যমুনা নদী দূষণ: হাজার হাজার মৃত মাছের ভয়াবহ দৃশ্য

🎧 Listen in Audio
0:00

দিল্লির রাজধানীতে যমুনা নদীর দূষণ আবারও গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছেছে। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ সম্প্রতি বুরারি অঞ্চলে দেখা গেছে, যেখানে হাজার হাজার মৃত মাছ নদীর তীরে ভেসে ও পচে থাকতে দেখা গেছে।

নয়া দিল্লি: রাজধানী দিল্লিতে যমুনা নদীর অবস্থা ক্রমশই খারাপ হচ্ছে। সাম্প্রতিক ঘটনা বুরারি এলাকা থেকে সামনে এসেছে, যেখানে হাজার হাজার মাছ মৃত অবস্থায় ভাসতে দেখা গেছে। এই দৃশ্য কেবল স্থানীয় নাগরিকদেরই নয়, পরিবেশ প্রেমী ও বিশেষজ্ঞদের মধ্যেও উদ্বেগ বাড়িয়েছে। যমুনার তীরে ছড়িয়ে থাকা মাছের লাশ থেকে উঠে আসা দুর্গন্ধ আশপাশের এলাকায় বসবাসকে দুষ্কর করে তুলেছে।

মাছের মৃত্যুর কারণ কী?

স্থানীয় কৃষক ও বাসিন্দাদের দাবি, হরিয়ানা থেকে ছাড়া রাসায়নিক মিশ্রিত পানির কারণে এই গণমৃত্যু হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, যখনই হরিয়ানার সোনিপত জেলা থেকে ৮ নম্বর খালের মাধ্যমে যমুনায় পানি ছাড়া হয়, তখনই এই ধরনের ঘটনা ঘটে। একজন স্থানীয় কৃষক জানিয়েছেন, এই দূষিত রাসায়নিক মিশ্রিত পানি আসার সাথে সাথেই কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মাছ উল্টো হয়ে পানির উপর ভেসে ওঠে। প্রথমে পানির রং বদলে যায় এবং পরে পুরো নদীতে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।

পানির মান অত্যন্ত খারাপ

দিল্লি দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (DPCC)-এর প্রতিবেদনও এই গুরুতর অবস্থার সত্যতা নিশ্চিত করে। প্রতিবেদনের মতে, যমুনায় জৈব অক্সিজেন চাহিদা (BOD) এবং মলজল কোলিফর্মের মতো উপাদান নির্ধারিত মানের চেয়ে অনেক বেশি। এগুলি ইঙ্গিত করে যে নদীর পানি কেবল জীবন্ত প্রাণীর জন্যই নয়, মানুষের সংস্পর্শে আসলেও স্বাস্থ্যের উপর প্রতিকূল প্রভাব ফেলতে পারে।

DPCC-এর একজন কর্মকর্তার মতে, মলজল, গৃহস্থালীর আবর্জনা এবং শিল্প কারখানা থেকে বেরিয়ে আসা রাসায়নিক পদার্থ যমুনায় ক্রমাগত ছাড়া হচ্ছে। এর ফলে অক্সিজেনের অভাব হয়, যার ফলে জলজ প্রাণীরা বেঁচে থাকতে পারে না।

স্থানীয়দের কষ্ট ও ক্ষোভ

বুরারি ও আশপাশের এলাকায় বসবাসকারীরা রেগে আছেন। তাঁরা বলেন, এটি কেবল একটি পরিবেশগত সমস্যা নয়, বরং স্বাস্থ্য সংকটে পরিণত হচ্ছে। মানুষ জানিয়েছে, এই পানি স্পর্শ করলে চুলকানি এবং ত্বকের অ্যালার্জির মতো সমস্যা হচ্ছে। ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধ রামলাল যাদব স্মরণ করেন, ১৯৭৮ সালের আগে যমুনার পানি পানযোগ্য ছিল। আমরা সবাই এখান থেকেই পানি আনতাম। এখন অবস্থা এমন যে মাছও এতে বেঁচে থাকতে পারছে না, মানুষ কী করবে?

৮ নম্বর খাল কি সমস্যার মূল?

স্থানীয়দের দাবি, হরিয়ানা থেকে আসা পানিই এই দুর্ঘটনার সবচেয়ে বড় কারণ। ৮ নম্বর খালের মাধ্যমে যখনই পানি যমুনায় পৌঁছায়, কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তার প্রভাব দেখা যায়। এতে থাকা রাসায়নিক মাছের জন্য বিষাক্ত হয়ে উঠছে। অন্যদিকে, পরিবেশবিদদের মনে হয়, এটি কেবলমাত্র হরিয়ানার ভুল নয়।

দিল্লির সীমানার মধ্যেও অনেক নর্দমা, ময়লা ও কারখানার নোংরা পানি সরাসরি যমুনায় মিশে যাচ্ছে। তাই একমাত্র কোন রাজ্য দোষী তা বলা কঠিন। ঘটনার পর পরিবেশ মন্ত্রণালয়, দিল্লি সরকার এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের কাছে তাৎক্ষণিক তদন্তের দাবি উঠেছে। অনেক সামাজিক সংগঠন দাবি করেছে যে হরিয়ানা ও দিল্লির যৌথ দায়িত্ব নির্ধারণ করা উচিত এবং একটি স্থায়ী সমাধান বের করা উচিত।

Leave a comment