ট্রাম্পের জি-৭ পরিত্যাগ: ইসরায়েল-ইরান নয়, ‘এর চেয়েও বড়’ ঘটনা!

🎧 Listen in Audio
0:00

জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন ছেড়ে হঠাৎ আমেরিকায় ফিরে ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাঁর ফিরে আসার কারণ ইসরায়েল-ইরান সংঘাত নয়। তিনি ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি ম্যাক্রোঁকে ‘সবসময় ভুল’ বলে অভিহিত করেছেন এবং কোনও বড় ঘটনার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

ট্রাম্প: কানাডায় চলমান জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের হঠাৎ ফিরে যাওয়া সকলের নজর কেড়েছে। সম্মেলনের মাঝপথেই ট্রাম্প আমেরিকা রওনা হয়েছেন, যার ফলে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাত নিয়ে আমেরিকা কিছু বড় উদ্যোগ নেবে বলে অনুমান তীব্র হয়েছে। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প এসব অনুমান সম্পূর্ণরূপে নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, তাঁর ফিরে আসার কারণ অন্য কিছু, যা ‘এর চেয়েও অনেক বড়’।

ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর উপর সরাসরি আক্রমণ

ট্রাম্প তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া সাইট ‘ট্রুথ’এ একটি পোস্ট শেয়ার করে ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর উপরও তীব্র আক্রমণ করেছেন। তিনি লিখেছেন, “প্রচারের ক্ষুধার্ত ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ভুল বলেছেন যে আমি ওয়াশিংটন ডি.সি. ফিরে আসছি ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে কাজ করার জন্য। ভুল! তিনি জানেন না কেন আমি ফিরে আসছি, কিন্তু এর যুদ্ধবিরতির সাথে কোনো সম্পর্ক নেই। এর সম্পর্ক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিছুর সাথে।”

ট্রাম্প আরও বলেছেন, “ইচ্ছাকৃতভাবেই হোক বা অনিচ্ছাকৃতভাবেই হোক, ম্যাক্রোঁ সবসময় ভুল বলে।”

জি-৭-এর গুরুত্ব নিয়েও প্রশ্ন

এতটুকুই নয়, ট্রাম্প জি-৭-এর মতো বিশ্ব মঞ্চের ব্যবহারিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি ২০১৪ সালে রাশিয়াকে জি-৭ থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তকে ভুল বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন, এতে বিশ্ব স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ট্রাম্প এও পরামর্শ দিয়েছেন যে আগামী দিনে চীনকেও জি-৭-এর অংশ করা উচিত।

তিনি বলেছেন, “যতক্ষণ না এই গোষ্ঠী প্রাসঙ্গিক হয় এবং প্রয়োজনীয় দেশগুলিকে একত্রিত করে, ততক্ষণ এর গুরুত্ব সীমাবদ্ধ থাকবে। রাশিয়াকে বাদ দেওয়ার ফলে বিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এই গোষ্ঠী কেবল একটি প্রতীকী প্ল্যাটফর্ম হিসেবেই থেকে গেছে।”

ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ নিয়ে ট্রাম্পের নীরবতা

যদিও ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেছেন যে তাঁর আমেরিকায় ফিরে আসা ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের সাথে যুক্ত নয়, তবে তিনি এই সম্পূর্ণ বিষয় নিয়ে আরও খোলাখুলিভাবে কিছু বলেননি। তিনি কেবল এটুকু বলেছেন যে তিনি যার জন্য ফিরে এসেছেন, তা ‘এর চেয়েও বড়’। এতে বিশ্বজুড়ে আলোচনা শুরু হয়েছে যে আমেরিকা কি কোনও বড় কূটনৈতিক বা সামরিক সিদ্ধান্তের প্রস্তুতি নিচ্ছে কি না।

রিপাবলিকান রাজনীতিতে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা?

ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনীতির প্রেক্ষিতেও দেখা হচ্ছে। আমেরিকায় ২০২৪ সালের নির্বাচনের পর থেকে রিপাবলিকান পার্টির কৌশলে ট্রাম্পের প্রভাব বেড়েছে এবং তিনি ক্রমাগত বিদেশ নীতির বিষয়গুলিতে নিজেকে একজন সিদ্ধান্তগ্রহীতা নেতা হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছেন। এই অবস্থায় জি-৭ শীর্ষ সম্মেলন ছেড়ে ফিরে যাওয়া এবং ফ্রান্সের মতো মিত্র দেশের নেতার উপর আক্রমণ করা তাঁর আক্রমণাত্মক রাজনৈতিক ধরণের অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

রাশিয়া ও চীনকে জি-৭-এ অন্তর্ভুক্ত করার উদ্দেশ্য কী?

ট্রাম্প একাধিকবার বলেছেন যে রাশিয়া ও চীনকে আন্তর্জাতিক মঞ্চ থেকে বিচ্ছিন্ন করার কোনো লাভ নেই। তাঁর মতে, বিশ্ব সমস্যার সমাধান তখনই সম্ভব যখন সকল শক্তিশালী দেশ একত্রে বসবে। এই চিন্তাভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বারবার রাশিয়ার ফিরে আসার কথা বলেছেন এবং এবার চীনকেও অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব তিনি প্রথমবার এভাবে খোলাখুলিভাবে রেখেছেন।

Leave a comment