আজকের বিশ্ব দ্রুত নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে এগিয়ে চলেছে এবং ভারতও এই পরিবর্তনের অন্যতম অংশীদার হয়ে উঠছে। কয়লা ও তেলের মতো ঐতিহ্যগত শক্তির উৎসের সীমাবদ্ধতা এখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে; এগুলো কেবল সীমিত নয়, পরিবেশের জন্যও ক্ষতিকারক। এই পরিস্থিতিতে সবুজ হাইড্রোজেন (Green Hydrogen) একটি বিপ্লবী সমাধান হিসেবে উঠে আসছে।
সবুজ হাইড্রোজেন হল সেই হাইড্রোজেন যা পানি (H2O) থেকে ইলেক্ট্রোলাইসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপাদন করা হয় এবং এই প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত বিদ্যুৎ সৌর বা বায়ু শক্তির মতো নবায়নযোগ্য উৎস থেকে আসে। অর্থাৎ এটি একটি সম্পূর্ণ পরিষ্কার এবং শূন্য-উৎসর্জন জ্বালানি।
ভারতে সবুজ হাইড্রোজেন মিশনের সূচনা
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০২১ সালে জাতীয় হাইড্রোজেন মিশনের ঘোষণা করেছিলেন, যার লক্ষ্য ভারতকে সবুজ হাইড্রোজেনের বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা। ২০২৩ সালে সরকার সবুজ হাইড্রোজেন নীতিও প্রকাশ করেছে, যাতে কোম্পানিগুলিকে উৎসাহ, ভর্তুকি এবং প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রক সহায়তা প্রদানের কথা বলা হয়েছে। এর লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে বার্ষিক ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন সবুজ হাইড্রোজেন উৎপাদন করা।
প্রধান বিনিয়োগ ও প্রকল্প
- আদানি গ্রুপ এবং রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের মতো কর্পোরেট সংস্থাগুলি ব্যাপকভাবে সবুজ হাইড্রোজেন উৎপাদনে বিনিয়োগ করছে।
- ইন্ডিয়ান অয়েল, NTPC এবং GAIL এর মতো সরকারি সংস্থাগুলিও বেশ কিছু পরীক্ষামূলক প্রকল্পে কাজ করছে।
- রাজস্থান, গুজরাট এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলি সৌর ও বায়ু শক্তি থেকে সবুজ হাইড্রোজেন উৎপাদনের জন্য আকর্ষণীয় কেন্দ্র হয়ে উঠছে।
পরিবেশ ও অর্থনৈতিক সুবিধা
সবুজ হাইড্রোজেন ব্যবহারের ফলে কার্বন নিঃসরণ প্রায় শূন্য করা সম্ভব, যা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি বড় জয় হবে। এছাড়াও:
পেট্রোল-ডিজেলের পরিবর্তে হাইড্রোজেনচালিত যানবাহন শূন্য-উৎসর্জন হবে। ইস্পাত ও সার শিল্পে বিপুল পরিমাণে হাইড্রোজেনের প্রয়োজন হয়। যদি এগুলো সবুজ হয়, তাহলে দূষণে ব্যাপক হ্রাস আসবে। আমদানি কমবে কারণ ভারত নিজস্ব সবুজ হাইড্রোজেন সম্পদ তৈরি করবে।
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যতের পথ
যদিও সবুজ হাইড্রোজেনের পথে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে:
- ইলেক্ট্রোলাইজারের মতো প্রযুক্তি এখনও ব্যয়বহুল।
- বৃহৎ পরিসরে নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের প্রয়োজন।
- সংরক্ষণ ও পরিবহনের জন্য অবকাঠামোর অভাব রয়েছে।
কিন্তু ভারত সরকার এবং বেসরকারি কোম্পানিগুলি মিলে এই চ্যালেঞ্জগুলির সমাধান খুঁজে বের করছে। প্রযুক্তিতে উন্নতি এবং উৎপাদন খরচ কমার সাথে সাথে সবুজ হাইড্রোজেন গণ-গ্রহণের দিকে এগিয়ে যাবে। সবুজ হাইড্রোজেন কেবল পরিবেশের জন্যই নয়, ভারতকে শক্তি খাতে আত্মনির্ভর এবং বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগী করে তুলতে পারে।
আগামী ৫-১০ বছরে এই প্রযুক্তি আমাদের জীবনের অংশ হয়ে উঠতে পারে – গাড়িতে, কারখানায় এবং এমনকি বাড়িতেও। ভারত এই দিকে উদ্যোগ নিয়েছে।