ইরান দাবি করেছে যে ইসরায়েলের পারমাণবিক আক্রমণের জবাব পাকিস্তানও দেবে। পাকিস্তান এ দাবি অস্বীকার করে বলেছে তারা যুদ্ধে জড়িত হবে না, যদিও তারা ইরানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।
ইসরায়েল-ইরান: ২০১৫ সালের ১৩ই জুন ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক, সামরিক ও তেল-গ্যাস স্থাপনাগুলিতে ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে একটি ব্যাপক সামরিক অভিযান চালায়। এই আক্রমণে ইরানের অনেক উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা, বিজ্ঞানী ও সাধারণ নাগরিক নিহত হন। এর প্রতিশোধে ইরানও ইসরায়েলের উপর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন আক্রমণ করে। এই সংঘর্ষ ইতোমধ্যেই উত্তেজনাকে ভয়াবহ পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল, কিন্তু ইরানের একটি বিবৃতি এতে পারমাণবিক অস্ত্রের দিক যোগ করে।
ইরানি সামরিক কর্মকর্তার দাবি
১৬ই জুন ইরানের রেভোলিউশনারি গার্ডস (IRGC) এর একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার ও নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য জেনারেল মোহসিন রজাই দাবি করেন যে পাকিস্তান আশ্বাস দিয়েছে, ইসরায়েল যদি ইরানের উপর পারমাণবিক আক্রমণ করে, তাহলে পাকিস্তানও ইসরায়েলের উপর পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করবে। এই বিবৃতি ইরানি সরকারি টেলিভিশনে দেওয়া হয়, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তোলপাড় সৃষ্টি করে।
পাকিস্তানের তাৎক্ষণিক অস্বীকার
ইরানের এই দাবিতে পাকিস্তান দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানায়। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফ বলেন, ইসলামাবাদ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পারমাণবিক আক্রমণের কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, পাকিস্তান ইরানের সাথে ঐক্য প্রকাশ করেছে, কিন্তু পারমাণবিক যুদ্ধে জড়িত হওয়ার কোন কথা বলা হয়নি। এই বিবৃতির মাধ্যমে পাকিস্তান নিজেকে যেকোনো ধরণের যুদ্ধের সম্প্রসারণ থেকে দূরে রাখে।
পাকিস্তানি সংসদে কী বলা হয়েছিল?
১৪ই জুন খোয়াজা আসিফ পাকিস্তানি সংসদে এক বক্তব্যে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করেন। তিনি বলেন, যদি মুসলিম দেশ এখনও একত্রিত না হয়, তাহলে সবারই এমন হবে। তিনি OIC-এর জরুরি বৈঠক ডাকার দাবি জানান এবং মুসলিম দেশগুলিকে ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানান। কিন্তু এই পুরো বক্তব্যে পারমাণবিক আক্রমণের কোনো উল্লেখ করা হয়নি।
ইরানের দাবীর পেছনে উদ্দেশ্য
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরানের এই দাবি একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হতে পারে। ইরান চায় যে, এ অঞ্চলের মুসলিম দেশ, বিশেষ করে পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন পাকিস্তানকে এই সংঘর্ষে নিজের পক্ষে আনা যায়, যাতে ইসরায়েল ও তার সমর্থকদের উপর চাপ সৃষ্টি করা যায়। তবে পাকিস্তান স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, তারা এই সংঘর্ষকে পারমাণবিক পর্যায়ে যেতে দেবে না।
ইসরায়েল ও ইরানের পারমাণবিক নীতি কী বলে?
ইসরায়েলের নীতি সবসময় ‘পারমাণবিক অস্পষ্টতা’ (nuclear ambiguity) ছিল। তারা স্বীকার করে না যে তাদের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র আছে, আবার অস্বীকারও করে না। কিন্তু ধারণা করা হয় যে তাদের কাছে ৮০ থেকে ২০০ পারমাণবিক অস্ত্র থাকতে পারে। অন্যদিকে, ইরান দাবি করে যে তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে, কিন্তু আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের উপর বিশ্বাস করে না। IAEA সম্প্রতি বলেছে যে ইরান বারবার তাদের পারমাণবিক প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে।
পাকিস্তানের পারমাণবিক নীতি ও তার অবস্থান
পাকিস্তান এমন একটি দেশ যার কাছে প্রায় ১৭০ টি পারমাণবিক অস্ত্র আছে। তাদের নীতি ‘প্রথম ব্যবহার’ (first use), যার অর্থ হল, যদি তাদের উপর কোনো আক্রমণের আশঙ্কা হয়, তাহলে তারা প্রথমেই পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। তবে এই নীতি ভারতের বিরুদ্ধে তৈরি করা হয়েছিল, ইসরায়েল বা অন্য কোনো দেশের জন্য নয়। পাকিস্তান কখনো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে পারমাণবিক আক্রমণের কথা বলে নি।