটকায় পরাজিত করেছে।
১. প্যাটন ট্যাংক: যাদের কেউ নামাতে পারত না, তাদের উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল আরসিএল দিয়ে
১৯৬৫ সালের ভারত-পাক যুদ্ধকে ট্যাংকের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ বলে মনে করা হয়। সেই সময় পাকিস্তানের কাছে আমেরিকা থেকে প্রাপ্ত আধুনিক প্যাটন ট্যাংক ছিল, যা সেই সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী ও অজেয় ট্যাংক হিসেবে বিবেচিত হত। অন্যদিকে ভারতের কাছে ছিল ব্রিটিশ নির্মিত সেনচুরিয়ান এবং পুরানো শারম্যান ট্যাংক। পাকিস্তানের প্রথম সাঁজোয়া সৈন্যদল যখন প্রায় ২০০ ট্যাংক নিয়ে ভারতের উপর আক্রমণ করেছিল, তখন ধারণা করা হচ্ছিল যে, ভারতীয় সেনাবাহিনী তা ঠেকাতে পারবে না।
কিন্তু গল্পটি তখন মোড় নেয় যখন বীর আব্দুল হামিদ তার আরসিএল জীপ (রকেট লঞ্চার মাউন্টেড জীপ) দিয়ে একের পর এক পাকিস্তানের প্যাটন ট্যাংক ধ্বংস করে দেন। একা আব্দুল হামিদ ৭টিরও বেশি ট্যাংক ধ্বংস করেছিলেন এবং ভারত পাকিস্তানি ট্যাংকগুলোকে তাড়িয়ে সীমান্তের বাইরে ঠেলে দিয়েছিল। এই যুদ্ধ ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়ে আছে যে, কীভাবে দুর্বল ট্যাংক এবং সীমিত সংস্থান থাকা সত্ত্বেও ভারতীয় বীরযোদ্ধারা ‘অজেয়’ বলে মনে করা আমেরিকান অস্ত্রের ধ্বংসস্তূপ করেছিল।
২. পিএনএস গাজী: সমুদ্রের গভীরে বিলীন হয়ে গেল আমেরিকার অহঙ্কার
১৯৭১ সালের ভারত-পাক যুদ্ধ কেবলমাত্র স্থল ও আকাশেই ছিল না, বরং সমুদ্রেও ছিল। পাকিস্তানের কাছে সেই সময় আমেরিকা থেকে লিজে প্রাপ্ত উন্নত দীর্ঘ-পাল্লার সাবমেরিন পিএনএস গাজী ছিল, যা ভারতের জন্য বড় আশঙ্কার বিষয় ছিল। এর লক্ষ্য ছিল ভারতের বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ আইএনএস বিক্রান্তকে ধ্বংস করা।
ভারত একটি চালাক কৌশল অবলম্বন করে এবং গাজীকে ভুল বুঝিয়ে আইএনএস বিক্রান্তের পরিবর্তে পুরানো যুদ্ধজাহাজ আইএনএস রাজপুতকে পাঠায়। রাজপুত সমুদ্রে এমন গভীর আঘাত হানে যে গাজী সেখানেই সমুদ্রে বিলীন হয়ে যায়। এই ঘটনায় পাকিস্তানের ৯৩ জন নৌসেনা কর্মী নিহত হয় এবং তার সবচেয়ে বড় নৌবাহিনীর শক্তি চিরতরে শেষ হয়ে যায়। এই বিজয় ভারতীয় নৌবাহিনীর ক্ষমতার ঘোষণা বিশ্বজুড়ে বাজিয়ে দিয়েছিল।
৩. এফ-১৬ বনাম মিগ-২১: যখন পুরানো মিগ নতুন নায়ক হয়ে ওঠে
২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার প্রতিশোধে ভারত বালকোটে এয়ারস্ট্রাইক করে আতঙ্কবাদীদের ঘাঁটি ধ্বংস করে। এর পরের দিনই পাকিস্তান তার এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিয়ে ভারতের উপর আক্রমণ করার চেষ্টা করে। কিন্তু ভারতীয় বিমানবাহিনী তাদের কেবলমাত্র তাড়িয়ে দেয়নি, বরং উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান মিগ-২১ বাইসন বিমান দিয়ে পাকিস্তানের এফ-১৬ কে ভূপাতিত করে।
এই লড়াই ঐতিহাসিক হয়ে ওঠে কারণ মিগ-২১ তৃতীয় প্রজন্মের বিমান এবং এফ-১৬ চতুর্থ প্রজন্মের আধুনিক যুদ্ধবিমান। কিন্তু অভিনন্দনের বুদ্ধিমত্তা ও সাহস এই প্রযুক্তিগত ব্যবধানকে পিছনে ফেলে পাকিস্তানকে আবারও তীব্র জবাব দেয়। এই ঘটনা কেবলমাত্র ভারতের সামরিক ক্ষমতার নজিরই স্থাপন করে নি, বরং আমেরিকান অস্ত্রের দাবিরও পোশাকি উন্মোচন করে।
আমেরিকা কর্তৃক ‘অজেয়’ বলে উল্লেখিত অস্ত্র যখন পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার চেষ্টা করে, তখন ভারত কেবল তা ধ্বংসই করে না, বরং এটাও দেখিয়ে দেয় যে, আসল শক্তি অস্ত্রে নয়, তা পরিচালনাকারী বীরযোদ্ধাদের উদ্যমে। ভারত সর্বদা সংযমের সাথে জবাব দিয়েছে, কিন্তু যখনই প্রয়োজন হয়েছে তখনই শত্রুকে উপযুক্ত জবাবও দিয়েছে।