সোনার গাছ। তেনালিরামের গল্প: খ্যাতনামা মূল্যবান গল্প Subkuz.Com-এ!
খ্যাতনামা ও অনুপ্রেরণামূলক গল্প, সোনার গাছ, উপস্থাপন করা হচ্ছে।
তেনালিরাম তার বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে সবসময় এমনভাবে কাজ করতেন যাতে বিজয়নগরের মহারাজ কৃষ্ণদেব অবাক হয়ে যেতেন। এবার তিনি চালাকি করে রাজাকে তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করেছিলেন। একবার রাজা কৃষ্ণদেব কোনও কাজে কাশ্মীরে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি একটি সোনালী রঙের ফুলের গাছ দেখতে পান। এই ফুল মহারাজাকে এত পছন্দ হলো যে বিজয়নগরে ফিরে আসার সময় তিনি গাছটির একটি চারা নিয়ে আসেন। মহলে পৌঁছেই তিনি মালিকে ডাকলেন। মালি আসামাত্র মহারাজ তাকে বললেন, “দেখো! এই গাছটি আমাদের বাগানে এমনভাবে লাগাও যাতে আমি আমার ঘর থেকে প্রতিদিন এটি দেখতে পারি। এর সোনালী রঙের ফুল ফুটবে, যা আমাকে খুব পছন্দ। এই গাছের খুব যত্ন করো। যদি এর সাথে কিছু হয়, তাহলে তোমাকে মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে।”
মালি মাথা নাড়িয়ে রাজার কাছ থেকে গাছটি নিল এবং রাজার ঘরের সামনে লাগালো। দিন-রাত মালি ফুলটির যত্ন করতে লাগলো। দিন যাওয়ার সাথে সাথে এর সোনালী রঙের ফুল ফুটতে শুরু করলো। প্রতিদিন রাজা জেগে উঠলে প্রথমে এটি দেখতেন এবং তারপর দরবারে যেতেন। যদি কোনো দিন রাজাকে মহলের বাইরে যেতে হতো, তাহলে ফুলটি না দেখার কারণে তার মন খারাপ হয়ে যেত। একদিন সকালে যখন রাজা ফুলটি দেখার জন্য তার জানালায় এলেন, তখন তিনি ফুলটি দেখতে পেলেন না। অবিলম্বে তিনি মালিকে ডাকলেন। মহারাজ মালিকে জিজ্ঞাসা করলেন, “সে গাছটি কোথায় গেল? আমি এর ফুল কেন দেখতে পাচ্ছি না?” উত্তরে মালি বললো, “মহারাজ! গতকাল সন্ধ্যায় আমার ছাগলটি তা খেয়ে ফেলেছে।”
এই কথা শুনে রাজার রাগ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেল। তিনি মালিকে দুই দিনের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আদেশ দিলেন। সেই সময় সৈন্যরা এলো এবং তাকে কারাগারে বন্দী করলো।
মালির স্ত্রী যখন এই বিষয়টি জানতে পারলেন, তখন তিনি রাজার কাছে দরবারে ফরিয়াদ করতে এলেন। রাগে রাজা তার এক কথাই শুনলেন না। কাঁদতে কাঁদতে তিনি দরবার থেকে চলে যেতে লাগলেন। সেই সময় একজন ব্যক্তি তাকে তেনালিরামের সাথে দেখা করার পরামর্শ দিলেন। কাঁদতে কাঁদতে মালির স্ত্রী তেনালিরামকে তার স্বামীর মৃত্যুদণ্ড এবং সোনার ফুল সম্পর্কে বললেন। তার সব কথা শুনে তেনালিরাম তাকে বুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন। পরের দিন রাগে মালির স্ত্রী সোনার ফুল খাওয়া ছাগলটিকে চত্ত্বরে নিয়ে গেলেন এবং লাঠি দিয়ে মারতে লাগলেন। এভাবে মারতে মারতে ছাগলটি আহত হলো। বিজয়নগর রাজ্যে এভাবে প্রাণীর সাথে দুর্ব্যবহার করা নিষিদ্ধ ছিল। এটাকে নিষ্ঠুরতা বলে মনে করা হত, তাই কিছু লোক মালির স্ত্রীর এই কাজের অভিযোগ নগর কোতোয়ালকে করল।
পুরো বিষয়টি জানার পর নগর কোতোয়ালের সৈন্যরা জানতে পারল যে মালিকে দেওয়া শাস্তির কারণে সে রেগে ছিল। এটা জেনে সৈন্যরা এই বিষয়টি দরবারে উপস্থাপন করল। মহারাজ কৃষ্ণরাজ জিজ্ঞাসা করলেন যে, তোমরা একটা প্রাণীর সাথে এত খারাপ কিভাবে ব্যবহার করতে পারো? “এমন একটা ছাগল যার কারণে আমার পুরো ঘর ভেঙে পড়তে চলেছে। আমি বিধবা হতে চলেছি এবং আমার বাচ্চারা অনাথ হতে চলেছে। আমি ছাগলটির সাথে কিভাবে ব্যবহার করব, মহারাজ?” মালির স্ত্রী উত্তর দিলেন। রাজা কৃষ্ণরাজ বললেন, “আমি তোমার কথা বুঝতে পারছি না। এই নিরীহ প্রাণী তোমার ঘর কিভাবে ভেঙে ফেলতে পারে?” তিনি বললেন, “মহারাজ! এটি সেই ছাগল যা আপনার সোনার গাছটি খেয়ে ফেলেছিল। এই কারণে আপনি আমার স্বামীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। ভুল ছিল ছাগলটির, কিন্তু শাস্তি পাচ্ছে আমার স্বামী। শাস্তি আসলে ছাগলটিকেই পেতে হতো, তাই আমি তাকে লাঠি দিয়ে মারছিলাম।”
এখন মহারাজ বুঝতে পারলেন যে ভুলটি মালির নয়, ছাগলটির। এটা বুঝতে পেরে তিনি মালির স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তোমার মধ্যে এত বুদ্ধিমত্তা কোথায় আসলো যে তুমি এভাবে আমার ভুল বুঝিয়ে দিতে পারলে? তিনি বললেন যে, মহারাজ, কাঁদার বাইরে আমার আর কিছু ভাবার ছিল না। এ সব তেনালিরাম মহাশয় আমাকে বুঝিয়েছেন। আবার রাজা কৃষ্ণরায় তেনালিরামের প্রতি গর্ব অনুভব করলেন এবং বললেন যে তেনালিরাম, তুমি আমাকে আবার একটা বড় ভুল করতে বাঁচিয়েছ। এ কথা বলে মহারাজ মালির মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে দিলেন এবং তাকে কারাগার থেকে মুক্ত করার আদেশ দিলেন। সাথে সাথে তেনালিরামকে তার বুদ্ধিমত্তার জন্য পঞ্চাশ হাজার সোনার মুদ্রা উপহার দিলেন।
এই গল্প থেকে আমরা শিক্ষা পাই যে – সময়ের আগে কখনোই হার মানা উচিত নয়। চেষ্টা করলে বড় থেকে বড় সমস্যার মোকাবেলা করা যায়।
বন্ধুরা, subkuz.com এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে আমরা ভারত ও বিশ্বের নানা ধরণের গল্প ও তথ্য প্রদান করে থাকি। আমাদের চেষ্টা এই ধরনের আকর্ষণীয় ও অনুপ্রেরণামূলক গল্প সহজ ভাষায় আপনাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এই ধরনের অনুপ্রেরণামূলক গল্পের জন্য subkuz.com-এ পড়তে থাকুন।