সুপ্রিম কোর্ট পেটিএম-কে বড় ধরণের স্বস্তি দিয়েছে। তাদের মাতৃ সংস্থা ওয়ান97 কমিউনিকেশন্স লিমিটেড (OCL)-কে রিয়েল মানি গেমিং প্ল্যাটফর্ম সংক্রান্ত ৫,৭১২ কোটি টাকার জিএসটি নোটিশের উপর সুপ্রিম কোর্ট অস্থায়ীভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
Paytm GST Notice: অনলাইন গেমিং ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে কর বিভাগের কঠোরতার মধ্যেই পেটিএমের মাতৃ সংস্থা ওয়ান97 কমিউনিকেশন্স লিমিটেড (OCL) সুপ্রিম কোর্ট থেকে বড় স্বস্তি পেয়েছে। কোম্পানির গেমিং শাখা পেটিএম ফার্স্ট গেমসকে পাঠানো ৫,৭১২ কোটি টাকার জিএসটি নোটিশের উপর আদালত স্থগিতাদেশ (স্টে) জারি করেছে। ২৪শে মে ২০২৫-এ এই রায় প্রকাশিত হয় এবং এতে কোম্পানি এক বড় আইনি জটিলতা থেকে তাত্ক্ষণিকভাবে মুক্তি পেয়েছে।
কী ঘটেছে?
সারা দেশে অনলাইন গেমিং প্ল্যাটফর্মগুলির বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগের তদন্ত তীব্র গতিতে চলছে। ডাইরেক্টরেট জেনারেল অফ জিএসটি ইন্টেলিজেন্স (DGGI) এখন পর্যন্ত ৭১টি শো-কজ নোটিশ জারি করেছে, যার মাধ্যমে প্রায় ১.১২ লক্ষ কোটি টাকার কর ফাঁকির আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এই নোটিশগুলির মধ্যে একটি পেটিএমের গেমিং ইউনিটকেও পাঠানো হয়েছিল।
এই নোটিশটি CGST অ্যাক্ট, UPGST অ্যাক্ট এবং IGST অ্যাক্টের বিভিন্ন ধারার আওতায় এপ্রিল ২০২৫-এ জারি করা হয়েছিল। এতে DGGI দাবি করেছে যে ফার্স্ট গেমস অনলাইন গেমিং থেকে প্রাপ্ত মোট এন্ট্রি ফি (এন্ট্রি অ্যামাউন্ট)-র উপর ২৮ শতাংশ হারে জিএসটি দায়িত্ব পালন করেনি এবং এটি একটি গুরুতর কর ফাঁকির ঘটনা।
কোম্পানির উত্তর: এটি ইন্ডাস্ট্রির সাথে সম্পর্কিত একটি বিষয়, শুধুমাত্র পেটিএম-কেন্দ্রিক নয়
ওয়ান97 কমিউনিকেশন্স তাদের ব্যাখ্যায় জানিয়েছে যে এই কর বিবাদ শুধুমাত্র ফার্স্ট গেমস-এ সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি সমগ্র গেমিং ইন্ডাস্ট্রির সাথে সম্পর্কিত একটি বিষয়। কোম্পানির দাবি, জিএসটি গণনার ভিত্তিতে ব্যাখ্যার মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে – কর গেমিং প্ল্যাটফর্মের মার্জিনের উপর আরোপ করা উচিত নাকি মোট এন্ট্রি ফির উপর।
কোম্পানি জানিয়েছে, এই বিষয়টি এখন সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন এবং আদালত আমাদের পক্ষে স্থগিতাদেশ জারি করেছে। এর অর্থ হল, যতক্ষণ না প্রধান বিষয়ের উপর আদালত চূড়ান্ত রায় দেয়, ততক্ষণ DGGI কর্তৃক পাঠানো এই নোটিশের উপর কোনও কর্মকাণ্ড করা যাবে না।
কী বলে আইন?
DGGI-র যুক্তি হল, অনলাইন রিয়েল মানি গেমিং একটি "সেবা" (Service), যার উপর ২৮ শতাংশ হারে জিএসটি প্রযোজ্য। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির মত হল, করের গণনা নেট রেভিনিউ (অর্থাৎ মার্জিন)-র উপর করা উচিত, ব্যবহারকারী কর্তৃক জমা করা মোট টাকার উপর নয়। এই পার্থক্য লক্ষ লক্ষ-কোটি কোটি টাকার করের পরিমাণে বড় পার্থক্য তৈরি করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনও ব্যবহারকারী ১,০০০ টাকা এন্ট্রি ফি দেয় এবং কোম্পানি তা থেকে ১০০ টাকা মার্জিন পায়, তাহলে কোম্পানি চায় যে কর শুধুমাত্র ১০০ টাকার উপর আরোপ করা হোক, সম্পূর্ণ ১,০০০ টাকার উপর নয়।
সুপ্রিম কোর্টের আদেশ: মূল আবেদনের শুনানি পর্যন্ত কর্মকাণ্ডের উপর নিষেধাজ্ঞা
সুপ্রিম কোর্ট তাদের আদেশে বলেছে যে, যতক্ষণ না মূল আবেদনের উপর চূড়ান্ত শুনানি এবং রায় হয়, ততক্ষণ ফার্স্ট গেমসের বিরুদ্ধে জিএসটি নোটিশের কোনও কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকবে। এই আদেশ শুধুমাত্র পেটিএম-এর জন্যই নয়, বরং সমগ্র ইন্ডাস্ট্রির জন্য স্বস্তিদায়ক হতে পারে, কারণ এটি একটি মিসাল (precedent) হিসেবে কাজ করতে পারে।
কী হবে পরবর্তী পদক্ষেপ?
- সুপ্রিম কোর্ট এখন অনলাইন গেমিং ইন্ডাস্ট্রিতে প্রযোজ্য জিএসটি নিয়মের ব্যাখ্যা করবে, যার ফলে করের ভিত্তি নির্ধারিত হবে।
- যদি আদালত DGGI-র পক্ষে রায় দেয়, তাহলে পেটিএমসহ সকল গেমিং কোম্পানিকে হাজার হাজার কোটি টাকা কর দিতে হতে পারে।
- অন্যদিকে, যদি ইন্ডাস্ট্রির যুক্তি মেনে নেওয়া হয়, তাহলে এই রায় সমগ্র ডিজিটাল গেমিং সেক্টরকে স্বস্তি দিতে পারে এবং সরকারকে নিয়মে স্পষ্টতা আনতে হবে।