পঞ্জাবের ভগবন্ত মান সরকার দুর্নীতি দমনে কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে বড় ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। জেলগুলির কার্যকারিতা উন্নত করার লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন জেলে কর্মরত ২৫ জন আধিকারিককে সাসপেন্ড করেছে।
Punjab Police Officers Suspended: পঞ্জাবে মাদক এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইকে আরও জোরদার করতে ভগবন্ত মান সরকার একটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। রাজ্যের জেলগুলিতে বিদ্যমান দুর্নীতি এবং মাদক ব্যবসার গভীর নেটওয়ার্কের উপর আঘাত হেনে ২৫ জন জেল আধিকারিক ও কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ভগবন্ত মান সরকার স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, মাদক বিরোধী লড়াইয়ে কোনো আপস করা হবে না, তা জেল প্রশাসনের অভ্যন্তরে হলেও।
সরকার কর্তৃক বরখাস্তকৃত ২৫ জন আধিকারিকের মধ্যে ৩ জন ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট এবং ২ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারিনটেনডেন্ট-এর মতো উচ্চ পদে থাকা আধিকারিকও রয়েছেন। এছাড়াও, অন্যান্য আধিকারিক ও কর্মচারী বিভিন্ন জেলে কর্মরত ছিলেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রে খবর পাওয়া গেছে, পঞ্জাব সরকার এই সকল আধিকারিক ও কর্মচারীর দুর্নীতি এবং মাদক নেটওয়ার্কের সঙ্গে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছে।
জেলগুলিতে মাদক নেটওয়ার্ক, সরকারের কঠোর নজরদারি
পঞ্জাবের জেলগুলি দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। বহুবার কয়েদিদের কাছে মাদক পৌঁছানোর ঘটনা সামনে এসেছে। এমন ঘটনায় জেল কর্মীদের জড়িত থাকার সম্ভাবনাও ক্রমাগত উঠেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভগবন্ত মান সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে এই ২৫ জন আধিকারিককে তাৎক্ষণিকভাবে সাসপেন্ড করেছে।
সূত্রের খবর, জেলগুলিতে দুর্নীতি এবং মাদকের শিকড় কতটা গভীরে প্রোথিত, তা সরকারের সাম্প্রতিক রিপোর্টে স্পষ্ট হয়েছে। এই রিপোর্টগুলিতে বলা হয়েছিল যে, জেল কর্মীদের সহায়তায় মোবাইল ফোন, মাদক এবং অন্যান্য অবৈধ সামগ্রী কয়েদিদের কাছে সরবরাহ করা হচ্ছে।
মাদক বিরোধী অভিযানে পঞ্জাব সরকার
মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত মান আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, তাঁর সরকার পঞ্জাবের যুব সমাজকে মাদকের গ্রাস থেকে মুক্ত করে একটি নিরাপদ ও সুস্থ সমাজ দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই লক্ষ্যে, জেলগুলির অভ্যন্তর থেকে মাদক ব্যবসার শিকড় উপড়ে ফেলা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছিল। সম্প্রতি মান সরকার ডেটা ইন্টেলিজেন্স এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা ইউনিট তৈরি করতে অনন্যা বিড়লা ফাউন্ডেশনের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
এর উদ্দেশ্য হল মাদক পাচার নিয়ন্ত্রণ করা এবং পুনর্বাসনকে আরও কার্যকর করতে সহায়তা করা। মুখ্যমন্ত্রী মান বলেছেন, “আমাদের রাজ্যে মাদক একটি অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি নির্মূল করার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
জনগণকেও সচেতন করা হচ্ছে
শুধুমাত্র ব্যবস্থা গ্রহণই নয়, সরকার সমাজে সচেতনতা প্রসারের উপরও জোর দিচ্ছে। রিহ্যাব সেন্টারগুলির সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে এবং মাদকাসক্তদের সেখানে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও কাউন্সেলিং-এর সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। গ্রামীণ এলাকায় বিশেষ সচেতনতা অভিযান চালানো হচ্ছে, যাতে মানুষ মাদক থেকে দূরে থাকে এবং তাদের পরিবারকে রক্ষা করতে পারে।
মান সরকার জেল কর্মীদের স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, কোনো আধিকারিক বা কর্মচারী মাদক পাচার বা কয়েদিদের অবৈধ সুবিধা দেওয়ার সঙ্গে জড়িত থাকলে, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “আমরা জেলগুলিকে সংশোধন কেন্দ্রে পরিণত করার সংকল্প নিয়েছি, মাদক ও অপরাধীদের নিরাপদ আড্ডাখানায় নয়। যে সকল আধিকারিক তাদের দায়িত্বের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, তাদের শাস্তি অবশ্যই হবে।”
রাজনৈতিক মহলেও আলোড়ন
সরকারের এই বড় পদক্ষেপের পর রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধী দলগুলির বক্তব্য, জেল বিভাগে দুর্নীতির এই পরিস্থিতি আগে থেকেই উদ্বেগজনক ছিল, তবে এটি সংস্কারের জন্য সরকারকে অবিরাম প্রচেষ্টা করতে হবে। অন্যদিকে, সাধারণ মানুষের মধ্যে এই পদক্ষেপ ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে। মানুষ মনে করছে যে পঞ্জাব সরকার এখন মাদক বিরোধী অভিযানে তৃণমূল পর্যায়েও কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং শুধু লোক দেখানো কাজ করা হবে না।