পাকিস্তানের বহু শহরে আহমদিয়া মুসলিমদের ঈদের নামাজ ও কুরবানি থেকে বিরত রাখা হয়েছে। টিএলপির উসকানিতে পুলিশ ধর্মীয় স্থানগুলি সিল করে দিয়েছে এবং গ্রেফতারি চালিয়েছে।
পাকিস্তান: পাকিস্তানে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে আবারও গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। ঈদুল আযহার দিন আহমদিয়া মুসলিম সম্প্রদায়কে ইসলামী রীতিনীতি পালন থেকে বিরত রাখা হয়েছে। এই সম্প্রদায়কে কেবলমাত্র নামাজ আদায় থেকেই নয়, কুরবানি দেওয়া ইত্যাদি ধর্মীয় কাজকর্ম থেকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
টিএলপির চাপে পুলিশের নির্যাতন
জামাত-এ-আহমদিয়া পাকিস্তান (JAP)-এর মতে, পাকিস্তানের সাতটি শহর—খুশাব, মীরপুর খাস, লোধরান, ভাক্কর, রাজনপুর, উমারকোট, লারকানা এবং করাচিতে—আহমদী সম্প্রদায়কে ঈদের নামাজ আদায় থেকে বিরত রাখা হয়েছে। এই পদক্ষেপের পিছনে কট্টরপন্থী সংগঠন তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তান (টিএলপি)-এর চাপকে দায়ী করা হচ্ছে, যারা স্পষ্টভাবে আহমদী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে পরিবেশ তৈরি করেছে।
পুলিশ স্টেশনে জোরপূর্বক জবানবন্দি
ঈদের আগে আহমদী সম্প্রদায়ের সদস্যদের স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে ডাকা হয়েছিল। সেখানে তাদের জোরপূর্বক লিখিয়ে নেওয়া হয়েছিল যে তারা ঈদের নামাজ পড়বে না এবং কোনও ধরণের কুরবানিও দেবে না। এই ঘটনা ধর্মীয় স্বাধীনতার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের দিকে ইঙ্গিত করে।
আহমদী মসজিদগুলি সিল করা
লাহোরের ঘড়ি শাহী এলাকায় অবস্থিত একটি প্রাচীন আহমদী উপাসনালয় (মসজিদ) টিএলপি কর্মীদের দাবিতে পুলিশ সিল করে দিয়েছে। করাচির নাজিমাবাদ এলাকায় টিএলপি কর্মীরা একজন আহমদী ব্যক্তি এবং তার ছেলেকে কুরবানির পশুর সাথে পুলিশ স্টেশনে নিয়ে গিয়ে তাদের জোরপূর্বক ধর্মান্তরের জন্য বাধ্য করেছে।
গ্রেফতারি ও এফআইআর দায়ের
পাঞ্জাব পুলিশ দুজন আহমদী মুসলমানকে গ্রেফতার করেছে। আরও তিনজনের বিরুদ্ধে পাকিস্তান দণ্ডবিধির ধারা ২৯৮-সি অনুযায়ী এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। এই আইন অনুযায়ী আহমদী সম্প্রদায়কে ইসলামী প্রতীক ও রীতিনীতি ব্যবহারের অনুমতি নেই।
পাকিস্তানের সংবিধান ও মানবাধিকার লঙ্ঘন
JAP-এর দাবি, এই আচরণ কেবলমাত্র বৈষম্যমূলক নয়, পাকিস্তানের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২০-এরও বিরুদ্ধে, যা প্রত্যেক নাগরিককে তার ধর্ম পালনের স্বাধীনতা দেয়। কিন্তু আহমদী সম্প্রদায়কে বারবার এই অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
টিএলপির ঘৃণা ছড়ানোর অভিযান
গত কয়েক মাস ধরে টিএলপি আহমদী সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানোর অভিযান চালাচ্ছে। এই সংগঠন কেবলমাত্র সম্প্রদায়কে তাদের উপাসনালয়ে ইবাদত করতে দেয় না, বরং তাদের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক ঘটনাও ঘটাচ্ছে।
গত মাসে পাঞ্জাব প্রদেশে একজন প্রবীণ আহমদী চিকিৎসককে হত্যা করা হয়েছিল। ১৫ই মে একই প্রদেশে আহমদী সম্প্রদায়ের প্রায় ১০০টি কবর ভেঙে ফেলা হয়। এই ঘটনাগুলি পাকিস্তানে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার বর্ধমান প্রবণতা প্রকাশ করে।
পাকিস্তান প্রশাসনের দ্বিমুখী মনোভাব
পাকিস্তানী প্রশাসনের দাবি, ঈদুল আযহা একটি পবিত্র মুসলিম উৎসব, এবং কেবলমাত্র মুসলিমরা ই এটি পালন করতে পারে। আহমদীদের অ-মুসলিম ঘোষণা করা হয়েছে, তাই তাদের ইসলামী রীতিনীতি গ্রহণ করার অনুমতি দেওয়া যাবে না। যদি তারা তা করে, তাহলে তা ঈশ্নিন্দা হিসেবে বিবেচিত হবে।
আহমদীদের উপর অর্থদণ্ডের আশঙ্কা
২০২৩ সালের একটি অধিসূচনার অনুযায়ী, যদি কোনও আহমদী ব্যক্তি ইসলামী রীতিনীতি পালন করে, তাহলে তার উপর ৫ লক্ষ পাকিস্তানি টাকা জরিমানা করা হতে পারে। এই অধিসূচনা পাকিস্তান দণ্ডবিধির ধারা ২৯৮-বি এবং ২৯৮-সি অনুযায়ী প্রযোজ্য।
১৯৭৪ সাল থেকে অ-মুসলিম ঘোষিত
পাকিস্তানের সংসদ ১৯৭৪ সালে আহমদী সম্প্রদায়কে অ-মুসলিম ঘোষণা করেছিল। ১৯৮৪ সালে একটি আদেশের মাধ্যমে এই সম্প্রদায়কে ইসলামী প্রতীক, রীতিনীতি এবং ধর্মীয় প্রকাশের সকল মাধ্যম থেকে দূরে রাখা হয়েছিল। এমনকি মসজিদে গম্বুজ ও মিনার স্থাপন ও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।