যদি কোনও ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীর মৃত্যু তার বিল পরিশোধ না করেই হয়, তাহলে প্রশ্ন উঠে যে, ব্যাংক বাকি টাকা কার কাছ থেকে আদায় করবে?
আজকের যুগে ক্রেডিট কার্ড শুধুমাত্র বিলাসিতা নয়, বরং একটি অপরিহার্য আর্থিক সরঞ্জাম হিসেবে পরিণত হয়েছে। এর সাহায্যে শুধুমাত্র কেনাকাটা এবং বিল পরিশোধ সহজ হয় না, ইমারজেন্সিতে এটি একটি স্বল্পমেয়াদী ঋণের মতো সাহায্যকারীও প্রমাণিত হয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠে যখন ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীর হঠাৎ মৃত্যু হয় এবং সে কার্ডের বাকি টাকা পরিশোধ করে যায়নি। এমতাবস্থায় এটি জানা জরুরি হয়ে পড়ে যে, ব্যাংক কি পরিবার থেকে ওই টাকা আদায় করবে নাকি ঋণটি নিজে থেকেই মাফ হয়ে যাবে।
আসুন সহজ ভাষায় বুঝে নেই যে ক্রেডিট কার্ড ধারকের মৃত্যুর পর ব্যাংকের ভূমিকা কী, পরিবারের উপর কী প্রভাব পড়ে এবং নিয়মাবলী কী বলে।
অনসিকিওর্ড ক্রেডিট কার্ড: দায়িত্ব শুধুমাত্র কার্ডধারকের
বেশিরভাগ ক্রেডিট কার্ড অনসিকিওর্ড লোনের শ্রেণীভুক্ত। এর অর্থ হলো ব্যাংক আপনার আয়, ক্রেডিট স্কোর এবং আর্থিক ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে এই ক্রেডিট সুবিধা প্রদান করে। এর জন্য কোনও গ্যারান্টি বা জামানত রাখা হয় না।
যদি কার্ডধারকের মৃত্যু হয় এবং কার্ডে কোনও বাকি থাকে, তাহলে ব্যাংক আইনত মৃতের পরিবারের কোনও সদস্যের উপর ওই টাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে পারে না। অর্থাৎ স্বামী, স্ত্রী, পিতা-মাতা বা সন্তানদের কোনও ব্যক্তিগত দায়িত্ব হয় না, যতক্ষণ না তারা ওই কার্ডের কো-জয়েন্ট হোল্ডার।
এই নিয়ম ব্যাংকিং নিয়মাবলী এবং ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক (RBI)-এর গ্রাহক সুরক্ষা নির্দেশিকার উপর ভিত্তি করে।
ব্যাংক কী করে? সম্পত্তি থেকে আদায়ের চেষ্টা
মৃতের মৃত্যুর পর যদি ক্রেডিট কার্ডে কোনও বাকি থাকে, তাহলে প্রথমে ব্যাংক মৃতের সম্পত্তির তথ্য সংগ্রহ করে। এই সম্পত্তি ‘Estate of the deceased’ নামে পরিচিত। এর মধ্যে মৃতের নামে ব্যাংক ব্যালেন্স, বিনিয়োগ, সম্পত্তি বা অন্যান্য চল ও অচল সম্পদ অন্তর্ভুক্ত।
ব্যাংক এই সম্পদ থেকে আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিজের বাকি টাকা আদায় করার চেষ্টা করে। এর জন্য ব্যাংক মৃত্যু প্রমাণপত্র এবং আইনগত উত্তরাধিকারীর সংশ্লিষ্ট নথি চায়।
যদি সম্পত্তি থেকে টাকা আদায় করা না যায়, তাহলে ব্যাংককে এই ঋণটি বাদ দিতে হয়, অর্থাৎ write-off করতে হয়। এই অবস্থায় পরিবারের লোকজনকে কোনও ধরণের আইনগত বা আর্থিক দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হয় না।
কখন মাফ হতে পারে ঋণ? এখানে শর্তাবলী
- কোনও সম্পত্তি নেই: যদি মৃতের কাছে কোনও ধরণের চল ও অচল সম্পত্তি না থাকে এবং ব্যাংকের কাছে বাকি আদায়ের কোনও উপায় না থাকে, তাহলে ব্যাংককে বাধ্য হয়ে এই ঋণটি মাফ করতে হয়।
- আইনগত উত্তরাধিকারী সম্পত্তি পরিত্যাগ করেছে: অনেক সময় আইনগত উত্তরাধিকারী মৃতের সম্পত্তি গ্রহণ করতে অস্বীকার করে। এমতাবস্থায় তারা উত্তরাধিকার সহ কোনও দায়িত্ব থেকেও মুক্ত থাকে।
- কোনও বীমা কভার আছে: কিছু প্রিমিয়াম ক্রেডিট কার্ডে ক্রেডিট লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিকল্পও মেলে। যদি গ্রাহক এটি নির্বাচন করে, তাহলে মৃত্যুর ক্ষেত্রে বীমা কোম্পানি বাকি পরিশোধ করে।
সিকিওর্ড ক্রেডিট কার্ড: ব্যাংক সুরক্ষা পায়
যাদের ক্রেডিট ইতিহাস ভালো নয়, তাদের ব্যাংক সিকিওর্ড ক্রেডিট কার্ড অফার করে। এই কার্ড সাধারণত একটি ফিক্সড ডিপোজিট (FD)-এর বিনিময়ে জারি করা হয়। FD-এর পরিমাণ কার্ডের ক্রেডিট লিমিটের সমান অথবা কিছুটা বেশি হয়।
যদি সিকিওর্ড কার্ডধারকের মৃত্যু হয়, তাহলে ব্যাংককে পরিবারের লোকজনের কাছে কোনও টাকা চাওয়ার প্রয়োজন হয় না। সে সরাসরি ওই FD নগদীকরণ করে নিজের টাকা আদায় করে নেয়। যদি FD-এর টাকা ক্রেডিট কার্ডের বাকির চেয়ে বেশি হয়, তাহলে বাকি টাকা পরিবারের আইনগত উত্তরাধিকারীকে ফেরত দেওয়া হয়।
এই প্রক্রিয়াটিও সম্পূর্ণ আইনগত এবং এতে কোনও বিরোধ হয় না।
পারসোনাল, হোম এবং অটো লোনে কী নিয়ম প্রযোজ্য
পারসোনাল লোন: এটিও অনসিকিওর্ড লোন। এখানেও ওই নিয়ম প্রযোজ্য যা ক্রেডিট কার্ডে প্রযোজ্য। যদি মৃতের কাছে কোনও সম্পত্তি না থাকে, তাহলে ব্যাংককে ঋণ মাফ করতে হয়।
হোম এবং অটো লোন: এগুলো সিকিওর্ড লোন, অর্থাৎ এখানে বাড়ি বা গাড়ি ব্যাংকের কাছে জামানত রাখা থাকে। এমতাবস্থায় যদি ঋণগ্রহীতার মৃত্যু হয় এবং EMI পরিশোধ বন্ধ হয়, তাহলে ব্যাংক ওই সম্পত্তি নিলাম করে নিজের টাকা আদায় করতে পারে। যদি আত্মীয়-স্বজন ওই ঋণ পরিশোধ করতে চায়, তাহলে তাদের আইনগত উত্তরাধিকারী হিসেবে ঋণের কিস্তি চালিয়ে যেতে হবে।
পরিবার কী করবে: জরুরি পরামর্শ
- মৃত্যু প্রমাণপত্র অবিলম্বে ব্যাংকে দিন: যেকোনও ক্রেডিট কার্ডধারকের মৃত্যু হলেই পরিবারকে ব্যাংককে এই তথ্য জানাতে হবে এবং মৃত্যু প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে।
- কোনও পরিশোধ করবেন না: যতক্ষণ না স্পষ্ট হয় যে আপনি উত্তরাধিকারী এবং সম্পত্তি গ্রহণ করছেন, ততক্ষণ কোনও টাকা ব্যাংককে পরিশোধ করবেন না। পরিশোধ করলে আপনি আইনগত দায়ী হতে পারেন।
- ক্রেডিট ব্যুরোকে জানান: যাতে কার্ডধারকের মৃত্যুর পর তার ক্রেডিট রিপোর্টে আপডেট করা যায় এবং ভবিষ্যতে কোনও আর্থিক প্রতারণা না হয়।
- বীমা পলিসির জানাচেনা করুন: অনেক সময় কার্ডধারকের কাছে জীবন বীমা বা ক্রেডিট কার্ড ইন্স্যুরেন্স থাকে। এমতাবস্থায় বীমা থেকে বাকি টাকা পরিশোধ করা যায়।