নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এখন গাড়ির লোনের সর্বাধিক মেয়াদ চার বছর নির্ধারিত করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো মানুষ যাতে দীর্ঘদিন ধারের বোঝা বহন না করে এবং দ্রুত তাদের লোন পরিশোধ করতে পারে।
আজকের সময়ে গাড়ি শুধুমাত্র একটা শখ বা বিলাসিতার জিনিস নয়, বরং এটি দৈনন্দিন জীবনের একটা প্রয়োজন হয়ে উঠেছে। অফিসে যাওয়া থেকে শুরু করে, সন্তানদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া এবং ছুটিতে পরিবার নিয়ে ঘুরতে যাওয়া— সব ক্ষেত্রেই একটি গাড়ি জীবনকে সহজ ও সুবিধাজনক করে তোলে। কিন্তু এই সুবিধা তখনই আনন্দের হয় যখন এটি বুদ্ধিমানের সাথে ও পরিকল্পনা করে কেনা হয়। ভুল আর্থিক সিদ্ধান্ত গাড়ির সাথে ধারের বোঝাও নিয়ে আসতে পারে, যার ফলে আর্থিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।
এই অবস্থায় একটি অত্যন্ত কার্যকর ও ব্যবহারিক সূত্র হলো ২০/৪/১০ নিয়ম, যা অনুসরণ করে যেকোনো মধ্যবিত্ত ব্যক্তি আর্থিক চাপ ছাড়াই তার পছন্দের গাড়িটি বাড়িতে নিয়ে আসতে পারে। এই নিয়ম গাড়ি কেনার সময় বাজেট ও ঋণ ব্যবস্থাপনার জন্য একটি চমৎকার নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করে।
কী ২০/৪/১০ নিয়ম?
এই নিয়ম তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর ভিত্তি করে— ডাউন পেমেন্ট, লোনের মেয়াদ এবং মাসিক ব্যয়ের সীমা। এই সূত্রটি এই গ্যারান্টি দেয় যে আপনি গাড়ি কিনার পর আপনার অন্যান্য ব্যয়ে কমিয়ে না দিয়ে আপনার আর্থিক অবস্থাকে স্থিতিশীল রাখতে পারবেন।
গাড়ির দামের ২০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট
এই নিয়মের প্রথম অংশ বলে যে আপনি যে গাড়িই কিনছেন না কেন, তার মোট দামের কমপক্ষে ২০ শতাংশ টাকা আপনাকে ডাউন পেমেন্ট হিসেবে দিতে হবে। এর প্রধান সুবিধা হলো আপনার মোট লোনের পরিমাণ কমে যায়, যার ফলে সুদের উপর সাশ্রয় হয় এবং মাসিক কিস্তিও কম হয়।
উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি ১০ লক্ষ টাকার গাড়ি কিনতে চান, তাহলে ২০ লক্ষ টাকা আপনাকে ডাউন পেমেন্ট হিসেবে জমা করতে হবে। এর ফলে আপনাকে মাত্র ৮ লক্ষ টাকার লোন নিতে হবে এবং আপনার আর্থিক অবস্থার উপর অপ্রয়োজনীয় চাপ পড়বে না।
লোনের মেয়াদ সর্বাধিক ৪ বছর
এই নিয়ম অনুযায়ী, গাড়ির লোনের মেয়াদ ৪ বছরের বেশি হওয়া উচিত নয়। সাধারণত গ্রাহক দীর্ঘ সময়ের জন্য লোন নেয় যাতে কিস্তি কম দেখায়, কিন্তু এর ফলে সুদ বেশি দিতে হয়। ছোট মেয়াদী লোনের ফলে শুধুমাত্র সুদের সাশ্রয়ই হয় না, বরং দ্রুত ঋণ পরিশোধের ফলে মানসিক শান্তিও পাওয়া যায়।
যদি লোন ৭ বছর ধরে চলে, তাহলে আপনাকে গাড়ির প্রকৃত দামের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ প্রদান করতে হতে পারে। অন্যদিকে ৪ বছরের মধ্যে লোন শেষ করে দেওয়ার ফলে আপনার ক্রেডিট স্কোরও শক্তিশালী হয় এবং আপনি ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে আর্থিকভাবে প্রস্তুত রাখতে পারেন।
মাসিক ব্যয় মোট আয়ের সর্বাধিক ১০ শতাংশ
এই নিয়মের তৃতীয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো গাড়ি সংক্রান্ত মোট মাসিক ব্যয় আপনার মাসিক আয়ের ১০ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়। এর মধ্যে আপনার ইএমআই, রক্ষণাবেক্ষণ, বীমা এবং জ্বালানী ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকে।
যদি আপনার মাসিক আয় ৬০ হাজার টাকা হয়, তাহলে গাড়িতে হওয়া মোট ব্যয় ছয় হাজার টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। এর ফলে অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যয়ের জন্য যথেষ্ট টাকা বাঁচে এবং আপনি জরুরী অবস্থার জন্যও প্রস্তুত থাকেন।
কেন এই নিয়ম গুরুত্বপূর্ণ?
ভারতে অধিকাংশ মানুষ গাড়ির লোনের উপর নির্ভর করে যানবাহন ক্রয় করে। এমন অবস্থায় যদি আর্থিক পরিকল্পনা ঠিক না হয়, তাহলে এই স্বপ্ন আর্থিক বোঝা হয়ে উঠতে পারে। ২০/৪/১০ নিয়ম এই অবস্থা থেকে বাঁচার পথ দেখায়। এটি শুধুমাত্র বাজেটের মধ্যে গাড়ি কেনার জন্যই সাহায্য করে না, বরং দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক ভারসাম্য বজায় রাখতেও সহায়তা করে।
টাটা এআইজি ইন্স্যুরেন্সের পরামর্শ অনুযায়ী, আপনার কেনা গাড়ির দাম আপনার বার্ষিক আয়ের ৫০ শতাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়। অর্থাৎ যদি আপনার বার্ষিক আয় ১২ লক্ষ টাকা হয়, তাহলে ছয় লক্ষ টাকার গাড়ি আপনার জন্য আদর্শ হবে। এই নিয়ম একই চিন্তাধারাকে শক্তিশালী করে এবং আপনার ক্ষমতার বাইরে ঋণ নেওয়া থেকে বিরত রাখে।
মানসিক শান্তি এবং উন্নত আর্থিক পরিকল্পনা
যখন আপনি অতিরিক্ত বোঝা ছাড়াই গাড়ি কিনেন, তখন আপনি তার সাথে যুক্ত দায়িত্বগুলিও আরও ভালোভাবে পালন করতে পারেন। সময়মতো কিস্তি পরিশোধ করা সহজ হয়, এবং আপনার মধ্যে ভবিষ্যতের প্রয়োজনের জন্য সঞ্চয় করার ক্ষমতা বজায় থাকে। অনেকে ইএমআই পরিশোধ করে-পরিশোধ করে ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং গাড়ির যত্নও নিতে পারে না, যার ফলে তার রক্ষণাবেক্ষণ बिगड़ता है। ২০/৪/১০ নিয়ম এই দ্বিধাদ্বন্দ্ব থেকে রক্ষা করে।
প্রথম গাড়ি কেনার জন্য বিশেষভাবে উপকারী
আপনি যদি প্রথমবারের জন্য গাড়ি কিনতে যাচ্ছেন, তাহলে এই নিয়ম আপনার জন্য আরও বেশি উপযোগী। অনেক সময় মানুষ তাদের প্রথম গাড়ি নির্বাচনের সময় আবেগপ্রবণ সিদ্ধান্ত নেয় এবং বাজেটের বাইরে গিয়ে গাড়ি কিনে নেয়। এর ফলে পরে তাদের অনুতাপ করতে হয়। কিন্তু ২০/৪/১০ নিয়ম আপনাকে এটি নিশ্চিত করতে সাহায্য করে যে আপনি আপনার আয় এবং ব্যয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সিদ্ধান্তই নেন।
ব্যাংক লোন এবং সুদের হার নিয়ে সতর্কতা
যখন আপনি গাড়ির লোন নেন, তখন এটিও প্রয়োজন যে আপনি সুদের হারের তুলনা করেন এবং প্রসেসিং ফি, ডাউন পেমেন্টের শর্তাবলী ইত্যাদির সম্পূর্ণ তথ্য নেন। অনেক সময় ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত আকর্ষণীয় ইএমআই স্কিমগুলি আসলে দীর্ঘ সময়ে বেশি ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে। চার বছরের মেয়াদে লোন নিয়ে আপনি এই জাল থেকেও বাঁচতে পারেন।
ইএমআই ক্যালকুলেশন অবশ্যই করুন
গাড়ি কেনার আগে আপনাকে অনলাইনে ইএমআই ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা উচিত, যাতে এটি স্পষ্ট হয় যে আপনার মাসিক কিস্তি কত হবে। সাথে সাথে এটিও দেখা উচিত যে তাতে বীমা এবং রক্ষণাবেক্ষণ যোগ করার পর মোট ব্যয় কত হচ্ছে এবং তা আপনার মাসিক আয়ের ১০ শতাংশের মধ্যে আছে কি না।