আজকের দিন, অর্থাৎ ২৩শে জুন, ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে একটি সোনালী অধ্যায় হিসেবে স্মরণীয়। ঠিক ১২ বছর আগে, ২৩শে জুন ২০০৩ সালে, দল ভারত ইংল্যান্ডকে তার নিজস্ব মাটিতে পরাজিত করে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির এই মর্যাদাপূর্ণ খেতাব নিজের করে নিয়েছিল।
খেলাধুলার খবর: আজ থেকে ঠিক ১২ বছর আগে ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে এমন এক দিন এসেছিল যা কোটি কোটি ভারতীয়ের হৃদয়ে গর্ব ও আনন্দের ঢেউ ছড়িয়ে দিয়েছিল। কথা হচ্ছে ২৩শে জুন ২০০৩ সালের, যখন এমএস ধোনির নেতৃত্বে দল ভারত ইংল্যান্ডকে তার নিজস্ব মাটিতে পরাজিত করে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির খেতাব জিতে নিয়েছিল। এই জয় কেবল একটি ট্রফি ছিল না, বরং এটি ছিল ভারতের কৌশলগত শক্তি, মাহির বুদ্ধিমত্তা এবং দলের সংগ্রামী মনোভাবের প্রতীক।
এই ফাইনাল ম্যাচটি প্রতিটি ক্রিকেট প্রেমিকে হাঁফ ছেড়ে বসে থাকতে বাধ্য করেছিল। বৃষ্টির প্রভাবে এই ম্যাচ ৫০ ওভারের পরিবর্তে ২০ ওভারের হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু রোমাঞ্চ একটুও কমেনি।
বৃষ্টির প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ফাইনাল, ম্যাচ হয়ে উঠলো ‘টি-টোয়েন্টি’র মতো
বার্মিংহামের মাঠে অনুষ্ঠিত এই মহামুখোমুখীতে বৃষ্টির কারণে ওভার কমিয়ে ২০-২০ করা হয়। টস জিতে ইংল্যান্ড প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। ভারতীয় ইনিংসের শুরু করেছিলেন রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ান। তবে রোহিত ৯ রান করে দ্রুত ফিরে গেলেও ধাওয়ান ৩১ রানের উপযোগী ইনিংস খেলেন।
এরপর মিডিল অর্ডারের মেরুদণ্ড বলে পরিচিত ত্রয়ী ধোনি, রায়না ও দীনেশ কার্তিক মাত্র ২ রান যোগ করতে পেরেছিলেন। ভারত বিপদে পড়েছিল। কিন্তু বিরাট কোহলি ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন পয়েন্ট সংগ্রহের দায়িত্ব বহন করেছিলেন। কোহলি ৪২ ও অশ্বিন ৩৩* রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন। তাদের দুজনের বদৌলতে ভারত ৭ উইকেটে ১২৯ রান তুলতে সক্ষম হয়।
ইংল্যান্ডের শুরু হলো ঝিমিয়ে, কিন্তু মিডিল অর্ডার আশা জাগালো
১৩০ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে ইংল্যান্ডের দলের শুরুও খুব খারাপ ছিল। অধিনায়ক অ্যালিস্টার কুক মাত্র ২ রান করে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান। ইয়ান বেল (১৩) ও জো রুট (৭)ও কিছুই করতে পারেননি। ৪৬ রানে ইংল্যান্ড ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল। এরপর মাঠে নেমে আসেন ইয়ন মর্গান ও রবি বোপারা, যাদের জুটি ভারতের শিবিরে উদ্বেগ বাড়িয়ে দেয়। এই দুই ব্যাটসম্যান ৫০ রানের জুটি গড়ে ইংল্যান্ডকে ১৬ বলে ২০ রানের দূরত্বে নিয়ে আসে।
১৮তম ওভার ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে প্রমাণিত হয়। ধোনি যখন ইশান্ত শর্মাকে বল দেন, তখন ক্রিকেট ভক্ত ও সমালোচকদের কাছে এ সিদ্ধান্ত আশ্চর্যজনক মনে হয়েছিল। এর আগে ইশান্ত কিছুটা ব্যয়বহুল প্রমাণিত হয়েছিলেন। মর্গান এই ওভারের দ্বিতীয় বলে ছক্কা মারেন, এরপর দুটি ওয়াইড বল—মনে হচ্ছিল ভারতের আশা এবার ভেঙে পড়বে।
কিন্তু এরপর এলো ধোনির জাদু। উইকেটের পিছনে দৌড়ে এসে মাহি ইশান্তকে কিছু বলেন—সম্ভবত একটা কৌশলগত পরামর্শ। এবং এর ফলাফল হলো পরবর্তী দুটি বলে ইশান্ত প্রথমে মর্গান এবং তারপর বোপারাকে আউট করেন। স্টেডিয়ামে বসা হাজার হাজার দর্শক ও টেলিভিশনে দেখা কোটি কোটি ভক্ত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন।
শেষ ওভার: অশ্বিনের নার্ভ-রেকিং পারফরম্যান্স
এখন ইংল্যান্ডের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৫ রান, এবং শেষ ওভারে বল করতে আসেন আর. অশ্বিন। প্রথম বলে কোনো রান হয়নি, দ্বিতীয় বলে ব্রড চার রান করেন। তৃতীয় বলে এক রান। এরপর দুই দুই রান হয়, এবং এখন শেষ বলে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ৬ রান। ব্যাটসম্যান ছিলেন জেমস ট্রেডওয়েল, বোলার অশ্বিন। শেষ বলটি ট্রেডওয়েল বলে ছুঁতে পারেননি, এবং ভারত ৫ রানে সেই ঐতিহাসিক জয় অর্জন করে।
এই জয়ের সাথে এমএস ধোনি আরও একটি ইতিহাস সৃষ্টি করেন। তিনি বিশ্বের প্রথম অধিনায়ক হিসেবে তিনটি আইসিসি ট্রফি—২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ এবং ২০০৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি—নিজের করে নেন। তার অধিনায়কত্বে ভারত কেবল চ্যাম্পিয়ন হয়নি, বরং বিশ্ব ক্রিকেটে তার শ্রেষ্ঠত্বও প্রমাণ করে।
এই ফাইনাল ম্যাচে চমৎকার পারফরম্যান্সের জন্য রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে ‘ম্যান অফ দ্য ম্যাচ’ নির্বাচিত করা হয়। তিনি ব্যাটে ৩৩ রানের দ্রুততম ইনিংস খেলার পাশাপাশি বলেও চমৎকার পারফরম্যান্স করেছিলেন। এছাড়াও তিনি টুর্নামেন্টের ‘গোল্ডেন বল অ্যাওয়ার্ড’ও পান।