হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘লিভড হিন্দু রিলিজন’ কোর্স নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। একজন ছাত্রের অভিযোগের পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একাডেমিক স্বাধীনতার সমর্থন করে জানিয়েছে যে, এই কোর্সটি ধর্মীয় অধ্যয়নের অন্তর্গত।
University of Houston: আমেরিকার হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ে (University of Houston) ‘লিভড হিন্দু রিলিজন’ নামক একটি কোর্স নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। একজন ছাত্রের অভিযোগের পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে স্পষ্টীকরণ দিতে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, তারা একাডেমিক স্বাধীনতাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকে এবং শিক্ষকগণ জটিল ও সংবেদনশীল বিষয়গুলি নিয়ে স্বাধীনভাবে চিন্তাভাবনা করতে পারেন।
কোর্সটি নিয়ে পর্যালোচনা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিক্রিয়া
ছাত্রের অভিযোগের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডীন এবং ধর্মীয় অধ্যয়ন বিভাগের প্রধান বিষয়টি তদন্ত করেছেন এবং সংশ্লিষ্ট অধ্যাপকের সাথে আলোচনার জন্য পাঠিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, এই কোর্সটি ধর্মীয় অধ্যয়নের অন্তর্গত, যেখানে বিভিন্ন ধর্মের সামাজিক ও ঐতিহাসিক দিকগুলি ব্যাখ্যা করার জন্য নির্দিষ্ট শিক্ষাগত শব্দ ব্যবহার করা হয়।
‘ফান্ডামেন্টালিজম’ শব্দ নিয়ে বিতর্ক
ছাত্রের আপত্তির কেন্দ্রবিন্দু ছিল ‘ফান্ডামেন্টালিজম’ শব্দটির ব্যবহার, যা হিন্দু ধর্মের সাথে যুক্ত করা হয়েছিল। এ ব্যাপারে স্পষ্টীকরণ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, ‘ফান্ডামেন্টালিজম’ শব্দটি কোনও ধর্মের মূল শিক্ষাগুলির রক্ষাকারী আন্দোলনকে বোঝায় এবং এটি কোনও নেতিবাচক বা বৈষম্যমূলক শব্দ নয়। ঐতিহাসিকভাবে ধর্মীয় প্রবণতা বুঝতে এটি ব্যবহৃত হয়, কোনও নির্দিষ্ট ধর্মকে লক্ষ্য করে নয়।
অধ্যাপক উল্লেড়ি কোর্সের উদ্দেশ্য স্পষ্ট করেছেন
এই সম্পূর্ণ বিতর্কের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কোর্সের শিক্ষক অধ্যাপক অ্যারন মাইকেল উল্লেড়ি। তিনি বলেছেন যে, তাঁর কোর্সের উদ্দেশ্য হিন্দু ধর্মকে সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গিতে নয় বরং এর বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও সামাজিক দিকগুলি নিয়ে আলোচনা করা। তিনি জানিয়েছেন যে, এই কোর্সে হিন্দু ধর্মের প্রাচীনকাল থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত রূপগুলি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যাতে ছাত্ররা ধর্মের উন্নয়ন ভালোভাবে বুঝতে পারে।
হিন্দু ধর্ম এবং হিন্দুত্ব নিয়ে দেওয়া স্পষ্টীকরণ
অধ্যাপক উল্লেড়ি হিন্দু ধর্ম এবং হিন্দুত্ব নিয়েও স্পষ্টীকরণ দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন যে, ‘হিন্দু’ শব্দটি প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যে পাওয়া যায় না, বরং এটি ঐতিহাসিকভাবে একটি ভৌগোলিক পরিচয়ের সাথে যুক্ত। হিন্দু ধর্মকে কোনও একক সংজ্ঞায় আবদ্ধ করা কঠিন কারণ এর অনেক রূপ ও ঐতিহ্য রয়েছে।
তিনি আরও বলেছেন যে, ‘হিন্দুত্ব’ শব্দের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ১৯২২ সালের সাথে যুক্ত এবং এটি ভারতীয় রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে। তাঁর কোর্স ‘লিভড হিন্দু রিলিজন’ এই বিষয়টির উপর কেন্দ্রীভূত যে, মানুষ বাস্তব জীবনে কিভাবে হিন্দু ধর্ম পালন করে এবং সময়ের সাথে সাথে এটি কীভাবে বিকশিত হয়েছে।
অধ্যাপক উল্লেড়ি শেষে আরও বলেছেন যে, তাঁর কোর্স নিয়ে কিছু মিডিয়া রিপোর্টে তাঁর মতামতকে প্রেক্ষাপট থেকে বাদ দিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি কখনোই হিন্দু ধর্মকে অবিশ্বাসী ধর্ম হিসেবে উপস্থাপন করেননি। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন যে, এই কোর্সটি কোনও ধর্মের বিরুদ্ধে নয়, বরং এটি দেখায় যে কীভাবে ধর্ম সময়ের সাথে পরিবর্তিত ও বিকশিত হয়।
