শেখচিল্লির খিচুড়ির গল্প
একবার শেখচিল্লি তার শ্বশুরবাড়িতে শাশুড়ির সাথে দেখা করতে গেল। জামাই আসার খবর পেয়েই শাশুড়িমা শেখের জন্য খিচুড়ি বানাতে শুরু করে দিলেন। শেখও কিছুক্ষণ পর শ্বশুরবাড়ি পৌঁছালেন। সেখানে পৌঁছেই শাশুড়ির সাথে দেখা করার জন্য শেখ সরাসরি রান্নাঘরে চলে গেলেন। শাশুড়ির সাথে কথা বলার সময় হঠাৎ শেখচিল্লির হাত উপরে লাগে আর ঘি ভর্তি একটি পাত্র সরাসরি খিচুড়ির উপর পড়ে যায়। শাশুড়ি খুব রেগে গেলেন, কিন্তু জামাইয়ের উপর তিনি রাগ করতে পারলেন না। রাগ চেপে রেখে শেখচিল্লিকে তার শাশুড়িমা আদর করে খিচুড়ি খাওয়ালেন। সেটা খাওয়া মাত্রই শেখ খিচুড়ির ভক্ত হয়ে গেলেন, কারণ পুরো এক পাত্র ঘি পড়ার কারণে খিচুড়ি আরও বেশি সুস্বাদু হয়ে গিয়েছিল। শেখ শাশুড়িকে বললেন যে এর স্বাদ তার খুব ভালো লেগেছে। তিনি যেন এর নাম বলে দেন, যাতে তিনি বাড়িতে গিয়েও বানিয়ে খেতে পারেন।
শেখচিল্লিকে তার শাশুড়িমা বললেন যে এর নাম খিচুড়ি। শেখ আগে কখনও খিচুড়ি শব্দটা শোনেননি। তিনি শ্বশুরবাড়ি থেকে নিজের বাড়ির দিকে যাওয়ার সময় এই শব্দটি বারবার বলতে লাগলেন, যাতে নামটা ভুলে না যান। খিচুড়ি-খিচুড়ি-খিচুড়ি বলতে বলতে শেখচিল্লি শ্বশুরবাড়ি থেকে একটু দূরে গিয়ে থামলেন। এই সময় শেখ খিচুড়ির নাম জপ করা ভুলে গেলেন। যেই মনে পড়ল, অমনি তিনি খিচুড়িকে ‘খাচিড়ি-খাচিড়ি’ বলতে শুরু করলেন। এই শব্দ জপ করতে করতে শেখচিল্লি রাস্তার দিকে এগিয়ে চললেন। কিছু দূরে একজন কৃষক তার ফসলকে পাখি তাড়ানোর জন্য ‘উড়চিঁড়ি-উড়চিঁড়ি’ বলছিল। তখনই পাশ থেকে শেখচিল্লি ‘খাচিড়ি-খাচিড়ি’ বলতে বলতে যাচ্ছিল। এটা শুনে কৃষকের রাগ হয়ে গেল।
সে দৌড়ে গিয়ে শেখচিল্লিকে ধরল এবং বলল যে সে এখানে পাখি তাড়ানোর চেষ্টা করছে, আর সে তার ফসলকে ‘খাচিড়ি-খাচিড়ি’ বলছে। তার তো ‘উড়চিঁড়ি’ বলা উচিত। এখন থেকে সে শুধু ‘উড়চিঁড়ি’ বলবে। এরপর শেখচিল্লি কৃষকের কথা শুনে ‘উড়চিঁড়ি-উড়চিঁড়ি’ বলতে বলতে হাঁটতে লাগল। সেই শব্দ জপ করতে করতে সে একটি পুকুরের ধারে পৌঁছল। সেখানে একজন লোক অনেকক্ষণ ধরে মাছ ধরার চেষ্টা করছিল। সে শেখচিল্লিকে ‘উড়চিঁড়ি-উড়চিঁড়ি’ জপতে শুনে ফেলল। সে শেখচিল্লিকে ধরে বলল যে সে ‘উড়চিঁড়ি’ বলতে পারবে না। তার কথা শুনে পুকুরের সব মাছ পালিয়ে যাবে। এখন থেকে সে শুধু ‘আসো, ফেঁসে যাও’ বলবে।
শেখচিল্লির মাথায় এটাই গেঁথে গেল। সে ‘আসো, ফেঁসে যাও’ বলতে বলতে এগিয়ে যেতে লাগল। কিছুক্ষণ পর তার সামনে দিয়ে কয়েকজন চোর যাচ্ছিল। তারা শেখের মুখে ‘আসো, ফেঁসে যাও’ শুনে তাকে ধরে মারতে শুরু করল। তারা বলল যে তারা চুরি করতে যাচ্ছে, আর সে বলছে ‘আসো, ফেঁসে যাও’। তারা ফেঁসে গেলে কী হবে? এখন থেকে সে শুধু বলবে ‘আসো, রেখে যাও’। মারধোর খাওয়ার পর শেখচিল্লি ‘আসো, রেখে যাও’ বলতে বলতে এগিয়ে যেতে লাগল। সেই সময় রাস্তায় একটি শ্মশান পড়ল। সেখানে কিছু লোক মৃত মানুষকে নিয়ে এসেছিল। ‘আসো, রেখে যাও’ শুনে তাদের সকলের খারাপ লাগল। তারা বলল, “আরে! ভাই তুই এটা কী বলছিস? যদি তোর কথা মতো হয়, তাহলে তো কেউ বেঁচে থাকবে না। তুই এরপর থেকে শুধু বলবি ‘এমন যেন কারও সাথে না হয়’।”
শেখচিল্লি এটাই বলতে বলতে সামনের দিকে এগোতে লাগল। তখনই রাস্তায় এক রাজকুমারের বিয়ের শোভাযাত্রা বের হচ্ছিল। শোভাযাত্রায় সকলে আনন্দ করে নাচতে নাচতে যাচ্ছিল, আর তারা শেখের মুখে ‘এমন যেন কারও সাথে না হয়’ শুনে ফেলল। সকলের খুব খারাপ লাগল। তারা শেখকে ধরে বলল যে এমন শুভ সময়ে সে কেন খারাপ কথা বলছে? এখন থেকে সে শুধু বলবে ‘এমন যেন সবার সাথে হয়’। চিল্লি এখন এটাই বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি পৌঁছাল। সে বাড়ি তো পৌঁছাল, কিন্তু খিচুড়ির নাম তার মনে ছিল না। কিছুক্ষণ বিশ্রাম করার পর সে তার স্ত্রীকে বলল যে আজ তার মা তাকে খুব সুস্বাদু একটা জিনিস খাইয়েছে। এখন সেও যেন তাকে সেটাই বানিয়ে খাওয়ায়। এটা শুনেই স্ত্রী সেই খাবারের নাম জানতে চাইল। শেখচিল্লি অনেক চেষ্টা করল, কিন্তু তার খিচুড়ি শব্দটা মনে পড়ল না। তার মাথায় শেষ পর্যন্ত জপ করা শব্দগুলোই ছিল।
তখন সে রেগে গিয়ে স্ত্রীকে বলল যে সে কিছু জানে না, শুধু সে যেন তাকে সেই জিনিসটা বানিয়ে খাওয়ায়। স্ত্রী রেগে গিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল। সে বলল যে যখন সে জানেই না কী বানাতে হবে, তখন সে কী করে বানাবে? তার পেছন পেছন শেখচিল্লিও যেতে লাগল। সে রাস্তায় আস্তে আস্তে তার স্ত্রীকে বলতে লাগল, চলো বাড়ি যাই, আর তুমি আমাকে সেই খাবারটা বানিয়ে দিও। স্ত্রী আরও রেগে গেল। পাশ থেকেই এক মহিলা তাদের দুজনকে দেখছিল। শেখকে আস্তে আস্তে স্ত্রীর সাথে কথা বলতে দেখে সেই মহিলা শেখকে জিজ্ঞেস করল যে কী হয়েছে, তারা দুজনে এখানে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কী খিচুড়ি পাকাচ্ছে? যেই শেখচিল্লি খিচুড়ি শব্দটা শুনল, অমনি তার মনে পড়ে গেল যে তার শাশুড়িমাও খাবারের এই নামটাই বলেছিলেন। সে সাথে সাথেই তার স্ত্রীকে বলল যে সেই খাবারের নাম খিচুড়ি। খাবারের নাম জানতে পেরেই শেখের স্ত্রীর রাগ কমে গেল, আর তারা দুজনে খুশিতে বাড়ি ফিরে গেল।
এই গল্প থেকে আমরা এই শিক্ষা পাই যে – কারও বলা কথা বা নতুন শব্দ ভুলে যাওয়ার ভয় থাকলে, সেটা লিখে রাখা উচিত। শুধু সেটা জপতে থাকলে শব্দ ভুল হয়ে যায়, আর কথার মানেও বদলে যায়।