সারা দেশের সরকারি ও বেসরকারি স্কুলগুলিতে ‘ভারতীয় ভাষা গ্রীষ্মকালীন শিবির’ আয়োজন করা হবে। এতে শিশুদের মাতৃভাষার সাথে আরও এক বা দুটি ভারতীয় ভাষা আকর্ষণীয় কার্যকলাপের মাধ্যমে শেখানো হবে।
নয়াদিল্লি: ভারতের ভাষাগত বৈচিত্র্যকে উৎসাহিত করার জন্য কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রণালয় একটি অনন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এবার গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে সারা দেশের সকল সরকারি ও বেসরকারি স্কুলগুলিতে ‘ভারতীয় ভাষা গ্রীষ্মকালীন শিবির’ আয়োজন করা হবে। এই গ্রীষ্মকালীন শিবিরে ছাত্রছাত্রীরা কেবলমাত্র তাদের মাতৃভাষাই নয়, এক বা দুটি অন্যান্য ভারতীয় ভাষাও শিখবে।
‘ভারতীয় ভাষা গ্রীষ্মকালীন শিবির’ কি?
‘ভারতীয় ভাষা গ্রীষ্মকালীন শিবির’ হল এক সপ্তাহের বিশেষ কর্মসূচি যেখানে ছাত্রছাত্রীদের ভারতীয় ভাষাগুলির সাথে যুক্ত করা হবে। এই শিবিরে খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কার্যকলাপ এবং কথোপকথনমূলক পদ্ধতির মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের ভাষা শেখানো হবে, যাতে ভাষা শেখা একটি উত্তেজনাপূর্ণ অভিজ্ঞতা হয়ে ওঠে। এই গ্রীষ্মকালীন শিবিরটি জাতীয় শিক্ষানীতি (NEP)-এর অধীনে ত্রিভাষা সূত্রকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে শুরু হয়েছে।
প্রতিদিন ৪ ঘন্টা ক্লাস, শেষ দিনে প্রশংসাপত্র
এই এক সপ্তাহের শিবিরের সময় প্রতিদিন চার ঘন্টা করে কার্যকলাপের আয়োজন করা হবে, যাতে মোট ২৮ ঘন্টা প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। শিবিরের শেষে ছাত্রছাত্রীদের একটি প্রশংসাপত্রও দেওয়া হবে, যা তাদের অংশগ্রহণ এবং ভাষা শেখার সাফল্যকে নির্দেশ করবে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান শুরু করলেন
এই গ্রীষ্মকালীন শিবিরের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। তিনি বলেছেন, ভাষাকে রাজনীতির মাধ্যম নয়, একতার সেতু হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। ধর্মেন্দ্র প্রধান এই উদ্যোগটিকে বিহারের জিয়া কুমারীকে উৎসর্গ করেছেন, যিনি তামিলনাড়ুতে বসবাস করে তামিল ভাষায় দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ১০০-এর মধ্যে ৯৩ নম্বর পেয়েছেন। তিনি বলেছেন, "আমরা চাই দেশের শিশুরা একাধিক ভারতীয় ভাষা শিখুক, যাতে তারা যেখানেই কাজ করুক না কেন এবং প্রতিটি রাজ্যের সাথে যোগাযোগ অনুভব করতে পারে।"
১৪.৫ লক্ষ স্কুলে আয়োজন
এই শিবিরের আয়োজন দেশের ১৪.৫ লক্ষ স্কুলে করা হবে, যার ফলে ২৫ কোটিরও বেশি ছাত্রছাত্রী এবং ৯৮ লক্ষ শিক্ষক উপকৃত হবে। এই প্রচেষ্টার উদ্দেশ্য হল ভাষার মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধি করা।
ধর্মেন্দ্র প্রধান বলেছেন যে ভারতের বৈচিত্র্যই তার শক্তি। তিনি এই উপলক্ষে আরও বলেছেন যে শিক্ষকদেরও বিভিন্ন রাজ্যে যাওয়ার সুযোগ পান, যার ফলে বহুভাষিক হওয়া তাদের জন্য উপকারী হয়।
AI এবং Machine Learning-এর পাঠদান শুরুর নির্দেশ
ভাষার সাথে সাথে শিক্ষামন্ত্রণালয় প্রযুক্তিগত শিক্ষাকেও উৎসাহিত করার দিকে পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রধান কেন্দ্রীয় বিদ্যালয় ও নবোদয় বিদ্যালয় সংগঠনকে নির্দেশ দিয়েছেন যে এই শিক্ষাবর্ষ থেকেই ছাত্রছাত্রীদের AI (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) এবং Machine Learning (ML)-এর পাঠদান শুরু করতে হবে। এর জন্য পাঠ্যক্রম ভারতীয় ভাষায় তৈরি করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ছাত্রছাত্রীদের শেখানো হবে ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের গল্প
এই উদ্যোগের সাথে এখন ছাত্রছাত্রীরা তাদের নিজ নিজ ভাষায় শ্রীরাম মন্দির, কাশী বিশ্বনাথ করিডোর, নতুন সংসদ ভবন, বাবা সাহেব আম্বেডকরের স্মৃতিসৌধ ইত্যাদি ঐতিহাসিক প্রকল্প সম্পর্কে তথ্য পাবে। NCERT কর্তৃক প্রস্তুত ২৬টি ভাষায় ভাষাগত প্রবেশিকা এবং শিক্ষামূলক মডিউল ছাত্রছাত্রীদের ভারতের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের সাথে পরিচিত করবে।
