UGC NET প্রশ্নপত্র ফাঁস: CBI-এর ক্লোজার রিপোর্টে কোনো প্রমাণ নেই

UGC NET প্রশ্নপত্র ফাঁস: CBI-এর ক্লোজার রিপোর্টে কোনো প্রমাণ নেই
সর্বশেষ আপডেট: 31-01-2025

UGC NET: গত বছর ১৮ জুন ২০২৪-এ অনুষ্ঠিত UGC NET পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই) বৃহস্পতিবার বিশেষ আদালতে তাদের ক্লোজার রিপোর্ট দাখিল করেছে। রিপোর্টে সিবিআই জানিয়েছে, এই ঘটনায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো বাস্তব প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এখন আদালতকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এই মামলাটি বন্ধ করা হবে নাকি এজেন্সিকে আরও তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হবে। এই মামলার রিপোর্ট কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কেও পাঠানো হয়েছে।

সিবিআই-এর রিপোর্টে কী বলা হয়েছে?

সিবিআই-এর পক্ষ থেকে দাখিল করা ক্লোজার রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১৮ জুন ২০২৪-এর UGC NET পরীক্ষার সময় প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো বাস্তব প্রমাণ পাওয়া যায়নি। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, একজন শিক্ষার্থী পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে ছলনা করে স্ক্রিনশট নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া এবং টেলিগ্রামে ছড়িয়ে দিয়েছিল। কর্তৃপক্ষের দাবি, এই স্ক্রিনশটটি কেবলমাত্র এটা দেখানোর জন্য তৈরি করা হয়েছিল যে, শিক্ষার্থী পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই প্রশ্নপত্র পেয়ে গিয়েছিল, যদিও আসলে তা হয়নি।

সিবিআই জানিয়েছে, এই স্ক্রিনশটটি একটি অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছিল, যেখানে প্রশ্নপত্রের ছবির সঙ্গে ছলনা করা হয়েছিল, যাতে মনে হয় এটি আসল প্রশ্নপত্র। এই ঘটনাটি কেবলমাত্র একজন শিক্ষার্থীর কিছু টাকা উপার্জনের উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল।

কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরীক্ষা বাতিল

এই ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন ভারতীয় সাইবার অপরাধ সমন্বয় কেন্দ্র (I4C)-এর জাতীয় সাইবার অপরাধ শাখা কিছু তথ্য পায়, এর পর ১৯ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয় UGC NET পরীক্ষা বাতিল করে দেয়। কর্তৃপক্ষের মতে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর পাওয়ার পরেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। মন্ত্রণালয় ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে তদন্তের জন্য এটিকে সিবিআই-কে হস্তান্তর করে, যাতে তদন্ত করা যায় এবং প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িত দোষীদের শনাক্ত করা যায়।

সিবিআই-এর তদন্ত এবং ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের অবদান

সিবিআই মামলার তদন্তে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নিয়েছিল, যারা নিশ্চিত করেছে যে স্ক্রিনশটের সঙ্গে ছলনা করা হয়েছিল। এরপর এজেন্সি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো বাস্তব ঘটনা নেই এবং এটি কেবলমাত্র একজন শিক্ষার্থীর ছড়ানো মিথ্যা অভিযোগ।

সিবিআই তাদের রিপোর্টে আরও জানিয়েছে, প্রশ্নপত্রের কথিত "ফাঁস" টেলিগ্রাম চ্যানেলে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, যা ভুল ধারণা তৈরি করেছিল যে প্রশ্নপত্রটি পরীক্ষার আগেই ফাঁস হয়ে গিয়েছিল। এই স্ক্রিনশটটি কেবলমাত্র কিছু টাকা উপার্জনের উদ্দেশ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।

১১ লক্ষের বেশি পরীক্ষার্থী পঞ্জীকরণ করেছিলেন

UGC NET পরীক্ষায় ১১ লক্ষের বেশি পরীক্ষার্থী পঞ্জীকরণ করেছিলেন। এই পরীক্ষা জুনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ (JRF), সহকারী অধ্যাপকের নিয়োগ এবং ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলিতে পিএইচডি ভর্তির যোগ্যতা নির্ধারণ করে। তবে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজবের কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরীক্ষা বাতিল করে দিয়েছিল, যার ফলে লক্ষ লক্ষ পরীক্ষার্থীর জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছিল।

আদালতের উপর ছেড়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত

এখন সিবিআই-এর রিপোর্টের পরে এই মামলাটি আদালতের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ আদালতকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, তারা সিবিআই-এর ক্লোজার রিপোর্ট গ্রহণ করবে এবং মামলাটি বন্ধ করে দেবে, নাকি তারা এজেন্সিকে মামলার আরও তদন্ত করার নির্দেশ দেবে। কর্তৃপক্ষের মতে, এই মামলাটি এখন সম্পূর্ণরূপে ন্যায়িক প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করবে, এবং আদালতের নেওয়া সিদ্ধান্তের পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারিত হবে।

সিবিআই কর্তৃক দাখিল করা ক্লোজার রিপোর্ট UGC NET প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনাকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন তুলে ধরেছে। তদন্তে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো বাস্তব প্রমাণ না পাওয়া গেলেও, ঘটনার গভীরতা বুঝতে আদালতের সিদ্ধান্ত এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যেখানে একদিকে লক্ষ লক্ষ পরীক্ষার্থী এই মামলার সমাধানের অপেক্ষায় আছে, অন্যদিকে সিবিআই-এর রিপোর্ট প্রমাণ করেছে যে এই ঘটনায় ছলনার বাইরে আর কিছু ছিল না। আদালতের সিদ্ধান্তের পরেই এই বিতর্কের অবসান হবে।

Leave a comment