শহীদ বৈকুণ্ঠ শুক্লের নামে গয়া কেন্দ্রীয় কারাগারের নামকরণের দাবি

🎧 Listen in Audio
0:00

১৯৩৪ সালের ১৪ই মে গয়া কেন্দ্রীয় কারাগারে শহীদ বৈকুণ্ঠ শুক্লকে মাত্র ২৭ বছর বয়সে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়, এবং এটিই এই কারাগারের প্রথম ও শেষ ফাঁসির ঘটনা ছিল। বৈকুণ্ঠ শুক্লের ত্যাগ ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। এখন, স্থানীয়রা দাবি করছেন যে, যেমন মুজ্জফরপুর ও ভাগলপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের নাম শহীদদের নামে রাখা হয়েছে, তেমনি গয়া কেন্দ্রীয় কারাগারের নামও শহীদ বৈকুণ্ঠ শুক্লের নামে রাখা উচিত, যাতে তাঁর অবদানকে সম্মানিত করা যায়।

বৈকুণ্ঠ শুক্লের প্রারম্ভিক জীবন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামে অবদান

বৈকুণ্ঠ শুক্লের জন্ম ১৮৬০ সালে वैशाली জেলার জালালপুর গ্রামে হয়েছিল। ছোটবেলা থেকেই তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে অনুপ্রাণিত ছিলেন এবং শীঘ্রই তাঁর পরিবারের সদস্য যোগেন্দ্র শুক্লের সংস্পর্শে এসে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে যোগ দেন। যোগেন্দ্র শুক্ল শহীদ ভগত সিং ও চন্দ্রশেখর আজাদের সাথে সক্রিয় ছিলেন, এবং হাজিপুরের গান্ধী আশ্রম তখন বিপ্লবীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল, যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপ্লবীরা একত্রিত হতেন।

ভগত সিং এবং অন্যান্য বিপ্লবীদের গ্রেফতার

৮ই এপ্রিল ১৯২৯ সালে শহীদ ভগত সিং, রাজগুরু এবং সুখদেব দিল্লী অ্যাসেম্বলিতে বোমা ফেলেছিলেন, যার উদ্দেশ্য ছিল ব্রিটিশ শাসকদের দেশের কণ্ঠস্বর শোনানো। এর পর ব্রিটিশ সরকার কয়েকশ বিপ্লবীকে গ্রেফতার করে তাদের উপর অত্যাচার চালায়। ফণীন্দ্রনাথ ঘোষের মতো কিছু বিপ্লবী ব্রিটিশদের নির্যাতনের কাছে ভেঙে পড়ে সরকারি সাক্ষী হয়ে যান। তাঁদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে শহীদ ভগত সিংসহ আরও অনেক বিপ্লবী গ্রেফতার হন এবং তাদের শাস্তি হয়।

ফণীন্দ্রনাথ ঘোষের হত্যা

ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রাণের বাজি রেখে লড়াই করা বিপ্লবী বৈকুণ্ঠ শুক্ল এবং চন্দ্রমা সিংহ ফণীন্দ্রনাথ ঘোষকে হত্যা করার সাহসী পদক্ষেপ নেন। নিরাপত্তার দিক থেকে ফণীন্দ্রনাথ ঘোষকে বেতীয়া পাঠানো হয়েছিল। বৈকুণ্ঠ শুক্ল এবং চন্দ্রমা সিংহ সাইকেলে বেতীয়ার দিকে যান এবং সেখানে মিনা বাজারে ফণীন্দ্রনাথ ঘোষকে ধরে তাঁর হত্যা করেন। পুলিশ বাজারে রাখা সাইকেল ও ধুতি চিনে তাদের গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়।

বৈকুণ্ঠ শুক্লের শাহাদত

বিচারের সময়, বৈকুণ্ঠ শুক্ল পারিবারিক কারণ দেখিয়ে চন্দ্রমা সিংহকে চুপ করিয়ে ফণীন্দ্রনাথ ঘোষ হত্যার সম্পূর্ণ দোষ নিজের উপর নেন। এরপর বৈকুণ্ঠ শুক্লকে গয়া কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়, যেখানে ১৪ই মে ১৯৩৪ সালে তাঁকে ফাঁসি দেওয়া হয়। তাঁর এই শাহাদত ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের সেই সবল অধ্যায়ের প্রতীক, যখন বিপ্লবীরা প্রাণের বাজি রেখে দেশের স্বাধীনতার জন্য তাদের সংগ্রামকে অমর করেছিলেন। বৈকুণ্ঠ শুক্লের ত্যাগ আজও সেসব সাহসী যোদ্ধাদের উদ্যম ও নিষ্ঠার উদাহরণ হিসেবে বিদ্যমান।

পার্কের কায়াকল্পের দাবি

গয়ায় প্রতি বছর ১৪ই মে বৈকুণ্ঠ শুক্লের শাহাদত দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এই বছরও ১৪ই মে গয়ার এপি কলোনীস্থ চাণক্যপুরীতে শহীদ বৈকুণ্ঠ শুক্লের নামে তৈরি পার্কে তাঁর ৯০তম শাহাদত বার্ষিকী পালিত হয়। এই উপলক্ষে সমাজসেবী ও স্থানীয় নাগরিকরা শহীদকে শ্রদ্ধাঞ্জলি अर्पण করেন।

যদিও, অনুষ্ঠানের সময় দেখা গেছে যে, পার্কে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা ও আলোকসজ্জার অভাব রয়েছে, যার ফলে সেখানে আসা মানুষদের অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। এ ব্যাপারে সমাজসেবী লালজি প্রসাদ, রঞ্জিত সিংহ এবং গজেন্দ্র সিংহ জেলা প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং রাজ্য সরকারের কাছে দাবি করেছেন যে, এই ঐতিহাসিক পার্কের কায়াকল্প করা উচিত। তাদের বক্তব্য, এই পার্ককে শহীদদের স্মৃতি অনুসারে সাজানো উচিত, যাতে বৈকুণ্ঠ শুক্লের মতো মহান স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মৃতি ও সম্মান আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে যায়।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

  • বৈকুণ্ঠ শুক্লকে ১৪ই মে ১৯৩৪ সালে মাত্র ২৭ বছর বয়সে ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয়।
  • এটি গয়া কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রথম ও শেষ ফাঁসির ঘটনা ছিল।
  • বৈকুণ্ঠ শুক্লের ত্যাগ স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে।
  • গয়া কেন্দ্রীয় কারাগারের নাম বৈকুণ্ঠ শুক্লের নামে রাখার জন্য স্থানীয়রা দাবি করেছেন।
  • ৯০তম শাহাদত বার্ষিকীতে পার্কের কায়াকল্পের দাবি উঠেছে, যাতে শহীদ বৈকুণ্ঠ শুক্লের স্মৃতি সম্মানিত হয়।

Leave a comment