২০২৫ সালের ১২ই জুন লন্ডনে পোলো খেলার সময় হঠাৎ করেই সংজয় কাপুরের মৃত্যুতে ব্যবসায়িক ও বিনোদন জগত স্তম্ভিত হয়ে পড়েছে।
নয়াদিল্লি: ভারতীয় শিল্প জগত ও বলিউডের অলিগলি জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে যখন ২০১৫ সালের ১২ই জুন ব্রিটেনের লন্ডন শহর থেকে খবর আসে যে কোটিপতি ব্যবসায়ী সংজয় কাপুরের হঠাৎ মৃত্যু হয়েছে। ৫৮ বছর বয়সী সংজয় কাপুর পোলো ম্যাচ খেলার সময় হঠাৎ করেই অ্যানাফিলাকটিক শকের শিকার হন। রিপোর্ট অনুসারে, মৌমাছি ডংয়ে এই শক হয়, যার ফলে তাঁর অবিলম্বে মৃত্যু হয়।
সংজয় কাপুর কেবল একজন সফল উদ্যোগপতিই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন সম্মানিত সমাজ ব্যক্তিত্বও। তিনি বিশ্বব্যাপী খ্যাতিমান অটো কম্পোনেন্ট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সোনা কমস্টারের চেয়ারম্যান ছিলেন। কাপুরের মৃত্যুর পর থেকে তাঁর প্রায় ১০,০০০ কোটি টাকার সম্পত্তি এবং কোম্পানির নেতৃত্ব নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে।
ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের ভিত্তি ও সম্প্রসারণ
২০১৫ সালে তাঁর পিতা সুরিন্দর কাপুরের মৃত্যুর পর সংজয় কাপুর সোনা কমস্টারের দায়িত্ব নেন। তাঁর নেতৃত্বে কোম্পানি আন্তর্জাতিক বাজারে দ্রুত সম্প্রসারণ করে এবং আমেরিকা, চীন, সার্বিয়া, মেক্সিকোর মতো দেশে নিজেদের উপস্থিতি তৈরি করে। ভারতের অটো কম্পোনেন্ট শিল্পে সোনা কমস্টারকে বিশ্বমানের স্বীকৃতি এনে দেওয়ার কৃতিত্ব সংজয় কাপুরের।
বর্তমানে কোম্পানির বাজার মূলধন প্রায় ৩১,০০০ কোটি টাকা এবং কাপুরের ব্যক্তিগত সম্পত্তি প্রায় ১০,৩০০ কোটি টাকা বলে মনে করা হচ্ছে।
তিনটি বিয়ে, চারটি সন্তান, এবং এখন উত্তরাধিকারের প্রশ্ন
সংজয় কাপুরের ব্যক্তিগত জীবনও কম আলোচিত ছিল না। তিনি তিনবার বিয়ে করেছিলেন। প্রথম বিয়ে ছিল ফ্যাশন ডিজাইনার নন্দিতা মেহতানির সাথে, যা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। এরপর ২০০৩ সালে তাঁর দ্বিতীয় বিয়ে হয় বলিউড অভিনেত্রী করিশ্মা কাপুরের সাথে, যার ফলে তাঁর দুটি সন্তান হয় - সামায়রা ও কিয়ান। তবে এই বিয়েও বেশিদিন স্থায়ী হয়নি এবং ২০১৬ সালে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়।
এরপর সংজয় তৃতীয় বিয়ে করেন মডেল ও উদ্যোগপতি প্রিয়া সচদেবের সাথে, যার ফলে তাঁর একজন পুত্র আজারিয়াস হয়। সংজয়ের প্রথম স্ত্রী নন্দিতা মেহতানির সাথেও তাঁর একজন পুত্র আছে বলে জানা গেছে, যিনি মিডিয়ার চোখ এড়িয়ে চলেছেন।
সম্পত্তির বণ্টন কীভাবে হবে
সংজয় কাপুরের মৃত্যুর পর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে তাঁর সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিয়ে। আইন অনুসারে, যদি তিনি কোনো ইচ্ছাপত্র না রেখে যান, তাহলে তাঁর সম্পত্তি তাঁর আইনি উত্তরাধিকারীদের মধ্যে ভাগ হবে। এর মধ্যে রয়েছে তাঁর স্ত্রী প্রিয়া সচদেব এবং চারটি সন্তান।
সূত্র অনুসারে, সংজয় করিশ্মা কাপুরের দুই সন্তান সামায়রা ও কিয়ানের জন্য আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি ট্রাস্ট তৈরি করেছিলেন, যেখানে প্রায় ১৪ কোটি টাকার বন্ড এবং ১০-১০ লক্ষ টাকা করে মাসিক আয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তাঁর বর্তমান স্ত্রী প্রিয়া সচদেব সম্পত্তির বেশিরভাগ অংশ পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু এসব কোর্টে ইচ্ছাপত্র এবং অন্যান্য নথির ভিত্তিতে ঠিক হবে।
কোম্পানির ভবিষ্যৎ এবং ব্যবস্থাপনা
সোনা কমস্টার সংজয় কাপুরের মৃত্যুতে একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশ করে জানিয়েছে যে কোম্পানি স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাবে এবং তাঁর দর্শনের অনুসারে কাজ করে যাবে। তবে, এখনো স্পষ্ট নয় যে কোম্পানির নেতৃত্ব কার হাতে থাকবে।
কাপুরের সন্তানরা এখনো বেশ ছোট, তাই নেতৃত্বের দায়িত্ব সাময়িকভাবে বোর্ড অফ ডিরেক্টরদের উপরই থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। শিল্প বিশ্লেষকদের মতে, যদি কোম্পানি এই সঙ্ক্রান্তিকাল সফলভাবে পার হতে পারে, তাহলে তা সংজয় কাপুরের দূরদর্শী নেতৃত্বের প্রকৃত উত্তরাধিকার হবে।
বলিউড ও ব্যবসায়িক জগতে শোকের ছায়া
সংজয় কাপুরের হঠাৎ মৃত্যুর খবরে চলচ্চিত্র জগতও শোকাহত। করিশ্মা কাপুর ও তাঁর পরিবার সর্বজনীনভাবে কোনো বক্তব্য দেননি, কিন্তু ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর অনুসারে কাপুর পরিবার এই খবরে অত্যন্ত মর্মাহত। করণ জোহর, অক্ষয় কুমার, রতন টাটা ও আনন্দ মহিন্দ্রার মতো ব্যক্তিত্বরা সোশ্যাল মিডিয়ায় শোক প্রকাশ করে তাঁকে একজন অসাধারণ নেতা ও নম্র ব্যক্তি বলে বর্ণনা করেছেন।
কি কোর্টে যাবে বিষয়টি?
যেহেতু সংজয় কাপুরের সম্পত্তি অনেক বড় এবং তাঁর পারিবারিক অবস্থা জটিল, তাই উত্তরাধিকার নিয়ে আইনি বিরোধের সম্ভাবনা রয়েছে। কোনও পক্ষ যদি মনে করে যে ইচ্ছাপত্রের নিয়ম ভঙ্গ করা হয়েছে অথবা সম্পত্তির বণ্টন ন্যায়সঙ্গত নয়, তাহলে তারা আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে।
আইনজ্ঞদের মতে, এ ধরনের পরিস্থিতিতে সময়োচিত নথির সত্যতা ও সংজয় কাপুরের স্পষ্ট নির্দেশনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।