চীনের রহস্যময় কার্গো বিমান: ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার মধ্যে নতুন আশঙ্কা

🎧 Listen in Audio
0:00

ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার মধ্যে চীনের ৩টি রহস্যময় কার্গো প্লেন ট্র্যাকিং ছাড়াই ইরানে পৌঁছেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে চীন অস্ত্র বা প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি পাঠিয়েছে। আমেরিকা ও ইসরায়েলের উদ্বেগ বেড়েছে।

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে বাড়তে থাকা উত্তেজনার মধ্যে চীনের কর্মকাণ্ড বিশ্ব রণনৈতিক মহলে নতুন আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। গত কয়েক দিনে চীনের তিনটি কার্গো বিমান হঠাৎ মিড-এয়ার ট্রান্সপন্ডার বন্ধ করে ইরানে পৌঁছেছে। এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এমন এক সময়ে যখন ইরানের আকাশসীমা যুদ্ধের কারণে সাধারণ বিমানের জন্য বন্ধ ছিল। এখন এই সন্দেহ দিন দিন গভীর হচ্ছে যে চীন কি চুপিসারে এই যুদ্ধে কোনোভাবে অংশগ্রহণ করেছে কিনা।

ফ্লাইট ডেটা থেকে উঠে আসা প্রশ্ন

FlightRadar24-এর মতো ওয়েবসাইটগুলির ডেটার মতে, ২০২৫ সালের ১৪ জুন থেকে চীনের উত্তরাঞ্চল থেকে উড়ানরত কমপক্ষে পাঁচটি বোয়িং 747 বিমান ইরানের দিকে অগ্রসর হয়েছিল। এই বিমানগুলির উড়ানপথ লক্সেমবার্গের উদ্দেশ্যে ছিল, কিন্তু তারা কখনোই ইউরোপীয় আকাশসীমায় প্রবেশ করেনি। মধ্য এশিয়ার দেশ যেমন কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান অতিক্রম করার পর এই বিমানগুলি ইরানের সীমান্তে হঠাৎ করে রাডার থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। এই বিমানগুলির ট্রান্সপন্ডার মিড-এয়ারে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, যা সাধারণত সামরিক বা গোপনীয় অভিযানের ইঙ্গিত দেয়।

চীন কি ইরানকে অস্ত্র পাঠিয়েছে?

চীনের এই কর্মকাণ্ডকে কেন্দ্র করে অনুমান করা হচ্ছে যে এই বিমানগুলির মাধ্যমে ইরানকে অস্ত্র, এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম বা কোনও কৌশলগত সরঞ্জাম পাঠানো হতে পারে। চীন ও ইরানের মধ্যে ইতিমধ্যেই কৌশলগত সহযোগিতা বিদ্যমান এবং এই ঘটনাগুলি থেকে মনে হচ্ছে যে চীন এই সংঘাতে পরোক্ষভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে।

রাশিয়া ও চীনের সমর্থন

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্ভাব্য যুদ্ধকে কেন্দ্র করে আমেরিকা ও তার মিত্রদের উদ্বেগ বাড়ছে। অন্যদিকে, রাশিয়া ও চীন ইরানের পক্ষে স্পষ্টভাবে দাঁড়িয়ে আছে। সম্প্রতি রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন আমেরিকাকে সতর্ক করে বলেছেন যে যদি আমেরিকা এই সংঘাতে সরাসরি জড়িত হয় তবে রাশিয়া ও চীন ইরানকে সমর্থন করবে।

চীন-ইরানের মধ্যে ২৫ বছরের অংশীদারিত্ব

২০২১ সালে চীন ও ইরানের মধ্যে ২৫ বছরের একটি ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তির অধীনে চীন ইরানে ৪০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। বিনিময়ে চীন ইরান থেকে ছাড়ে তেল ও গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করেছে। এই অংশীদারিত্বে সাইবার সুরক্ষা, গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান, সামরিক প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের অধীনে অবকাঠামো নির্মাণের মতো বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

যুদ্ধের আভাস ও বিশ্বব্যাপী সংঘাতের আশঙ্কা

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনা ইতিমধ্যেই বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত কয়েক দিনে হওয়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও ড্রোন হামলার পর দুই দেশের সেনাবাহিনী পুরোপুরি সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। আমেরিকা ইতিমধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যে তার সামরিক ঘাঁটিগুলিকে উচ্চ সতর্কতায় রেখেছে। অন্যদিকে চীন ও রাশিয়ার ভূমিকা এই সংঘাতকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। যদি চীন সত্যিই ইরানকে অস্ত্র বা সামরিক সহায়তা পাঠাচ্ছে তবে এটি বিশ্ব রাজনীতিতে একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত হতে পারে।

হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন কী বলে?

হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের ন্যাশনাল ডিফেন্স সেন্টারের পরিচালক রবার্ট গ্রিনওয়ে-এর মতে চীন দীর্ঘদিন ধরে ইরান থেকে সস্তা দামে নিষিদ্ধ তেল কিনছে। বিনিময়ে তিনি ইরানকে কৌশলগত, প্রযুক্তিগত ও সামরিক সহায়তা দিচ্ছেন। রবার্ট আরও বলেন যে চীন তার শক্তি নিরাপত্তা নিয়ে অত্যন্ত সতর্ক এবং ইরান তার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার হয়ে উঠেছে।

Leave a comment