৭৩ বছরে ২২টি ডিগ্রি ও ১১টি ডিপ্লোমা: ডাঃ মিল্খী রামের অনুপ্রেরণামূলক গল্প

৭৩ বছরে ২২টি ডিগ্রি ও ১১টি ডিপ্লোমা: ডাঃ মিল্খী রামের অনুপ্রেরণামূলক গল্প
সর্বশেষ আপডেট: 12-05-2025

বলা হয়, শেখার কোনো বয়স নেই, আর মনে যদি সच्ছা আগ্রহ থাকে, তাহলে কোনো স্বপ্নই অসম্পূর্ণ থাকে না। এই কথাটি সত্যি করে দেখিয়েছেন হিমাচল প্রদেশের কাঙ্গড়া জেলার গণ্ডড় পঞ্চায়েতের বাসিন্দা ডাঃ মিল্খী রাম। ৭৩ বছর বয়সে যখন অধিকাংশ মানুষ আরামের জীবনযাপন শুরু করেন, তখন ডাঃ মিল্খী রাম নিজের উৎসাহ ও পরিশ্রমের মাধ্যমে ২২ টি ডিগ্রি ও ১১ টি ডিপ্লোমা অর্জন করেছেন।

বয়সকে পরাজিত করে, সাফল্যের উচ্চতায় পৌঁছেছেন

অনেক মানুষ ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সে পড়াশোনা থেকে ক্লান্ত হয়ে যান বা দায়িত্বের কারণে উচ্চশিক্ষা ছেড়ে দেন। কিন্তু ডাঃ মিল্খী রাম প্রমাণ করেছেন যে শেখার কোনো বয়স নেই। ৭০ বছর বয়স পেরিয়েও তিনি পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন এবং এটিকে নিজের জীবনের লক্ষ্য করে তুলেছেন। নিরন্তর পরিশ্রম ও আগ্রহের মাধ্যমে তিনি নিজেকে এতটাই যোগ্য করে তুলেছেন যে আজ তাঁর নাম হিমাচল প্রদেশের সবচেয়ে শিক্ষিত ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখযোগ্য। তাঁর এই অনন্য রেকর্ড 'Lucent General Knowledge Book' (পৃষ্ঠা ৪১৪)-এও উল্লেখ আছে। এটি তাঁর উদ্যম, আত্মবিশ্বাস ও শিক্ষার প্রতি সমর্পণের প্রমাণ। ডাঃ মিল্খী রামের এই গল্প প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য অনুপ্রেরণা যারা বয়সের অজুহাত দেখিয়ে স্বপ্ন অসম্পূর্ণ রেখে দেয়।

কোন হলেন ডাঃ মিল্খী রাম?

ডাঃ মিল্খী রাম হিমাচল প্রদেশের কাঙ্গড়া জেলার গণ্ডড় পঞ্চায়েতের বাসিন্দা। তিনি এমন একজন ব্যক্তি যিনি প্রমাণ করেছেন যে শেখার কোন বয়স নেই। পড়াশোনার প্রতি তাঁর আগ্রহ ছিল শৈশব থেকেই এবং তিনি কখনোই বয়সকে পড়াশোনার পথে বাধা হতে দেননি।

আজ অনেক মানুষ ৪০ বছর বয়সের পর পড়াশোনা ছেড়ে দেন বা নতুন কিছু শেখা বন্ধ করে দেন, কিন্তু ডাঃ মিল্খী রাম ৭৩ বছর বয়সেও পড়াশোনা চালিয়ে এক নজির স্থাপন করেছেন। তিনি এখন পর্যন্ত ২২ টি ডিগ্রি এবং ১১ টি ডিপ্লোমা অর্জন করেছেন।

তাঁর বিশ্বাস, জ্ঞান কেবলমাত্র বইয়েই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি মানুষের চিন্তাভাবনা এবং জীবনকে উন্নত করার মাধ্যম। তিনি কেবল নিজের গ্রামের তরুণদের জন্যই নয়, সমগ্র দেশের জন্য একজন অনুপ্রেরণার উৎস। তাঁর জীবন এই বার্তা দেয় যে, মনে যদি সच्ছা আগ্রহ থাকে তাহলে কোন লক্ষ্যই অসম্ভব নয়।

পড়াশোনায় অর্জন করেছেন ২২ টি ডিগ্রি

শিক্ষার ক্ষেত্রে ডাঃ মিল্খী রাম যে সাফল্য অর্জন করেছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তিনি এখন পর্যন্ত মোট ২২ টি ডিগ্রি অর্জন করেছেন, যা যেকোনো সাধারণ মানুষের কাছে স্বপ্নের মতো মনে হতে পারে। তাঁর অর্জিত ডিগ্রির মধ্যে প্রথমেই আছে LLB অর্থাৎ আইন বিষয়ে ডিগ্রি, তারপর LLM যা আইনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি।

এরপর তিনি B.Ed এবং M.Ed করে শিক্ষাক্ষেত্রেও নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করেছেন। ডাঃ মিল্খী রাম ইংরেজি, রাজনীতি বিজ্ঞান এবং সমাজবিজ্ঞান সহ মোট ১৮ টি বিষয়ে M.A. ডিগ্রি অর্জন করেছেন, যা নিজেই একটি বড় অর্জন। এছাড়াও তিনি হিন্দিতে M.Phil করেছেন, যা গবেষণাভিত্তিক ডিগ্রি।

এইসব ছাড়াও তিনি সাংবাদিকতা এবং গণযোগাযোগ অর্থাৎ Journalism & Mass Communication বিষয়েও পড়াশোনা করেছেন। বর্তমানে তিনি জ্যোতিষশাস্ত্রে M.A. করছেন।

১১ টি ডিপ্লোমাও অর্জন করেছেন

ডাঃ মিল্খী রাম কেবল বড় বড় ডিগ্রিই নেননি, বরং তিনি বিভিন্ন বিশেষ ক্ষেত্রে ডিপ্লোমাও করেছেন। তিনি এখন পর্যন্ত মোট ১১ টি ডিপ্লোমা অর্জন করেছেন, যা তাঁর জ্ঞানের গভীরতা এবং শেখার আগ্রহকে প্রকাশ করে। তাঁর এই ডিপ্লোমার মধ্যে প্রথমেই আছে অনুবাদ ডিপ্লোমা, যার দ্বারা তিনি একটি ভাষা থেকে অন্য ভাষায় সঠিকভাবে অনুবাদ করতে পারেন।

এরপর তিনি মানব সম্পদ উন্নয়ন (HRD) এ ডিপ্লোমা করেছেন, যা কোনও সংস্থার মানব সম্পদের উন্নত ব্যবস্থাপনার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

তিনি শিক্ষাক্ষেত্রেও ডিপ্লোমা করেছেন, যা থেকে বোঝা যায় যে তিনি কেবল পড়তেই পারেন, পড়াতেও পারেন। এছাড়াও তিনি সংস্কৃত ভাষায় ডিপ্লোমা অর্জন করেছেন, যা ভারতের একটি প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ ভাষা।

এইসব ছাড়াও আরও কিছু ব্যবসায়িক ও ভাষাগত ডিপ্লোমা করেছেন, যার ফলে তিনি বহু ক্ষেত্রে দক্ষ হয়ে উঠেছেন। এ সব দেখিয়ে দেয় যে শেখার কোনো বয়স নেই—কেবলমাত্র ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রম প্রয়োজন।

ডিজিটাল যুগেও উদাহরণ স্থাপন

আজকের যুগে যখন সবকিছু প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছে, ডাঃ মিল্খী রাম নিজেকে সম্পূর্ণরূপে ডিজিটাল জগতের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছেন। তিনি পড়াশোনার জন্য ইন্টারনেট, অনলাইন ক্লাস এবং ডিজিটাল লাইব্রেরির মতো আধুনিক সুযোগ-সুবিধার পুরোপুরি ব্যবহার করেছেন। তাঁর এই চিন্তাভাবনা দেখায় যে, বয়স যাই হোক না কেন, মনে যদি শেখার আগ্রহ থাকে তাহলে প্রযুক্তিকেও গ্রহণ করা যায়।

ডাঃ মিল্খী রাম প্রমাণ করেছেন যে শেখার কোনো সীমা নেই। তিনি দেখিয়েছেন যে আপনি যদি শেখা চান তাহলে আজকের ডিজিটাল যুগে আপনার কাছে প্রচুর উপায় আছে, কেবল প্রয়োজন তা সঠিকভাবে ব্যবহার করার। তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গি আজকের যুবসমাজের জন্য অনুপ্রেরণা যে, শুধুমাত্র স্মার্টফোন চালানোই প্রযুক্তি নয়, তার সঠিক ব্যবহার করা হলো সच्ছা বুদ্ধি।

রাজনৈতিক মহল থেকেও প্রশংসা

ডাঃ মিল্খী রামের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ এবং সাফল্যের জন্য কেবল সাধারণ মানুষই নয়, রাজনীতিবিদরাও প্রশংসা করছেন। বিজেপির রাজ্যসভা সদস্য সিকান্দার কুমারও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তাঁর প্রশংসা করেছেন। তিনি ইন্সটাগ্রাম পোস্টে লিখেছেন যে ডাঃ মিল্খী রাম কেবলমাত্র হিমাচল প্রদেশের জন্যই নয়, সমগ্র দেশের জন্য অনুপ্রেরণা। তাঁর নাম ‘লুসেন্ট সাধারণ জ্ঞান’ বইতে (পৃষ্ঠা ৪১৪) হিমাচলের সবচেয়ে শিক্ষিত ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ আছে।

তিনি বলেছেন যে এটি কেবল ডিগ্রির কথা নয়, বরং এটি অবিচল পরিশ্রম, জীবনভর শেখার ইচ্ছা এবং শৃঙ্খলার উত্তম উদাহরণ। তিনি আরও লিখেছেন যে ডাঃ মিল্খী রাম তাদের জন্য শিক্ষা যারা বয়স বা পরিস্থিতির অজুহাত দেখিয়ে নিজের স্বপ্ন অসম্পূর্ণ রেখে দেয়। এই ধরণের ব্যক্তিদের জন্য তাঁর জীবন একটি জীবন্ত উদাহরণ যে ইচ্ছা থাকলে কোন লক্ষ্যই বড় নয়।

সমাজের জন্য অনুপ্রেরণা

ডাঃ মিল্খী রাম শুধু নিজের পড়াশোনায় সীমাবদ্ধ ছিলেন না, বরং তিনি নিজের জীবনের মাধ্যমে সমগ্র সমাজকে একটি নতুন চিন্তাধারা দিয়েছেন। তিনি মনে করেন যে শিক্ষাই হলো প্রকৃত সম্পদ, যা মানুষের চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করতে পারে এবং সমাজকে একটি উন্নত দিকে নিয়ে যেতে পারে। তাঁর মতে, মানুষ যদি সच्ছা আগ্রহ ও পরিশ্রমের সাথে পড়াশোনা করে তাহলে কোন বয়সই তার পথ রুখতে পারে না।

তাঁর জীবন বিশেষ করে তাদের জন্য অনুপ্রেরণা যারা কোনো কারণে পড়াশোনা অসম্পূর্ণ রেখে দিয়েছেন বা বর্তমানে বয়সের অজুহাত দেখিয়ে নতুন কিছু শেখা বন্ধ করে দিয়েছেন। ডাঃ মিল্খী রাম প্রমাণ করেন যে শেখা কখনো বন্ধ হওয়া উচিত নয়। তাঁর এই উদ্যম সকলকে জীবনে এগিয়ে যেতে এবং কখনো হতাশ না হতে শেখায়।

ডাঃ মিল্খী রাম যা করে দেখিয়েছেন তা যেকোনো বয়সের ব্যক্তির জন্য একটি বড় শিক্ষা। ৭৩ বছর বয়সে শিক্ষার প্রতি তাঁর সমর্পণ ও শৃঙ্খলা প্রমাণ করে যে মানুষ যদি মনস্থির করে তাহলে কিছুই অসম্ভব নয়। এটি কেবল একটি সাফল্যের গল্প নয়, বরং লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য আশা ও অনুপ্রেরণার জ্যোতি।

Leave a comment