ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মস্কো গিয়ে পুতিনের সাথে সাক্ষাত করবেন। রুশ নেতা মেদভেদেভের দাবি, আমেরিকার আক্রমণের ফলে ইরান আরও শক্তিশালী হয়েছে এবং অনেক দেশ ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র দিতে প্রস্তুত।
Israel Iran War: ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যেই আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ব্যাপক উত্তালতা দেখা যাচ্ছে। আমেরিকার বিমান আক্রমণের জবাবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে দেখা করতে মস্কো যাত্রা করেছেন। এই সফর এমন সময়ে হচ্ছে যখন আমেরিকা ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান আক্রমণ চালিয়েছে। এই ঘটনার পর ইরান আমেরিকার সাথে কোনো কূটনৈতিক আলোচনা পুনরায় শুরু করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
ইরান আমেরিকার উপর অভিযোগ আনয়ন করেছে
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাঘচি আমেরিকার বিমান আক্রমণকে আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনা চলার সময় আমেরিকা এই আক্রমণ চালিয়েছে। আরাঘচি বলেন, ইরান এখন আলোচনার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করবে না কারণ আমেরিকাই প্রথমে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
মস্কো সফরের পিছনে কৌশল
আরাঘচি ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) বৈঠকের সময় জানিয়েছেন যে, তিনি রাশিয়ার রাষ্ট্রপতির সাথে আলোচনা করতে মস্কো যাচ্ছেন। তিনি বলেন, রাশিয়া ও ইরান দীর্ঘদিনের মিত্র এবং এ ধরনের সংকটকালে দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ আদান-প্রদান করা প্রয়োজন। আরাঘচি আরও স্পষ্ট করে বলেছেন যে, ইরান জাতিসংঘ চার্টারের ৫১ অনুচ্ছেদের অধীনে আত্মরক্ষার অধিকার রাখে এবং তারা তা পুরোপুরি ব্যবহার করতে প্রস্তুত।
মেদভেদেভের ট্রাম্পের উপর সরাসরি আক্রমণ
রাশিয়ার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ও বর্তমান নিরাপত্তা পরিষদের উপাধ্যক্ষ দিমিত্রি মেদভেদেভ ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি টেলিগ্রামে লিখেছেন, ট্রাম্প শান্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন, কিন্তু এখন তিনি আমেরিকাকে নতুন যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। মেদভেদেভের মতে, আমেরিকার আক্রমণের কোনো বড় সামরিক প্রভাব পড়েনি এবং ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি আগের মতোই চলবে।
ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র দিতে প্রস্তুত অনেক দেশ
মেদভেদেভ এক চমকপ্রদ দাবি করে বলেছেন যে, এখন অনেক দেশ ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র দিতে প্রস্তুত। যদিও তিনি ওই দেশগুলির নাম উল্লেখ করেননি, তবে তার এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুতর উদ্বেগের কারণ হতে পারে। তিনি আরও বলেছেন যে, এই পরিস্থিতির ফলে ইসরায়েলের জনগণ ভীতিতে দিন কাটাচ্ছে কারণ অনেক এলাকায় ক্রমাগত বিস্ফোরণ ঘটছে।
ইরান ও আমেরিকার মধ্যে কূটনীতি ভেঙে পড়েছে
আরাঘচি আরও জানিয়েছেন যে, আক্রমণের ঠিক দুই দিন আগে তিনি জেনেভায় ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের সাথে আমেরিকার সাথে কূটনৈতিক সমাধানের আশায় আলোচনা করছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে আলোচনার সব সম্ভাবনাই নষ্ট করে দিয়েছে। তিনি বলেছেন, শান্তির পথ ছেড়ে আমেরিকাই শক্তির ভাষা ব্যবহার করেছে।
ইরানের পক্ষে রাশিয়া দাঁড়িয়েছে
মেদভেদেভ স্পষ্ট করে বলেছেন, আমেরিকার সামরিক পদক্ষেপ সত্ত্বেও ইরান সরকার শুধু বেঁচে নেই, বরং আরও শক্তিশালী হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, জনগণ এখন ধর্মীয় নেতৃত্বের সাথে দাঁড়িয়ে আছে, এমনকি যারা আগে সরকারের বিরোধী ছিলেন বা নিষ্ক্রিয় ছিলেন। তাঁর মতে, এই আক্রমণ ইরানের ঐক্যকে আরও বৃদ্ধি করেছে।
নোবেল শান্তি পুরষ্কার নিয়ে কটাক্ষ
মেদভেদেভ ট্রাম্পের উপর কটাক্ষ করে বলেছেন যে, এখন তার নোবেল শান্তি পুরষ্কার পাওয়ার স্বপ্ন অধরা থেকেই যাবে। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, ট্রাম্পের আগ্রাসী নীতি মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে যার প্রভাব পুরো বিশ্বে পড়তে পারে।