দিল্লির আবহাওয়ায় পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে এবং ঘন মেঘ জমে থাকবে। প্রবল বজ্রপাতের সম্ভাবনা রয়েছে, যার ফলে আবহাওয়া বেশ মনোরম এবং ঠান্ডা হতে পারে, কিন্তু একই সাথে অস্থিরতাও বৃদ্ধি পেতে পারে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস: দেশের অনেক অঞ্চলে আবহাওয়া তার রূপ বদলেছে। দিল্লি সহ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, কেরালা, কর্ণাটক, মণিপুর এবং অসমের মতো রাজ্যগুলিতে বৃষ্টিপাতের ক্রমাগত খবর পাওয়া যাচ্ছে, যা আগামী কয়েক দিন ধরে চলতে পারে। রাজধানী দিল্লিতেও আকাশে কালো মেঘ জমে থাকবে এবং প্রবল বাতাসের সাথে বজ্রপাতের মাঝে বৃষ্টি হতে পারে, যার ফলে তাপমাত্রায় কিছুটা উপশম পাওয়া যাবে কিন্তু আর্দ্র গরম অব্যাহত থাকবে। এছাড়াও অন্যান্য অনেক রাজ্যে প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে পানি জমে যাওয়া এবং ভূমিধ্বসের মতো ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে জনজীবন বিঘ্নিত হচ্ছে।
দিল্লি এবং আশপাশের এলাকায় আবহাওয়ার পরিবর্তন
আবহাওয়া অধিদপ্তর দিল্লি এবং আশপাশের এলাকায় ১ জুন থেকে ৪ জুন পর্যন্ত মেঘের উপস্থিতি এবং বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে ১ জুন আংশিক মেঘলা থাকবে এবং বজ্রপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রির কাছাকাছি থাকবে, এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৮ ডিগ্রি পর্যন্ত থাকবে। পরের দিন, অর্থাৎ ২ জুন, বজ্রপাতের সাথে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ৩ এবং ৪ জুন মাঝারি বৃষ্টিপাত এবং হালকা বৃষ্টির সাথে আকাশ মেঘে ঢাকা থাকবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর মানুষকে পরামর্শ দিয়েছে যে, প্রবল বাতাস এবং বজ্রপাতের সময় অপ্রয়োজনীয়ভাবে বাইরে বের না হওয়া উচিত। এই সময় বিশেষ করে বৃদ্ধ এবং শিশুদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। এর ফলে আর্দ্র গরম থেকে কিছুটা উপশম পাওয়া যাবে, তবে তাপমাত্রায় ব্যাপক হ্রাস এখনও হবে না।
পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশে বৃষ্টিপাত অব্যাহত
রাজধানী দিল্লির সাথে সাথে পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তর প্রদেশেও বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে। রবিবার, ১ জুন, এই রাজ্যগুলির অনেক এলাকায় প্রবল বৃষ্টিপাত এবং বজ্রপাতের সাথে বাতাস বইতে পারে। বৃষ্টিপাতের কারণে এই অঞ্চলগুলিতে তাপমাত্রা কমতে পারে এবং আর্দ্রতা থেকে কিছুটা উপশম পাওয়া যেতে পারে। তবে, প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে পানি জমে যাওয়ার সমস্যাও দেখা দিতে পারে, যার জন্য স্থানীয় প্রশাসন সতর্ক রয়েছে।
মণিপুরে পানি জমে যাওয়া
উত্তর-পূর্বের রাজ্য মণিপুরে গত দুই দিন ধরে হচ্ছে প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে রাজধানী ইম্ফালে পানি জমে যাওয়ার অবস্থা তৈরি হয়েছে। অনেক এলাকায় পানি জমে যাওয়ার ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর (আইএমডি) এর আগেই চন্দেল, চুরাচাঁদপুর, ফেরজাওয়াল, কাকচিং এবং থৌবাল জেলায় প্রবল বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করেছিল।
আইএমডির ইম্ফাল কেন্দ্রের মতে, মোরেহ অঞ্চলে সর্বাধিক ১০২ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যখন কামজংয়ে ৯৬ মিমি এবং চন্দেলে ৭৬ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এই প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে রাস্তাঘাট প্লাবিত হয়েছে এবং যাতায়াত ব্যাহত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন উদ্ধার এবং রক্ষাকার্যে নিয়োজিত রয়েছে।
অসমে ভূমিধ্বসে তিনজনের মৃত্যু
অসমের পশ্চিম এবং দক্ষিণাঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাত বিধ্বংসী কাজ করেছে। গুয়াহাটির বাইরের বোন্ডা অঞ্চলে শুক্রবার সন্ধ্যায় ভূমিধ্বসের ঘটনা ঘটে, যাতে তিনজন মহিলার মৃত্যু হয়। ক্রমাগত বৃষ্টিপাতের কারণে মাটি ধসে পড়ে এবং এই দুর্ঘটনা ঘটে। এই ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ বৃদ্ধি করেছে। রাজ্যের অনেক অঞ্চলে বন্যার অবস্থা বিরাজ করছে, যার ফলে হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রশাসন উদ্ধার কাজ ত্বরান্বিত করেছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে।
রাজস্থানে বৃষ্টিপাতে উপশম
রাজস্থানে গত ২৪ ঘন্টায় অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। বারান জেলার কিষাণগঞ্জে সর্বাধিক ২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আজমের, বিকানের, টোঙ্ক, চুরু ইত্যাদি জেলায়ও বৃষ্টিপাত হয়েছে, যার ফলে সেখানকার প্রচণ্ড গরমে কিছুটা উপশম হয়েছে। বৃষ্টিপাতের ফলে কিছু অঞ্চলে আর্দ্রতা বেড়েছে, যার ফলে কৃষিকাজ এবং পশুপালনে লাভ হতে পারে। তবে, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে পানি জমে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
কেরালা এবং কর্ণাটকে প্রবল বৃষ্টিপাতের ধ্বংসযজ্ঞ
দক্ষিণ ভারতের রাজ্য কেরালা এবং কর্ণাটকে প্রবল বৃষ্টিপাত এবং প্রবল বাতাস জনজীবন ভয়াবহভাবে প্রভাবিত করেছে। কেরালার ত্রিশুর, কান্নুর এবং কাসারগোড জেলায় বৃষ্টিপাতের ফলে অনেক এলাকায় বাড়িতে পানি ঢুকে গেছে। গাছ উপড়ে যাওয়া এবং বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতার ফলে রাজ্যে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে উঠেছে। আইএমডি কেরালার আটটি জেলায় রেড অ্যালার্ট জারি করেছে। প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে অনেক রাস্তা প্লাবিত হয়েছে এবং মানুষ রিলিফ ক্যাম্পে থাকতে বাধ্য হচ্ছে।
কর্ণাটকের দক্ষিণ কান্নড় জেলায়ও প্রবল বৃষ্টিপাত এবং ভূমিধ্বসের ঘটনা ঘটেছে। মন্টেপাদাভু কোডি-তে ভূমিধ্বসের ফলে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে এবং একজন মহিলা এবং এক শিশু ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়েছে, যাদের হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। প্রবল বৃষ্টিপাতের ফলে উদ্ধার কাজে বাধা পড়ছে।