সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভাইরাল ভিডিও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে যেখানে দাবি করা হচ্ছে যে সরকার ২০২৬ সালের মার্চ থেকে ৫০০ টাকার নোট বাতিল করতে যাচ্ছে। এই খবরে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
নয়াদিল্লি: সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন একটি ভিডিও দ্রুত ভাইরাল হচ্ছে, যেখানে দাবি করা হচ্ছে ২০২৬ সালের মার্চ থেকে ৫০০ টাকার নোট বাতিল করা হবে। এই খবরে সাধারণ জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ও বিভ্রান্তির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ভিডিওতে বলা হচ্ছে সরকার ধীরে ধীরে এই উচ্চ মূল্যমানের নোট প্রচলন থেকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে, যাতে ডিজিটাল লেনদেনকে উৎসাহিত করা যায়। কিন্তু এখন এই বিষয়ে সরকারের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া এসেছে।
সত্যি কী?
- সরকার এবং ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক (RBI) — উভয়েই এই দাবিকে সম্পূর্ণরূপে নাকচ করে দিয়েছে।
- PIB ফ্যাক্ট চেক, যা সরকারের আনুষ্ঠানিক তথ্য যাচাই ইউনিট, তা স্পষ্ট করেছে:
- ৫০০ টাকার নোট এখনও বৈধ মুদ্রা (Legal Tender)।
- এটিকে প্রচলন থেকে সরিয়ে নেওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই।
৫০০ টাকার নোট: বর্তমান অবস্থা
২০১৬ সালে নোট বাতিলের পর ভারত সরকার এবং ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক (RBI) ২০০০ এবং ৫০০ টাকার নতুন নোট প্রকাশ করেছিল। যদিও পরে ২০০০ টাকার নোট প্রচলন থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে, তবে ৫০০ টাকার নোট এখনও দেশের সর্বোচ্চ মূল্যমানের মুদ্রা। বর্তমানে দেশে প্রচলিত মোট মুদ্রার মধ্যে ৫০০ টাকার নোটের পরিমাণগত অংশ প্রায় ৪১% এবং মূল্যের ভিত্তিতে প্রায় ৮৬%। এটি দেখায় যে এই নোটটি সাধারণ নাগরিকদের দৈনন্দিন লেনদেনে সর্বাধিক ব্যবহৃত হচ্ছে।
ভাইরাল ভিডিও থেকে ছড়িয়ে পড়া গুজব
সম্প্রতি ইউটিউবে একটি ১২ মিনিটের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে দাবি করা হয়েছে যে সরকার ২০২৬ সালের মার্চ থেকে ধাপে ধাপে ৫০০ টাকার নোট বাতিল করতে যাচ্ছে। এই ভিডিওটি ৫ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে, যার ফলে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ও উদ্বেগের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার পর সাধারণ জনগণের মধ্যে এই প্রশ্ন উঠেছে যে কি ২০০০ টাকার নোটের মতো ৫০০ টাকার নোটও বাতিল করা হবে?
সরকার ও RBI কী বলেছে?
এই গুজবগুলির উপর বিরতি আনতে সরকারের আনুষ্ঠানিক ফ্যাক্ট-চেকিং ইউনিট PIB ফ্যাক্ট চেক স্পষ্ট করেছে যে ৫০০ টাকার নোট সম্পূর্ণ বৈধ এবং প্রচলনে আছে। একটি আনুষ্ঠানিক পোস্টে বলা হয়েছে:
- ৫০০ টাকার নোট বাতিল করা হয়নি এবং এটি বৈধ মুদ্রা (লিগ্যাল টেন্ডার)। এই ধরণের কোনও খবর শেয়ার করার আগে আনুষ্ঠানিক উৎস থেকে যাচাই করে নেওয়া উচিত।
- অর্থ মন্ত্রণালয় এবং ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক (RBI) এর পক্ষ থেকে কোনও ধরণের নোট বাতিল বা ৫০০ টাকার নোট প্রচলন থেকে সরিয়ে নেওয়ার কোনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা জারি করা হয়নি।
- সরকারের ডিজিটাল পেমেন্ট এবং ছোট নোট নিয়ে নীতি — বিস্তারিত জানুন:
সরকারের ফোকাস
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে স্পষ্ট করেছেন যে সরকারের প্রধান লক্ষ্য হল ডিজিটাল লেনদেনকে উৎসাহিত করা এবং একই সাথে কম মূল্যমানের (low denomination) নোটের ব্যবহারকে উৎসাহিত করা।
- কেন এই নীতি গুরুত্বপূর্ণ?
- লেনদেন স্বচ্ছ হয়।
- কর সংগ্রহ উন্নত হয়।
- নগদ অর্থের উপর নির্ভরতা কমে, যার ফলে জাল নোটের সমস্যায়ও কমতি আসে।
- ছোট নোট ব্যবহারের ফলে।
- দৈনন্দিন কেনাকাটায় সুবিধা হয়।
- বাজারে ভারসাম্য বজায় থাকে এবং নগদ অর্থের উন্নত প্রবাহ ঘটে।
- ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেমকে শক্তিশালী করা হচ্ছে যাতে আরও বেশি মানুষ নগদবিহীন লেনদেন করে।
- যদিও, স্থানীয় পর্যায়ে দেখা গেছে যে আজও বেশিরভাগ লোক ৫০০ টাকার নোটই সর্বাধিক ব্যবহার করে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকা এবং ছোট ব্যবসায়।
নোট বাতিলের পরের মুদ্রা ব্যবস্থা
- ২০১৬ সালের নোট বাতিলের পর, ভারতের মুদ্রা ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন দেখা গেছে। সেই সময় ৫০০ এবং ১০০০ টাকার পুরানো নোট বাতিল করা হয়েছিল এবং নতুন নকশার সাথে ৫০০ এবং ২০০০ টাকার নোট প্রকাশ করা হয়েছিল।
- ২০২৩ সালে RBI ২০০০ টাকার নোট প্রচলন থেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা করে।
- এর পর ৫০০ টাকার নোট সর্বোচ্চ মূল্যমানের বৈধ মুদ্রা হিসেবে রয়ে গেছে।
- বর্তমানে ১০, ২০, ৫০, ১০০, ২০০ এবং ৫০০ টাকার নোট প্রচলনে আছে।
গুজব থেকে বাঁচার পরামর্শ
সরকার এবং PIB নাগরিকদের অনুরোধ করেছে যে তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া কোনও অপ্রমাণিত তথ্য বা ভিডিওতে বিশ্বাস করবেন না। সরকার পরামর্শ দিয়েছে যে:
- কোনও আর্থিক বা মুদ্রা সম্পর্কিত তথ্যের যাচাই RBI, অর্থ মন্ত্রণালয়, বা PIB ফ্যাক্ট চেকের মতো আনুষ্ঠানিক উৎস থেকে করুন।
- যাচাই না করে গুজব ছড়ানো উপাদান শেয়ার করবেন না।
